চুঁচুড়া, 7 ডিসেম্বর: অন্ধকারও হয়ে উঠবে আলো, যদি তুমি শিক্ষার প্রদীপ জ্বালো ৷ এই মন্ত্রকেই জীবনের পাথেয় করে দৃষ্টিহীন শিশুদের জীবনে শিক্ষার আলো জ্বেলে চলেছেন বাঁকুড়ার পবিত্র মণ্ডল ৷ তিনি নিজে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন ছোট বেলায় । মাত্র আড়াই বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যায় পবিত্রর । কিন্ত অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে ভর করে চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা ৷ ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে বর্তমানে তিনি একজন সরকারি কর্মচারী । হুগলি জেলাশাসক অফিসে সমাজ কল্যাণ দফতরে কর্মরত 32 বছরের যুবক ৷ তবে এখানেই থেমে থাকেননি পবিত্র । বিকেলে অফিসের কাজ শেষ করেই তিনি বেরিয়ে পড়েন দৃষ্টি জয়ী শিশুদের পড়াশোনার পাঠ দিতে । প্রতিদিন শিশুদের পড়ানোর জন্য পাড়ি দেন দূরদূরান্তের বিভিন্ন জায়গায় ।
পরিবারে আর্থিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না । বাবা চাষবাস করতেন । দুই ভাইবোন পবিত্ররা । ছোট থেকে ছেলের কর্নিয়ার সমস্যার জন্য চিকিৎসা করিয়ে কিছু করতে পারেননি বাবা । তাই ছোটবেলা থেকেই দীর্ঘ লড়াই করছেন পবিত্র । তিনি বলেন, "ছোটবেলায় দৃষ্টি হারানোর পর থেকেই কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম । উত্তরপাড়া লুই ব্রেল স্কুলে পড়ে বড় হওয়া । অন্যরা যাতে এই সমস্যার সম্মুখীণ না হয় তাই আমি চাকরি করার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন শিশুকে বাড়িতে গিয়ে পড়াই । রিষড়া, ভদ্রেশ্বর ও বাঁশবেরিয়ায় বেশ কয়েকজন শিশুকে পড়াতে যাই । চোখের অন্ধকার আমার কোনও বাধা হয়নি । পাঁচ বছরের নীচে দৃষ্টিহীন শিশুদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য পড়াশোনা করাই । স্কুলের গণ্ডিতে প্রবেশ করার আগেই ব্রেলের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে থাকি আমি তাদের ।" এই কাজে খুশি শিশুদের অভিভাবকরাও ।
তবে শুধু সরকারি চাকরি বা পড়ানো নয়, তার মাঝেও সময় বের করে সংগীত চর্চা করেন পবিত্র মণ্ডল ৷ ভালো তবলা বাজান এই শিক্ষক ৷ সঙ্গে কানে শুনেই করে ফেলেন কীবোর্ডে টাইপও ৷ চালাতে পারেন কম্পিউটারও ৷ আগামিদিনে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া দৃষ্টিহীন শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে পবিত্রর ৷ তিনি বলেন, "আগামিদিনে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছোট শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে । এছাড়াও চাকরির ক্ষেত্রে সেভাবে এই ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য কোচিং নেই । সেটা নিয়েও চিন্তা ভাবনা করছি ৷"
পবিত্রের এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রীও । 2019 সালে শম্পার সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন পবিত্র । শম্পা মণ্ডলও কর্নিয়ার সমস্যার কারণে জন্ম থেকেই একটি চোখে দেখতে পান না। তবে জীবন সংগ্রামে হার মানেনি তাঁরা দু'জনেই । একসঙ্গে বাঁচার পাশাপাশি অন্যদের জীবনে আলো জ্বালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন ৷ 7 ডিসেম্বর কর্নিয়া দিবসে তাঁদের অঙ্গীকার, দৃষ্টিজয়ী শিশুদের ব্রেলের মাধ্যমে পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করা । যাতে ওইসব শিশুরা মনের সমস্ত অন্ধকার কাটিয়ে জীবনে জয়ী হতে পারে ।
আরও পড়ুন: