ভদ্রেশ্বর, 25 মে : সম্প্রতি ভদ্রেশ্বর ও চন্দননগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই এলাকার বহু বাড়ি । তার রেশ কাটতে না কাটতেই আমফানের প্রভাব । যার জেরে বিধ্বস্ত তেলিনিপাড়ার একাংশ । গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে এখনও রয়েছে পুলিশ পিকেটিং । এদিকে, খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে প্রায় 30 টি পরিবারের । জুটছে না পানীয় জল বা খাবার । আমফানের পর পাঁচদিন কেটে গেলেও গাছ কেটে পরিষ্কার করা হয়নি । আসেনি বিদ্যুৎ । এখন সরকারের কাছে দিনমজুর পরিবারগুলির আর্তি, যদি কিছু সাহায্য় পাওয়া যায় ।
ভদ্রেশ্বর পৌরসভা এলাকায় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় 300 টি বাড়ি । তার মধ্যে পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের তেলিনিপাড়া রেলওয়ে লাইনের পাশের এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ । গাছ পড়ে গিয়ে ভেঙে গেছে প্রায় 40 টি ঘর । ভেঙে গেছে শৌচাগারও । ফলে, বাসন থেকে আসবারপত্র কিছু নেই বললেই চলে । আশপাশের বাড়িতে অথবা ক্যাম্পে দিন কাটছে মানুষজনের । কেউ আবার পরিবার নিয়ে রাস্তাতেই থাকছেন । কোরোনায় যেখানে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে সকলকে, সেখানে ঘরই নেই প্রায় 30 টি পরিবারের ।
চলতি মাসের মাঝামাঝিতে তেলিনিপাড়ায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়। পুড়ে ছাই হয় বহু বাড়ি । চার-পাঁচদিন ধরে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ ও ব়্যাফ নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় । বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট । পুলিশ ব্যারিকেড করে গোটা তেলিনিপাড়াকে এখনও ঘিরে রাখা হয়েছে । মানুষের মধ্যে সেই আতঙ্ক এখনও কাটেনি । যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সংঘর্ষে, তাঁদের বাড়ি মেরামতের আগেই ফের আমফানে গুঁড়িয়ে গেছে । ভেসে গেছে আসবাবপত্র বা বই-খাতা । এইসবের উপর লকডাউনে এই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলোর কাজ নেই । সব মিলিয়ে খাবার জোগাড় করা মুশকিল হয়ে গেছে তাঁদের কাছে । এবিষয়ে সুমন রাউত নামে একজন জানান, আমফানের সময় আমরা বাড়িতেই ছিলাম । একে তো বাড়িতে ক্ষতি হয়েছিলই, তার উপর ঝড়ের জন্য গাছ পড়ে বাড়ি পুরো ভেঙে পড়েছে । এখন একজনের বাড়িতে আছি । কিন্তু লোকের বাড়িতে কতদিন থাকব? চাই, সরকার আমাদের সাহায্য করুক ।
এই অঞ্চলের মানুষজন কেউ জুটমিলে কাজ করেন বা কেউ টোটো চালান । সকলেই দিনমজুর । লকডাউনে বন্ধ জুটমিল বা অন্যান্য কাজ । এই অবস্থায় এত ক্ষতি সামাল দেবেন কীভাবে, এই ভেবেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা । এবিষয়ে গৌতম রাউত নামে এক বাসিন্দা জানান, ঝামেলা হয়েছে ক'দিন আগে । বাড়ি-ঘর এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত । কোরোনার জেরে আবার কাজ নেই । খাওয়াও তো বন্ধ । কী হবে, কীভাবে বাড়ি হবে জানি না । শৌচাগারও ভেঙে গেছে এলাকার । সরকার না সাহায্য় করলে আমরা কী করব ?
এবিষয়ে এলাকার মনা পাসওয়ান বলেন, "কোমর পর্যন্ত জল । গাছ পড়ে সব বাড়ি শেষ । এতে ক্ষতি হয়েছে কিছু। বুঝতে পারছিলাম না কী করব । 15-20 টা বাড়ি ভেঙে গেছে । বিদ্যুৎ নেই সেই থেকে । এখনও গাছ পরিষ্কার হয়নি । এর উপরই সবাই রয়েছে । আমরা চাই, এগুলি পরিষ্কার করে আপাতত লোকজনের থাকার ব্যবস্থা সরকার করে দিক । পানীয় জলও তো পাচ্ছি না ঠিকমতো ।"
ঝড়ে চলে গেছিলেন নিরাপদ স্থানে। এসে দেখছেন, কয়েকটা আসবাবপত্র আর ভাঙাচোরা দেওয়াল পড়ে আছে । সেগুলো আঁকড়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন এক বৃদ্ধা । তিনি বলেন, "ঝড়ে তো ঘর সব পড়ে গেছে । সবাইকে বাইরে নিয়ে গেল । এখন তো আর বাড়িই নেই । শুধু ফাঁকা মাঠ । বাধ্য হয়ে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছি । এখন সরকার সাহায্য় না করলে কোথায় থাকব ?"
জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গেছে, সুপার সাইক্লোনে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে হুগলি জেলা । পাঁচ হাজারের বেশি গাছ ভেঙে পড়েছে । 20 হাজার বাড়ি ভেঙে গেছে । 77 হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত । বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই । যার জেরে বিভিন্ন এলাকায় জলের সংকট দেখা দিয়েছে । বিক্ষোভ অবরোধ চলছে । 5500 টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে । ইতিমধ্যেই 2500 টি নতুন খুঁটি বসানো হয়েছে । 151 কিমি হাইটেনশান লাইনের তার ছিঁড়ে গেছিল । 120 কিমি তার জোড়া হয়েছে । বাকি কর্মীরা কাজ করছেন । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে ।
এবিষয়ে ভদ্রেশ্বর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান প্রকাশ গোস্বামী বলেন, " ভগবানের দয়ায় কেউ মারা যায়নি । যেভাবে ঝড়ের তাণ্ডব হয়েছে তাতে গুরুতর আহত কেউ হননি । মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ দেওয়ায় ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন । চন্দননগরের মহকুমা শাসক আমাদের একটি লিস্ট করতে বলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের । 10 নম্বর ওয়ার্ডে ন'টি গাছ ও 40 টি বাড়ি ভেঙেছে । সমস্ত জায়গার তুলনায় তেলিনিপাড়ার মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ । যেভাবে একের পর এক ঘটনা শুরু হয়েছে । আমরা চেষ্টা করছি, যাতে ওদের জন্য কিছু করা যায় । ক্যাম্পে ও ওয়ার্ড কমিউনিটি হলেও রাখা হয়েছে । খাবার ও জামা কাপড়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে সকলের ।