ETV Bharat / state

Cornea Collection on Bicycle: কর্নিয়া সংগ্রহ করে দৃষ্টি ফেরাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সুরজিৎ

দীর্ঘ 15 বছর ধরে সাইকেলে করে কর্নিয়া সংগ্রহ করে চলেছেন সুরজিৎ শীল (Cornea Collection on Bicycle) ৷ তা পৌঁছে দিচ্ছেন জেলা থেকে শহর কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ৷ তাঁতি পরিবারের যুবকের লক্ষ্য দৃষ্টিহীনরা কর্নিয়া পেয়ে দেখুক জগতের আলো ৷

Cornea Collection on Bicycle
কর্নিয়া সংগ্রহ
author img

By

Published : Feb 7, 2023, 8:47 PM IST

কর্নিয়া সংগ্রহ করে দৃষ্টি ফেরাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সুরজিৎ

রাজবলহাট(হুগলি), 7 ফেব্রুয়ারি: দৃষ্টিহীনদের জীবনে আলোর দিশা দেখাতে দিন রাত এক করে কর্নিয়া সংগ্রহ করছেন হুগলির বছর পঁয়ত্রিশের যুবক সুরজিৎ শীল ৷ দীর্ঘ 15 বছর ধরে সাইকেলে করে তিনি এই কাজ করে চলেছেন ৷ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সুরজিৎ ৷ বাবা পেশায় তাঁতি ৷ 2007 সাল থেকে কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে যুক্ত সুরজিৎ । এখনও সাড়ে পাঁচশো জোড়ার বেশি কর্নিয়া সংগ্রহ করেছেন বলে দাবি তাঁর । অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই লক্ষ্য সুরজিতের (Hooghly man collects cornea to help the sightless) ।

সুরজিতের নিজের আয় বলতে সামান্য বাবার সঙ্গে তাঁতের কাজ, পাশাপাশি ওষুধ সাপ্লাইয়ের কাজ করে । তবে বেশিরভাগ সময়টা কর্নিয়া সংগ্রহের কাজেই দেন সুরজিৎ । তবে শুধু তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে রাজবলহাটের তিনজন যুবকও যুক্ত রয়েছেন এই মহান কাজে । এছাড়াও তাঁরা রাজবলহাটের কালচারাল সার্কেল বলে একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত । যেখানে চক্ষু পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা-সহ নানা ধরনের সমাজ সেবামূলক কাজ করেন তাঁরা ।

মরণোত্তর চক্ষুদান ও দেহদান এক মহান কাজ ৷ একজনের জীবনে চির অন্ধকার ঘনিয়ে আসলেও তিনি মরণোত্তর আলো ফোটাতে পারেন অন্য ব্যক্তির জীবনে ৷ আর সেই বার্তা দিতেই কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছেন এই তিনজন যুবক ৷ তাঁদের মধ্যেই একজন হলেন রাজবলহাটের সুরজিৎ শীল ৷ নিজের ইচ্ছা শক্তির জোরে কর্নিয়া সংগ্রহ করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে বহু মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন তিনি ৷ প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে নিরন্তর চক্ষুদানের সচেতনতা ও কর্নিয়া সংগ্রহ করে চলেছেন সুরজিৎ । সাইকেলে সঙ্গে করে কর্নিয়া সংগ্রহের যন্ত্রপাতি নিয়ে হুগলি হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যান তিনি । এ ব্যাপারে প্রথাগত শিক্ষা না-থাকলেও, সরকারি হাসপাতালের ট্রেনিং নেওয়ার পরই এই কাজ শুরু করেছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ছেলেটি ।

উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে চক্ষুদানের প্রচার ও কর্নিয়া সংগ্রহ করাই লক্ষ্য সুরজিতের । সরকারিভাবে সেভাবে স্বীকৃতি না-পেলেও, বিভিন্ন সংস্থা সম্মান দিয়েছে তাঁকে । সুরজিৎ যে সংস্থার অংশ, তারা দাবি তুলছেন, মেডিক্যাল কলেজগুলি ছাড়াও জেলা হাসপাতালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করুক সরকার । তারা জানায়, গোটা ভারতের 30 লক্ষ মানুষ কর্নিয়া জনিত কারণে দেখতে পান না । বছরে প্রায় 80 লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় দেশে । তার মধ্যে 20 থেকে 30 হাজার মানুষের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয় । শুধু পশ্চিমবঙ্গে কর্নিয়া সংগ্রহ হয় 2 হাজারের মতো । এ ব্যাপারে বাংলার থেকে তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে অনেকটাই এগিয়ে ৷ সরকারি সাহায্য পেলে বহু মানুষের দৃষ্টি ফিরবে বলে আশা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ।

সুরজিৎ শীল বলেন, "বর্তমানে সাড়ে ছশো জোড়া চোখ সংগ্রহ করে মেডিক্যাল কলেজে পাঠাতে পেরেছি । এর থেকে দৃষ্টিহীনরা চোখ ফিরে পেয়েছে । আমি একা এই কাজ বেশিদিন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব না । সকলে মিলে করতে হবে । আমি সরকারি স্বীকৃতি কিছু পায়নি । আর্থিক সুবিধা বা উৎসাহমূলক সহযোগিতা পাওয়া যায় না এই কাজে । মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আই ব্যাংক তৈরি করার উদ্যোগ নেয়নি ।"

কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে যুক্ত অনুপকুমার শীল বলেন, "বর্তমান সমাজে পরিবার সামলে এই কাজ করা খুবই কঠিন । প্রত্যেক মানুষের শখ থাকে । আর এই কাজ করতে আমরা এগিয়ে এসেছি । এই কাজের জন্য পরিবারও আমাদের সমর্থন করেছে । এখন রাজবলহাটের অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছে চক্ষুদানের জন্য । এখন আমরা ব্যক্তিগত কাজে অনেকটাই ব্যস্ত থাকি ৷ তবে সুরজিৎ অনেক বেশি কাজ করে ৷ কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে সময় দেন ।"

চিকিৎসক ও সংস্থার সভাপতি প্রভাস দাস বলেন, "সাইকেল নিয়ে সুরজিৎ ও তাঁর দল এই কাজ করে যাচ্ছেন । রাজবলহাটের মতো প্রত্যন্ত জায়গা থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছনো খুবই কঠিন । সরকারিভাবে ও আর্থিকভাবে সাহায্য করা উচিত । সুরজিতের মতো ছেলেদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত । পশ্চিমবঙ্গের 2 লক্ষ থেকে তিন লক্ষ মানুষ কর্নিয়া জনিত কারণে দৃষ্টি হারিয়ে হাহাকার করছে । তারা শুধুমাত্র আমাদের মতো সংস্থার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন । প্রায় 2 হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ হয় মাত্র রাজ্যে ।"

আরও পড়ুন: সোজা হল কিশোরীর সম্পূর্ণ ঝুঁকে যাওয়া শিরদাঁড়া, জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য এনআরএস-এ

কর্নিয়া সংগ্রহ করে দৃষ্টি ফেরাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সুরজিৎ

রাজবলহাট(হুগলি), 7 ফেব্রুয়ারি: দৃষ্টিহীনদের জীবনে আলোর দিশা দেখাতে দিন রাত এক করে কর্নিয়া সংগ্রহ করছেন হুগলির বছর পঁয়ত্রিশের যুবক সুরজিৎ শীল ৷ দীর্ঘ 15 বছর ধরে সাইকেলে করে তিনি এই কাজ করে চলেছেন ৷ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সুরজিৎ ৷ বাবা পেশায় তাঁতি ৷ 2007 সাল থেকে কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে যুক্ত সুরজিৎ । এখনও সাড়ে পাঁচশো জোড়ার বেশি কর্নিয়া সংগ্রহ করেছেন বলে দাবি তাঁর । অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই লক্ষ্য সুরজিতের (Hooghly man collects cornea to help the sightless) ।

সুরজিতের নিজের আয় বলতে সামান্য বাবার সঙ্গে তাঁতের কাজ, পাশাপাশি ওষুধ সাপ্লাইয়ের কাজ করে । তবে বেশিরভাগ সময়টা কর্নিয়া সংগ্রহের কাজেই দেন সুরজিৎ । তবে শুধু তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে রাজবলহাটের তিনজন যুবকও যুক্ত রয়েছেন এই মহান কাজে । এছাড়াও তাঁরা রাজবলহাটের কালচারাল সার্কেল বলে একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত । যেখানে চক্ষু পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা-সহ নানা ধরনের সমাজ সেবামূলক কাজ করেন তাঁরা ।

মরণোত্তর চক্ষুদান ও দেহদান এক মহান কাজ ৷ একজনের জীবনে চির অন্ধকার ঘনিয়ে আসলেও তিনি মরণোত্তর আলো ফোটাতে পারেন অন্য ব্যক্তির জীবনে ৷ আর সেই বার্তা দিতেই কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছেন এই তিনজন যুবক ৷ তাঁদের মধ্যেই একজন হলেন রাজবলহাটের সুরজিৎ শীল ৷ নিজের ইচ্ছা শক্তির জোরে কর্নিয়া সংগ্রহ করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে বহু মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন তিনি ৷ প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে নিরন্তর চক্ষুদানের সচেতনতা ও কর্নিয়া সংগ্রহ করে চলেছেন সুরজিৎ । সাইকেলে সঙ্গে করে কর্নিয়া সংগ্রহের যন্ত্রপাতি নিয়ে হুগলি হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যান তিনি । এ ব্যাপারে প্রথাগত শিক্ষা না-থাকলেও, সরকারি হাসপাতালের ট্রেনিং নেওয়ার পরই এই কাজ শুরু করেছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ছেলেটি ।

উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে চক্ষুদানের প্রচার ও কর্নিয়া সংগ্রহ করাই লক্ষ্য সুরজিতের । সরকারিভাবে সেভাবে স্বীকৃতি না-পেলেও, বিভিন্ন সংস্থা সম্মান দিয়েছে তাঁকে । সুরজিৎ যে সংস্থার অংশ, তারা দাবি তুলছেন, মেডিক্যাল কলেজগুলি ছাড়াও জেলা হাসপাতালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করুক সরকার । তারা জানায়, গোটা ভারতের 30 লক্ষ মানুষ কর্নিয়া জনিত কারণে দেখতে পান না । বছরে প্রায় 80 লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় দেশে । তার মধ্যে 20 থেকে 30 হাজার মানুষের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয় । শুধু পশ্চিমবঙ্গে কর্নিয়া সংগ্রহ হয় 2 হাজারের মতো । এ ব্যাপারে বাংলার থেকে তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে অনেকটাই এগিয়ে ৷ সরকারি সাহায্য পেলে বহু মানুষের দৃষ্টি ফিরবে বলে আশা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ।

সুরজিৎ শীল বলেন, "বর্তমানে সাড়ে ছশো জোড়া চোখ সংগ্রহ করে মেডিক্যাল কলেজে পাঠাতে পেরেছি । এর থেকে দৃষ্টিহীনরা চোখ ফিরে পেয়েছে । আমি একা এই কাজ বেশিদিন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব না । সকলে মিলে করতে হবে । আমি সরকারি স্বীকৃতি কিছু পায়নি । আর্থিক সুবিধা বা উৎসাহমূলক সহযোগিতা পাওয়া যায় না এই কাজে । মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আই ব্যাংক তৈরি করার উদ্যোগ নেয়নি ।"

কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে যুক্ত অনুপকুমার শীল বলেন, "বর্তমান সমাজে পরিবার সামলে এই কাজ করা খুবই কঠিন । প্রত্যেক মানুষের শখ থাকে । আর এই কাজ করতে আমরা এগিয়ে এসেছি । এই কাজের জন্য পরিবারও আমাদের সমর্থন করেছে । এখন রাজবলহাটের অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছে চক্ষুদানের জন্য । এখন আমরা ব্যক্তিগত কাজে অনেকটাই ব্যস্ত থাকি ৷ তবে সুরজিৎ অনেক বেশি কাজ করে ৷ কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে সময় দেন ।"

চিকিৎসক ও সংস্থার সভাপতি প্রভাস দাস বলেন, "সাইকেল নিয়ে সুরজিৎ ও তাঁর দল এই কাজ করে যাচ্ছেন । রাজবলহাটের মতো প্রত্যন্ত জায়গা থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছনো খুবই কঠিন । সরকারিভাবে ও আর্থিকভাবে সাহায্য করা উচিত । সুরজিতের মতো ছেলেদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত । পশ্চিমবঙ্গের 2 লক্ষ থেকে তিন লক্ষ মানুষ কর্নিয়া জনিত কারণে দৃষ্টি হারিয়ে হাহাকার করছে । তারা শুধুমাত্র আমাদের মতো সংস্থার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন । প্রায় 2 হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ হয় মাত্র রাজ্যে ।"

আরও পড়ুন: সোজা হল কিশোরীর সম্পূর্ণ ঝুঁকে যাওয়া শিরদাঁড়া, জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য এনআরএস-এ

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.