হায়দরাবাদ, 6 জানুয়ারি: দিলীপ কুমার থেকে এআর রহমান হওয়ার জার্নিটা সোজা ছিল না ৷ ছোট থেকেই মিউজিকের প্রতি ছিল ভালোবাসা ৷ কিন্তু মাত্র 9 বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব পড়ে ছোট্ট রহমানের কাঁধে ৷ মাত্র 15 বছর বয়সে তাঁকে কম উপস্থিতির কারণে বের করে দেওয়া হয়েছিল স্কুল থেকে ৷ কিন্তু পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় তিনি স্কলার শিপে অক্সফোর্ডে ট্রিনিটি কলেজে সুযোগ পান ৷ প্রথমদিকে রহমান আয় করতে মাত্র 100 থেকে 200 টাকা ৷ আল্লা রাখার জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক, গায়ক-সুরকারের অনুপ্রেরণাময় জার্নি ৷
1967 সালের আজকের দিনে বিশ্ব উদযাপন করে এআর রহমানের জন্মদিন ৷ ভারতীয় সিনেমার সঙ্গীতকে তিনি নিয়ে গিয়েছে বিশ্ব দরবারে ৷ তবে ছোট থেকেই কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে রহমানকে ৷ এক সাক্ষাৎকারে সঙ্গীতশিল্পী বলেন, "আমার বাবা যখন মারা যায়, তখন আমার বয়স অনেক কম ৷ আমি তখন ছোটখাটো কাজ করতাম ৷ পাশাপাশি, মন্দির-সহ অন্যান্য জায়গায় যত গানের অনুষ্ঠান হত দেখতাম ৷ তারপর এলাকার এক অনুষ্ঠানে আমি লাইভ মিউজিক পারফর্ম করেছিলাম ৷"
1987 সালে রহমান 'ডিস্কো ডিস্কো' নামে এক মিউজিক অ্যালবাম বানান ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন তামিল গায়ক-অভিনেতা মালয়েশিয়া বাসুদেবন ৷ বানান একটি সুফি অ্যালবামও ৷ তবে ছোটবেলায় নাকি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা ছিল রহমানের ৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ইলেকট্রিক গ্যাজেট ও টেকনোলজি তাঁকে আকর্ষিত করত ৷
অনেকেই মনে করেন 1992 সালে মুক্তি পাওয়া 'রোজা' রহমানের করা প্রথম মিউজিক ৷ কিন্তু সেটা ভুল ৷ আসলে রহমানের সুর করা প্রথম সিনেমা 'যোদ্ধা' (1992) ৷ মোহনলাল অভিনীত মালয়লম ছবির হাত ধরে সিনে দুনিয়ায় পা রাখেন রহমান ৷ নিজের কেরিয়ার শুরু প্রসঙ্গে রহমান জানিয়েছেন, 1984 সালে কম্পোজার রমেশ নাইডুর সঙ্গে কাজ করতেন তিনি ৷ পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে তিনি রমেশ নাইডুর কাছে কিবোর্ড বাজাতেন ৷ সেখান থেকে প্রতিদিন তিনি আয় করতেন 100-200 টাকা ৷ সেটাই ছিল সঙ্গীত জগত থেকে তাঁর করা প্রথম উপার্জন ৷
'স্লামডগ মিলেনিয়ার' ছবি রহমানকে এনে দিয়েছে অস্কারের মতো সম্মানীয় পুরস্কার ৷ জয় হো গান আজও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দর্শকদের লোম খাঁড়া করে দেয় ৷ কিন্তু এই গান নাকি তৈরি করা হয়েছিল 2008 সালে মুক্তি পাওয়া যুবরাজ সিনেমার জন্য ৷ কিন্তু সেই গান পরবর্তী সময়ে সেই বছরই মুক্তি পাওয়া স্লামডগ মিলিয়েনার ছবিতে ব্যবহার করা হয় ৷ তারপর রাতারাতি তা গ্লোবালি সেনসেশন তৈরি করে ৷
তবে মজার বিষয় হল, যাঁর গানে বিশ্ব মুগ্ধ সেই রহমানের গান পছন্দ করেন না খাতিজা ৷ খাতিজা রহমানের মেয়ে ৷ এমনকী, স্কুলে বাবাকে দেখে অনেকে যখন অটোগ্রাফ নিতে আসতেন সেটাও নাকি পছন্দ করতেন না খাতিজা ৷ সেই কারণে বাবাকে স্কুলে আসতেও বারণ করেছিল মেয়ে ৷
অন্যদিকে এক সাক্ষাৎকারে রহমান জানিয়েছেন, তিনি নাকি সিনেমার গান শুনতে পছন্দ করেন না ৷ রহমান বলেন, "আমি সিনেমার গান শুনতে একজম পছন্দ করি না কারণ প্রথম 10 বছর কিবোর্ড প্লেয়ার হিসাবে কাজ করেছি ৷ তাই যাতে সিনেমার গান আমার মনে যাতে ছাপ না ফেলে তাই আমি সিনেমার গান বাদ দিয়ে অন্য মিউজিক শুনতাম ৷ ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল হোক বা ওয়েস্টার্ন মিউজিক, আমি এই গান শুনে পরে নিজের মিউজিকে মিক্সড করেছি ৷ আমার মনে হয়েছে, আমি সবসময় অন্যের জন্য মিউজিক বানিয়েছি ৷ তাহলে মিউজিকে নিজস্বতা ধরে রাখতে আমি নিজে সুর কম্পোজ করা শুরু করি ৷"
আজকের রহমান অনেক গানে সুর দিয়েছেন, গেয়েছেন তবে 'রোজা' ছবির গান করার সময় তিনি ভেবেছিলেন, এটাই হয়তো শেষ ৷ এক সাক্ষাৎকারে রহমান বলেন, "আমার কাছে মণিরত্নের ছবি এক বড় উপহার ৷ আমার মনে হয়, মণির জন্য আমি কিছু অসাধারণ গান বানাব ৷ আমি রোজা গানে এমন অনেক কিছু ব্যবহার করি যা আগে কখনও করিনি ৷ তারপর মনে হয়েছিল এটাই আমার হয়তো শেষ ছবি হবে ৷ কিন্তু সত্যি কথা বলতে হয়েছে তার বিপরীত ঘটনা ৷ আমি আরও ধার নিই নিজের স্টুডিয়ো তৈরি করতে ৷ তারপরেই তৈরি হয় রোজা জানেমন গান ৷" প্রথম তামিল অ্যালবাম হিসাবে রোজা ছবির গান ফিরতে থাকে লোকের মুখে মুখে ৷ সাফল্যের সিঁড়িতে পা রেকে এআর রহমান এগোতে থাকেন শিখরের দিকে ৷