সিঙ্গুর (হুগলি), 28 মার্চ: জমি আন্দোলনের জন্য হুগলির সিঙ্গুরে 14 দিন ধরনা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ 26 দিন অনশনও করেছিলেন ৷ তখন তিনি বাংলার বিরোধী নেত্রী ৷ প্রায় দেড় দশক পর আবারও ধরনায় বসতে চলেছেন তিনি ৷ এবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ধরনায় বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বুধবার সেই ধরনা শুরুর প্রায় 24 ঘণ্টা আগে সিঙ্গুরে হাজির হলেন মমতা (Mamata Banerjee on Dharna) ৷ পুরনো সেই ধরনার স্মৃতিচারণ করে বললেন, ‘‘সিঙ্গুরে 14 দিন ধরনা দিয়েছি ৷ তাই আজ সিঙ্গুরে এসেছি ৷ এখানকার মাটি ছুঁয়ে গেলাম ৷ কাল আবার ধরনায় বসব ৷’’
মঙ্গলবার সিঙ্গুর থেকেই রাজ্যজুড়ে পথশ্রী প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তার পর ভাষণ দিতে গিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে (Mamata Banerjee Slams Central Government) ৷ তাঁর আক্রমণের নিশানা থেকে বাদ গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও (Mamata Slams PM Narendra Modi) ৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, এদিন যে পথশ্রী প্রকল্প চালু হল, সেই প্রকল্পের রাস্তার পুনর্নির্মাণের কাজ রাজ্য সরকারের টাকাতেই হবে ৷ আর এই প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে 100 দিনের কাজের শ্রমিকদের ৷
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কোনও প্রকল্পের টাকা পাওয়া যায় না ৷ একশো দিনের কাজের সাত হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে ৷ আগামী অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে বাংলার জন্য কোনও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র ৷ সেই কারণে সরকারের সমস্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে 100 দিনের কাজের জবকার্ড হোল্ডারদের ব্যবহার করা হচ্ছে ৷ আর এখানেই তিনি নিশানা করেন কেন্দ্র ও প্রধানমন্ত্রীকে ৷ তাঁর কটাক্ষ, কেন্দ্রকে দেখাতে হবে যে টাকা না দিলেও বাংলার বুদ্ধি-মেধা দিয়ে বাংলা নিজের কাজ করতে পারে ৷ শুধু ছবি ব্যবহার করলে হয় না, বুদ্ধি খরচ করতে হয় ৷
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদেই আগামিকাল, বুধবার থেকে দু’দিনের ধরনায় বসছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ওইদিন বেলা 12টায় রেড রোডে আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসবেন তিনি ৷ পরদিন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ধরনা দেবেন ৷ তবে এই নিয়ে এর আগেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কেন্দ্র জিএসটি-র টাকা নিলেও রাজ্যকে প্রাপ্য দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছিলেন ৷ এদিনও সেই অভিযোগ শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায় ৷ পাশাপাশি আক্ষেপের সুরে তিনি জানান, মানুষের উপকার হবে ভেবে জিএসটি চালুর সময় তা সমর্থন করা হয় ৷ কিন্তু সেই সময় সমর্থন করা ভুল হয়েছিল ৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আগাগোড়া কেন্দ্রকেই আক্রমণ ছিল ৷ রাজ্য ডানলপ অধিগ্রহণ করতে চাইলেও কেন্দ্রের বাধায় তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বিরোধীদের হেনস্তা করতে ইডি-সিবিআই পাঠানো হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ ৷ মমতার দাবি, মহিলাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না৷ পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি তিনি সিপিএম ও বিজেপির শেষ দেখে ছাড়বেন ৷
উল্লেখ্য, সিঙ্গুর আন্দোলন মমতার জনপ্রিয়তাকে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ 2011 সালে বাম জমানার অবসানে মমতার সিঙ্গুর আন্দোলন অন্যতম অনুঘটক ছিল বলেই অনেকে মনে করেন ৷ তাই সিঙ্গুরে এসে সেই আন্দোলনের প্রসঙ্গ বারবার ফিরে এসেছে মমতার ভাষণে ৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘এই সিঙ্গুর, যেখানে আমি 26 দিন অনশন করেছিলাম ৷ আমরা বারবার সিঙ্গুরে ফিরে আসি ৷’’ তিনি আরও জানান, সিঙ্গুরে অনেক উন্নয়নের কাজ হয়েছে ৷ কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না, এই আইনই বদলে দেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে দেশের 13 জেলার মধ্যে কেন্দ্রের পুরস্কার পেল রাজ্যেরই 7