ETV Bharat / state

সংঘর্ষ ও সাইক্লোনে বিপর্যস্ত জনজীবন, সরকারের কাছে সাহায্যের আর্তি তেলিনিপাড়ার বাসিন্দাদের - bhadreshwar

দিনকয়েক আগে সংঘর্ষ হয় । তার রেশ কাটতে না কাটতেই আমফান । তছনছ ভদ্রেশ্বর পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের তেলিনিপাড়া । ভেঙে গেছে প্রায় 40টি ঘর । নেই বিদ্যুৎ, পানীয় জল । সমস্যায় বাসিন্দারা ।

ছবি
ছবি
author img

By

Published : May 25, 2020, 2:28 PM IST

Updated : May 25, 2020, 4:29 PM IST

ভদ্রেশ্বর, 25 মে : সম্প্রতি ভদ্রেশ্বর ও চন্দননগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই এলাকার বহু বাড়ি । তার রেশ কাটতে না কাটতেই আমফানের প্রভাব । যার জেরে বিধ্বস্ত তেলিনিপাড়ার একাংশ । গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে এখনও রয়েছে পুলিশ পিকেটিং । এদিকে, খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে প্রায় 30 টি পরিবারের । জুটছে না পানীয় জল বা খাবার । আমফানের পর পাঁচদিন কেটে গেলেও গাছ কেটে পরিষ্কার করা হয়নি । আসেনি বিদ্যুৎ । এখন সরকারের কাছে দিনমজুর পরিবারগুলির আর্তি, যদি কিছু সাহায্য় পাওয়া যায় ।

ভদ্রেশ্বর পৌরসভা এলাকায় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় 300 টি বাড়ি । তার মধ্যে পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের তেলিনিপাড়া রেলওয়ে লাইনের পাশের এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ । গাছ পড়ে গিয়ে ভেঙে গেছে প্রায় 40 টি ঘর । ভেঙে গেছে শৌচাগারও । ফলে, বাসন থেকে আসবারপত্র কিছু নেই বললেই চলে । আশপাশের বাড়িতে অথবা ক্যাম্পে দিন কাটছে মানুষজনের । কেউ আবার পরিবার নিয়ে রাস্তাতেই থাকছেন । কোরোনায় যেখানে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে সকলকে, সেখানে ঘরই নেই প্রায় 30 টি পরিবারের ।

image
এভাবেই গাছ পড়ে বাড়ি ভেঙেছে তেলিনিপাড়ায়

চলতি মাসের মাঝামাঝিতে তেলিনিপাড়ায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়। পুড়ে ছাই হয় বহু বাড়ি । চার-পাঁচদিন ধরে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ ও ব়্যাফ নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় । বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট । পুলিশ ব্যারিকেড করে গোটা তেলিনিপাড়াকে এখনও ঘিরে রাখা হয়েছে । মানুষের মধ্যে সেই আতঙ্ক এখনও কাটেনি । যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সংঘর্ষে, তাঁদের বাড়ি মেরামতের আগেই ফের আমফানে গুঁড়িয়ে গেছে । ভেসে গেছে আসবাবপত্র বা বই-খাতা । এইসবের উপর লকডাউনে এই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলোর কাজ নেই । সব মিলিয়ে খাবার জোগাড় করা মুশকিল হয়ে গেছে তাঁদের কাছে । এবিষয়ে সুমন রাউত নামে একজন জানান, আমফানের সময় আমরা বাড়িতেই ছিলাম । একে তো বাড়িতে ক্ষতি হয়েছিলই, তার উপর ঝড়ের জন্য গাছ পড়ে বাড়ি পুরো ভেঙে পড়েছে । এখন একজনের বাড়িতে আছি । কিন্তু লোকের বাড়িতে কতদিন থাকব? চাই, সরকার আমাদের সাহায্য করুক ।

এই অঞ্চলের মানুষজন কেউ জুটমিলে কাজ করেন বা কেউ টোটো চালান । সকলেই দিনমজুর । লকডাউনে বন্ধ জুটমিল বা অন্যান্য কাজ । এই অবস্থায় এত ক্ষতি সামাল দেবেন কীভাবে, এই ভেবেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা । এবিষয়ে গৌতম রাউত নামে এক বাসিন্দা জানান, ঝামেলা হয়েছে ক'দিন আগে । বাড়ি-ঘর এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত । কোরোনার জেরে আবার কাজ নেই । খাওয়াও তো বন্ধ । কী হবে, কীভাবে বাড়ি হবে জানি না । শৌচাগারও ভেঙে গেছে এলাকার । সরকার না সাহায্য় করলে আমরা কী করব ?

এবিষয়ে এলাকার মনা পাসওয়ান বলেন, "কোমর পর্যন্ত জল । গাছ পড়ে সব বাড়ি শেষ । এতে ক্ষতি হয়েছে কিছু। বুঝতে পারছিলাম না কী করব । 15-20 টা বাড়ি ভেঙে গেছে । বিদ্যুৎ নেই সেই থেকে । এখনও গাছ পরিষ্কার হয়নি । এর উপরই সবাই রয়েছে । আমরা চাই, এগুলি পরিষ্কার করে আপাতত লোকজনের থাকার ব্যবস্থা সরকার করে দিক । পানীয় জলও তো পাচ্ছি না ঠিকমতো ।"

Image
গাছ কেটে পরিষ্কারের কাজ এখনও শুরু হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর

ঝড়ে চলে গেছিলেন নিরাপদ স্থানে। এসে দেখছেন, কয়েকটা আসবাবপত্র আর ভাঙাচোরা দেওয়াল পড়ে আছে । সেগুলো আঁকড়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন এক বৃদ্ধা । তিনি বলেন, "ঝড়ে তো ঘর সব পড়ে গেছে । সবাইকে বাইরে নিয়ে গেল । এখন তো আর বাড়িই নেই । শুধু ফাঁকা মাঠ । বাধ্য হয়ে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছি । এখন সরকার সাহায্য় না করলে কোথায় থাকব ?"

জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গেছে, সুপার সাইক্লোনে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে হুগলি জেলা । পাঁচ হাজারের বেশি গাছ ভেঙে পড়েছে । 20 হাজার বাড়ি ভেঙে গেছে । 77 হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত । বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই । যার জেরে বিভিন্ন এলাকায় জলের সংকট দেখা দিয়েছে । বিক্ষোভ অবরোধ চলছে । 5500 টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে । ইতিমধ্যেই 2500 টি নতুন খুঁটি বসানো হয়েছে । 151 কিমি হাইটেনশান লাইনের তার ছিঁড়ে গেছিল । 120 কিমি তার জোড়া হয়েছে । বাকি কর্মীরা কাজ করছেন । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে ।

সংঘর্ষ ও সাইক্লোনে চরম বিপাকে তেলিনিপাড়া...

এবিষয়ে ভদ্রেশ্বর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান প্রকাশ গোস্বামী বলেন, " ভগবানের দয়ায় কেউ মারা যায়নি । যেভাবে ঝড়ের তাণ্ডব হয়েছে তাতে গুরুতর আহত কেউ হননি । মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ দেওয়ায় ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন । চন্দননগরের মহকুমা শাসক আমাদের একটি লিস্ট করতে বলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের । 10 নম্বর ওয়ার্ডে ন'টি গাছ ও 40 টি বাড়ি ভেঙেছে । সমস্ত জায়গার তুলনায় তেলিনিপাড়ার মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ । যেভাবে একের পর এক ঘটনা শুরু হয়েছে । আমরা চেষ্টা করছি, যাতে ওদের জন্য কিছু করা যায় । ক্যাম্পে ও ওয়ার্ড কমিউনিটি হলেও রাখা হয়েছে । খাবার ও জামা কাপড়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে সকলের ।

ভদ্রেশ্বর, 25 মে : সম্প্রতি ভদ্রেশ্বর ও চন্দননগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই এলাকার বহু বাড়ি । তার রেশ কাটতে না কাটতেই আমফানের প্রভাব । যার জেরে বিধ্বস্ত তেলিনিপাড়ার একাংশ । গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে এখনও রয়েছে পুলিশ পিকেটিং । এদিকে, খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে প্রায় 30 টি পরিবারের । জুটছে না পানীয় জল বা খাবার । আমফানের পর পাঁচদিন কেটে গেলেও গাছ কেটে পরিষ্কার করা হয়নি । আসেনি বিদ্যুৎ । এখন সরকারের কাছে দিনমজুর পরিবারগুলির আর্তি, যদি কিছু সাহায্য় পাওয়া যায় ।

ভদ্রেশ্বর পৌরসভা এলাকায় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় 300 টি বাড়ি । তার মধ্যে পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের তেলিনিপাড়া রেলওয়ে লাইনের পাশের এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ । গাছ পড়ে গিয়ে ভেঙে গেছে প্রায় 40 টি ঘর । ভেঙে গেছে শৌচাগারও । ফলে, বাসন থেকে আসবারপত্র কিছু নেই বললেই চলে । আশপাশের বাড়িতে অথবা ক্যাম্পে দিন কাটছে মানুষজনের । কেউ আবার পরিবার নিয়ে রাস্তাতেই থাকছেন । কোরোনায় যেখানে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে সকলকে, সেখানে ঘরই নেই প্রায় 30 টি পরিবারের ।

image
এভাবেই গাছ পড়ে বাড়ি ভেঙেছে তেলিনিপাড়ায়

চলতি মাসের মাঝামাঝিতে তেলিনিপাড়ায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়। পুড়ে ছাই হয় বহু বাড়ি । চার-পাঁচদিন ধরে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ ও ব়্যাফ নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় । বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট । পুলিশ ব্যারিকেড করে গোটা তেলিনিপাড়াকে এখনও ঘিরে রাখা হয়েছে । মানুষের মধ্যে সেই আতঙ্ক এখনও কাটেনি । যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সংঘর্ষে, তাঁদের বাড়ি মেরামতের আগেই ফের আমফানে গুঁড়িয়ে গেছে । ভেসে গেছে আসবাবপত্র বা বই-খাতা । এইসবের উপর লকডাউনে এই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলোর কাজ নেই । সব মিলিয়ে খাবার জোগাড় করা মুশকিল হয়ে গেছে তাঁদের কাছে । এবিষয়ে সুমন রাউত নামে একজন জানান, আমফানের সময় আমরা বাড়িতেই ছিলাম । একে তো বাড়িতে ক্ষতি হয়েছিলই, তার উপর ঝড়ের জন্য গাছ পড়ে বাড়ি পুরো ভেঙে পড়েছে । এখন একজনের বাড়িতে আছি । কিন্তু লোকের বাড়িতে কতদিন থাকব? চাই, সরকার আমাদের সাহায্য করুক ।

এই অঞ্চলের মানুষজন কেউ জুটমিলে কাজ করেন বা কেউ টোটো চালান । সকলেই দিনমজুর । লকডাউনে বন্ধ জুটমিল বা অন্যান্য কাজ । এই অবস্থায় এত ক্ষতি সামাল দেবেন কীভাবে, এই ভেবেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা । এবিষয়ে গৌতম রাউত নামে এক বাসিন্দা জানান, ঝামেলা হয়েছে ক'দিন আগে । বাড়ি-ঘর এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত । কোরোনার জেরে আবার কাজ নেই । খাওয়াও তো বন্ধ । কী হবে, কীভাবে বাড়ি হবে জানি না । শৌচাগারও ভেঙে গেছে এলাকার । সরকার না সাহায্য় করলে আমরা কী করব ?

এবিষয়ে এলাকার মনা পাসওয়ান বলেন, "কোমর পর্যন্ত জল । গাছ পড়ে সব বাড়ি শেষ । এতে ক্ষতি হয়েছে কিছু। বুঝতে পারছিলাম না কী করব । 15-20 টা বাড়ি ভেঙে গেছে । বিদ্যুৎ নেই সেই থেকে । এখনও গাছ পরিষ্কার হয়নি । এর উপরই সবাই রয়েছে । আমরা চাই, এগুলি পরিষ্কার করে আপাতত লোকজনের থাকার ব্যবস্থা সরকার করে দিক । পানীয় জলও তো পাচ্ছি না ঠিকমতো ।"

Image
গাছ কেটে পরিষ্কারের কাজ এখনও শুরু হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর

ঝড়ে চলে গেছিলেন নিরাপদ স্থানে। এসে দেখছেন, কয়েকটা আসবাবপত্র আর ভাঙাচোরা দেওয়াল পড়ে আছে । সেগুলো আঁকড়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন এক বৃদ্ধা । তিনি বলেন, "ঝড়ে তো ঘর সব পড়ে গেছে । সবাইকে বাইরে নিয়ে গেল । এখন তো আর বাড়িই নেই । শুধু ফাঁকা মাঠ । বাধ্য হয়ে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছি । এখন সরকার সাহায্য় না করলে কোথায় থাকব ?"

জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গেছে, সুপার সাইক্লোনে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে হুগলি জেলা । পাঁচ হাজারের বেশি গাছ ভেঙে পড়েছে । 20 হাজার বাড়ি ভেঙে গেছে । 77 হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত । বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই । যার জেরে বিভিন্ন এলাকায় জলের সংকট দেখা দিয়েছে । বিক্ষোভ অবরোধ চলছে । 5500 টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে । ইতিমধ্যেই 2500 টি নতুন খুঁটি বসানো হয়েছে । 151 কিমি হাইটেনশান লাইনের তার ছিঁড়ে গেছিল । 120 কিমি তার জোড়া হয়েছে । বাকি কর্মীরা কাজ করছেন । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে ।

সংঘর্ষ ও সাইক্লোনে চরম বিপাকে তেলিনিপাড়া...

এবিষয়ে ভদ্রেশ্বর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান প্রকাশ গোস্বামী বলেন, " ভগবানের দয়ায় কেউ মারা যায়নি । যেভাবে ঝড়ের তাণ্ডব হয়েছে তাতে গুরুতর আহত কেউ হননি । মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ দেওয়ায় ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন । চন্দননগরের মহকুমা শাসক আমাদের একটি লিস্ট করতে বলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের । 10 নম্বর ওয়ার্ডে ন'টি গাছ ও 40 টি বাড়ি ভেঙেছে । সমস্ত জায়গার তুলনায় তেলিনিপাড়ার মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ । যেভাবে একের পর এক ঘটনা শুরু হয়েছে । আমরা চেষ্টা করছি, যাতে ওদের জন্য কিছু করা যায় । ক্যাম্পে ও ওয়ার্ড কমিউনিটি হলেও রাখা হয়েছে । খাবার ও জামা কাপড়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে সকলের ।

Last Updated : May 25, 2020, 4:29 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.