ETV Bharat / state

"কংক্রিটের মাটিতে চাষ করাবেন, মুখ্যমন্ত্রী কি নিজেকে ঈশ্বর ভাবেন ?"

সিঙ্গুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ তোলপাড় বিধানসভায় । বিরোধীদের বক্তব্য, জমি ফেরতের পর রাজ্য সরকারের দাবি চাষের জন্য সবরকম সাহায্য করা হয়েছে । তাহলে চাষের পরিমাণ কমছে কেন, সেই প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা । যার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চাষিদের তো আর চাষের জন্য জোর করতে পারি না । তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন সিঙ্গুরের চাষিরা ।

ফাইল ফোটো
author img

By

Published : Jul 10, 2019, 10:30 PM IST

Updated : Jul 17, 2019, 12:05 AM IST

সিঙ্গুর, 10 জুলাই : সেদিন সিঙ্গুরে শিল্প করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । তারপর কেটে গেছে প্রায় 13 বছর । আজ বিধানসভায় বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ইশু সেই সিঙ্গুর । সিঙ্গুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ তোলপাড় হল বিধানসভা । বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, জমি ফেরতের পর না কি সবরকম সাহায্য করেছিল রাজ্য সরকার । তাহলে চাষের পরিমাণ কমছে কেন ? প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, চাষিদের তো আর চাষের জন্য জোর করতে পারি না ।

2006 সালে বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । শুরু হয়েছিল জমি অধিগ্রহণের কাজ । কিন্তু, শুরু থেকেই অধিগ্রহণ ঘিরে শুরু হয় সমস্যা । অনেকেই জমি দিতে অস্বীকার করেন । অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় জমি আন্দোলন । রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জোর করে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ তুলে ধরনায় বসেন তৃণমূলনেত্রী । ধারাবাহিক আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প তুলে গুজরাতে নিয়ে যায় টাটা গোষ্ঠী । প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, 2011 সালে ক্ষমতায় এসে কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ।

এই সংক্রান্ত খবর : সিঙ্গুরের জমিতে শিল্পও হচ্ছে, চাষও হচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী

2016 সালের 31 অগাস্ট শীর্ষ আদালত 12 সপ্তাহের মধ্যে 1000 একর জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় । শুরু হয় জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া । সরকারিভাবে দাবি করা হয়েছিল 955 একর জমি চাষযোগ্য করে ফেরত দেওয়া হয়েছে । কিন্তু, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মাত্র 260 একর জমিতে চাষ হচ্ছে । বাকি জমিতে কেন চাষ হচ্ছে না ? এই প্রশ্নেই আজ সরগরম হয়ে উঠে বিধানসভা ।

সিঙ্গুর নিয়ে চাষিদের বক্তব্য

উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "চলতি বছরে সিঙ্গুরে 260 একর জমিতে চাষ হয়েছে । সরকার কৃষকদের সবরকম সাহায্য করার পরেও চাষের পরিমাণ কেন কমছে আমি কী করে বলব ? কেউ বেশি দাম পেয়ে জমি বিক্রি করে দিচ্ছে । পাশাপাশি, চাষের খরচও বেড়েছে । জোর করে তো আর চাষিদের বলতে পারি না চাষ করো !"

এই সংক্রান্ত খবর : সিঙ্গুর আন্দোলন ভুল ছিল : মুকুল রায়

সঠিক কারণ হয়তো আজ তুলে ধরতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু, উত্তর দিয়েছেন সিঙ্গুরের কৃষকরা ।

বিফল বাঙাল নামে সিঙ্গুরের এক চাষি বলেন, "টাটা প্রকল্পের মধ্যে জমি চাষ করার পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি । কেউ চাষ এখানে করতে পারবে না । যে জায়গায় টাটা কোনওরকম কনস্ট্রাকশন করেনি, সেই সামান্য জমিকে চাষযোগ্য জমি হিসেবে দেখাচ্ছে সরকার । আমাদের যে পরচা দেওয়া হয়েছে, সে জমি এখনও পাইনি । কোনওদিন চাষ করতেও পারব না । এখানে শিল্প ছাড়া কিছু হবেও না। চাষিরা চাইছে এখানে শিল্পই হোক ।"

এই সংক্রান্ত খবর : সিঙ্গুরের ফল লজ্জাজনক, হারানো জমি ফেরত চেয়ে নেতাদের কড়া বার্তা মমতার

অরিজিৎ মণ্ডল নামে এক চাষি বললেন, "সিঙ্গুরের অবস্থা খুব খারাপ । যদি বুকের পাটা থাকে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে আসুন । দেখে যান কী ভালো করেছেন । মুখ্যমন্ত্রী কি নিজেকে ঈশ্বর ভাবেন যে কংক্রিটের মাটিতে চাষ করে দেখাবেন ? এ জমিতে ট্রাক্টর, কোদাল কিছুই চালানো যাবে না । শুধু শুধু কেন্দ্রের টাকা নষ্ট করে এই জঙ্গল পরিষ্কার করাচ্ছেন । এখানে চাষ কোনওদিনই হবে না । শিল্প করলে খুব ভালো হয় ।"

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিঙ্গুরে জমি বণ্টন করে দিয়েছে রাজ্য সরকার । সেই বক্তব্যকে পুরো ভাঁওতা বললেন সিঙ্গুরের আর এক চাষি রামপদ সাহানা । বলেন, "আপনারাই দেখুন জমির বর্তমান অবস্থা । জমি থেকে এখনও পাথর, বালি বেরোচ্ছে । এখানে কি আর চাষ হবে ? আমরা চাই এখানে শিল্প হোক । সেদিন যারা জমি দেয়নি তারা আজ দু'টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছে । মাসে দু'হাজার টাকা পাচ্ছে । আর আমরা জমি দিয়েছিলাম । আজও কিছুই পেলাম না ।"

এই সংক্রান্ত খবর : "চাই কারখানা" ফের পথে নামলেন সিঙ্গুরের কৃষকরা

মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরের জমিকে কৃষিযোগ্য বললেও, সম্প্রতি স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছিলেন অন্যকথা । তিনি বলেছিলেন, "বিবিধ কারণে এখনও কিছু জমি চাষের উপযোগী হয়ে উঠেনি । কোথাও কংক্রিট আছে । কোথাও বা জলাজমি বা উলুবন হয়ে আছে । সেগুলি অপসারিত করলেই সিঙ্গুরের জমি সম্পূর্ণরূপে কৃষকরা ফেরত পাবেন । তবে আইনি জটিলতা কৃষকদের জমি ফেরত না পাওয়ার একটা বড় কারণ।"

সিঙ্গুর, 10 জুলাই : সেদিন সিঙ্গুরে শিল্প করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । তারপর কেটে গেছে প্রায় 13 বছর । আজ বিধানসভায় বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ইশু সেই সিঙ্গুর । সিঙ্গুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ তোলপাড় হল বিধানসভা । বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, জমি ফেরতের পর না কি সবরকম সাহায্য করেছিল রাজ্য সরকার । তাহলে চাষের পরিমাণ কমছে কেন ? প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, চাষিদের তো আর চাষের জন্য জোর করতে পারি না ।

2006 সালে বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । শুরু হয়েছিল জমি অধিগ্রহণের কাজ । কিন্তু, শুরু থেকেই অধিগ্রহণ ঘিরে শুরু হয় সমস্যা । অনেকেই জমি দিতে অস্বীকার করেন । অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় জমি আন্দোলন । রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জোর করে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ তুলে ধরনায় বসেন তৃণমূলনেত্রী । ধারাবাহিক আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প তুলে গুজরাতে নিয়ে যায় টাটা গোষ্ঠী । প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, 2011 সালে ক্ষমতায় এসে কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ।

এই সংক্রান্ত খবর : সিঙ্গুরের জমিতে শিল্পও হচ্ছে, চাষও হচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী

2016 সালের 31 অগাস্ট শীর্ষ আদালত 12 সপ্তাহের মধ্যে 1000 একর জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় । শুরু হয় জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া । সরকারিভাবে দাবি করা হয়েছিল 955 একর জমি চাষযোগ্য করে ফেরত দেওয়া হয়েছে । কিন্তু, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মাত্র 260 একর জমিতে চাষ হচ্ছে । বাকি জমিতে কেন চাষ হচ্ছে না ? এই প্রশ্নেই আজ সরগরম হয়ে উঠে বিধানসভা ।

সিঙ্গুর নিয়ে চাষিদের বক্তব্য

উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "চলতি বছরে সিঙ্গুরে 260 একর জমিতে চাষ হয়েছে । সরকার কৃষকদের সবরকম সাহায্য করার পরেও চাষের পরিমাণ কেন কমছে আমি কী করে বলব ? কেউ বেশি দাম পেয়ে জমি বিক্রি করে দিচ্ছে । পাশাপাশি, চাষের খরচও বেড়েছে । জোর করে তো আর চাষিদের বলতে পারি না চাষ করো !"

এই সংক্রান্ত খবর : সিঙ্গুর আন্দোলন ভুল ছিল : মুকুল রায়

সঠিক কারণ হয়তো আজ তুলে ধরতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু, উত্তর দিয়েছেন সিঙ্গুরের কৃষকরা ।

বিফল বাঙাল নামে সিঙ্গুরের এক চাষি বলেন, "টাটা প্রকল্পের মধ্যে জমি চাষ করার পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি । কেউ চাষ এখানে করতে পারবে না । যে জায়গায় টাটা কোনওরকম কনস্ট্রাকশন করেনি, সেই সামান্য জমিকে চাষযোগ্য জমি হিসেবে দেখাচ্ছে সরকার । আমাদের যে পরচা দেওয়া হয়েছে, সে জমি এখনও পাইনি । কোনওদিন চাষ করতেও পারব না । এখানে শিল্প ছাড়া কিছু হবেও না। চাষিরা চাইছে এখানে শিল্পই হোক ।"

এই সংক্রান্ত খবর : সিঙ্গুরের ফল লজ্জাজনক, হারানো জমি ফেরত চেয়ে নেতাদের কড়া বার্তা মমতার

অরিজিৎ মণ্ডল নামে এক চাষি বললেন, "সিঙ্গুরের অবস্থা খুব খারাপ । যদি বুকের পাটা থাকে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে আসুন । দেখে যান কী ভালো করেছেন । মুখ্যমন্ত্রী কি নিজেকে ঈশ্বর ভাবেন যে কংক্রিটের মাটিতে চাষ করে দেখাবেন ? এ জমিতে ট্রাক্টর, কোদাল কিছুই চালানো যাবে না । শুধু শুধু কেন্দ্রের টাকা নষ্ট করে এই জঙ্গল পরিষ্কার করাচ্ছেন । এখানে চাষ কোনওদিনই হবে না । শিল্প করলে খুব ভালো হয় ।"

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিঙ্গুরে জমি বণ্টন করে দিয়েছে রাজ্য সরকার । সেই বক্তব্যকে পুরো ভাঁওতা বললেন সিঙ্গুরের আর এক চাষি রামপদ সাহানা । বলেন, "আপনারাই দেখুন জমির বর্তমান অবস্থা । জমি থেকে এখনও পাথর, বালি বেরোচ্ছে । এখানে কি আর চাষ হবে ? আমরা চাই এখানে শিল্প হোক । সেদিন যারা জমি দেয়নি তারা আজ দু'টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছে । মাসে দু'হাজার টাকা পাচ্ছে । আর আমরা জমি দিয়েছিলাম । আজও কিছুই পেলাম না ।"

এই সংক্রান্ত খবর : "চাই কারখানা" ফের পথে নামলেন সিঙ্গুরের কৃষকরা

মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরের জমিকে কৃষিযোগ্য বললেও, সম্প্রতি স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছিলেন অন্যকথা । তিনি বলেছিলেন, "বিবিধ কারণে এখনও কিছু জমি চাষের উপযোগী হয়ে উঠেনি । কোথাও কংক্রিট আছে । কোথাও বা জলাজমি বা উলুবন হয়ে আছে । সেগুলি অপসারিত করলেই সিঙ্গুরের জমি সম্পূর্ণরূপে কৃষকরা ফেরত পাবেন । তবে আইনি জটিলতা কৃষকদের জমি ফেরত না পাওয়ার একটা বড় কারণ।"

Last Updated : Jul 17, 2019, 12:05 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.