ETV Bharat / state

হিমঘর ঠাসা আলু, উঠছে না দাম; মাথায় হাত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের

আলুর ফলন বেশি হওয়ায়, এবার সমস্যায় পড়েছেন কৃষক থেকে ব্যবসায়ী সকলে ৷ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ভিনরাজ্যেও ফলন বেশি হয়েছে এ বছর ৷ ফলে রফতানিও হচ্ছে না ৷ আর দুইয়ের জেরে দাম উঠছে না আলুর ৷ এমনকি হিমঘরে প্রয়োজনের বেশি আলু মজুত হয়ে রয়েছে ৷ যার ফলে এবার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষক থেকে ব্যবসায়ী সবাই ৷

Farmers are facing losses due to non-receipt of potato prices in hooghly
হিমঘর ঠাঁসা আলু, চাহিদা কম থাকায় উঠছে না দাম; মাথায় হাত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের
author img

By

Published : Jul 28, 2021, 8:34 PM IST

হুগলি, 28 জুলাই : আলুর দাম আকাশছোঁয়া হলে হাত পোড়ে আম জনতার ৷ কিন্তু, এবার ফলন ভাল হওয়ায় সেভাবে দাম ওঠেনি আলুর ৷ আর তাই এবার কপাল পুড়ছে ব্য়বসায়ী এবং কৃষকদের ৷ আলুর দাম নিয়ে এবার উদ্বেগ বেড়েছে চাষি থেকে ব্যবসায়ী সবার মধ্যে । গত বছরে করোনা মধ্যে আলুর দাম ছিল আকাশছোঁয়া । কিন্তু এ বছর বাজারে আলুর দাম নেই । যে পরিমাণ আলু হিমঘরে মজুত রয়েছে তাতে বেশি দাম পাওয়া কার্যত অসম্ভব । এর উপর উত্তরপ্রদেশ সহ অন্যান্য রাজ্যে আলু’র ফলন ভাল হয়েছে । ফলে অন্য রাজ্যেও আলুর চাহিদা তেমন একটা নেই । আর তাই মাথায় হাত পড়েছে হুগলির আলু ব্যবসায়ীদের ৷

হুগলি জেলায় 91 শতাংশ আলু হিমঘরে মজুত করা হয় । যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র 31 শতাংশ আলু বাজারে বেরিয়েছে । বাকি 60 শতাংশ এখনও হিমঘরেই রয়েছে ৷ এই বিপুল পরিমাণ আলু ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়া কঠিন বলে মত ব্যবসায়ীদের । এই পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার আবেদন জানানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের তরফে । তাদের আর্জি, এই পরিস্থিতিতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার আলু অন্য রাজ্যে অথবা বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা করুক । তা নাহলে হিমঘরে মজুত আলু নষ্ট যেমন হবে ৷ তেমনি ক্ষতির মুখে পড়বে চাষি থেকে ব্যবসায়ী সবাই ।

এছাড়াও সরকারকে আলুর জন্য হিমঘর ভাড়ার ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হয় । ফলে বাজারে আলু না বেরোলে সংকটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে ৷ তার উপর সরকার এ বছর কোনও আলু কেনেনি । আলুর দাম নিয়ে এবং হিমঘরে প্রয়োজনের থেকে বেশি আলু মজুত থাকার এই সমস্যা এখনই কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিপণন দফতর ৷ তবে, গতবারের তুলনায় আলু দাম অনেকটাই কম আছে । পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও নির্দেশিকা আসেনি এ নিয়ে । যেভাবে নির্দেশ আসবে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে জেলা কৃষি বিপণন দফতরের তরফে ।

আরও পড়ুন : পাকা ধানে মই ঝড়বৃষ্টির, ক্ষতির মুখে বীরভূমের চাষিরা

হুগলি জেলায় এ বছর 1 কোটি 10 লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে । যার মধ্যে প্রায় সাড়ে বাহাত্তর লক্ষ মেট্রিক টন বা 15 কোটি বস্তা আলু হিমঘরে মজুত করা হয় । জমুত করা আলুর মধ্যে 50 লক্ষ মেট্রিক টন এখনও হিমঘরে রয়েছে । আগামী 5 মাসে খুব বেশি হলে 40 লক্ষ মেট্রিক টন আলু বাজারে ছাড়া যাবে । ফলে আরও 10-12 লক্ষ মেট্রিক টন আলু হিমঘরে থেকে যাবে । ডিসেম্বর মাসে হিমঘর বন্ধ হওয়ার আগে সব আলু বের করে নিতে হবে । বর্তমানে পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলু 450 টাকা বস্তা ও খুচরো বাজারে প্রতি কেজি 13 টাকায় বিক্রি হচ্ছে । চন্দ্রমুখী আলু পাইকারি বাজারে 650 টাকা ও খুচরো বাজারে 17 টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৷ এর পর আলুর দাম আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে ।ফলে আখেরে সমস্যায় পড়বেন প্রান্তিক কৃষকরা । এ বছরে 5-6 হাজার টাকায় আলুর বীজ কিনতে হয়েছে । এক কেজি আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে 7 টাকা করে । কিন্তু সেই খরচ তোলা আর সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা ।

আরও পড়ুন : বৃষ্টির জেরে কাঁকসায় সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি

চাষিদের দাবি, যে পরিমাণে আলুর বীজ ও সার খরচ করে চাষ করা হয়েছে । তাতে খরচ ওঠেনি । এখন বাজারের বস্তা প্রতি 260 করে দাম পাচ্ছেন কৃষকরা । রাজ্যের বাইরে আলু না গেলে দাম পাওয়া যাবে না বলেই মনে জানাচ্ছেন তাঁরা । এবার অনেক কৃষক নিজেরাই আলু হিমঘরে রেখেছে । ফলে এতো খরচ করার পর আলু দাম না পাওয়া গেলে ব্যাপক ক্ষতি হবে কৃষকদের ৷

হিমঘর ঠাসা আলু, উঠছে না দাম; মাথায় হাত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের

রাজ্যের প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এবার আলু উৎপাদন বেশি হয়েছে গতবারের তুলনায় । সেই তুলনায় বাইরের রাজ্যে আলু রফতানিও কম হয়েছে । উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, গুজরাত সহ যে সব রাজ্যে আলু হয়, সেখানেও ফলন ভাল হয়েছে । তাই এ রাজ্যের আলুর চাহিদা কম । বর্তমানে মজুত আলুর অধিকাংশই কৃষকদের । কৃষকরা আলুর দাম না পেলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে । এমনিতেই করোনার সময় মানুষের হাতে কাজ নেই ৷ কৃষকদের হাতে টাকা না থাকলে আগামী দিনে চাষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে । এই পরিস্থিতিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে । আমরা বলেছি মিড ডে মিলে আলু বাড়াতে । সরকার সেই কথা শুনে এক কিলোর পরিবর্তে দু’কিলো করে আলু দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে । ভিন রাজ্যে আলু রফতানির ক্ষেত্রে পরিবহনে ভর্তুকি বাড়াতে হবে । এটা শুধু রাজ্যের বিষয় নয়, কেন্দ্রকেও ভাবতে হবে । কেন্দ্রীয় সরকারকে বিদেশে আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে ।’’

হুগলি, 28 জুলাই : আলুর দাম আকাশছোঁয়া হলে হাত পোড়ে আম জনতার ৷ কিন্তু, এবার ফলন ভাল হওয়ায় সেভাবে দাম ওঠেনি আলুর ৷ আর তাই এবার কপাল পুড়ছে ব্য়বসায়ী এবং কৃষকদের ৷ আলুর দাম নিয়ে এবার উদ্বেগ বেড়েছে চাষি থেকে ব্যবসায়ী সবার মধ্যে । গত বছরে করোনা মধ্যে আলুর দাম ছিল আকাশছোঁয়া । কিন্তু এ বছর বাজারে আলুর দাম নেই । যে পরিমাণ আলু হিমঘরে মজুত রয়েছে তাতে বেশি দাম পাওয়া কার্যত অসম্ভব । এর উপর উত্তরপ্রদেশ সহ অন্যান্য রাজ্যে আলু’র ফলন ভাল হয়েছে । ফলে অন্য রাজ্যেও আলুর চাহিদা তেমন একটা নেই । আর তাই মাথায় হাত পড়েছে হুগলির আলু ব্যবসায়ীদের ৷

হুগলি জেলায় 91 শতাংশ আলু হিমঘরে মজুত করা হয় । যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র 31 শতাংশ আলু বাজারে বেরিয়েছে । বাকি 60 শতাংশ এখনও হিমঘরেই রয়েছে ৷ এই বিপুল পরিমাণ আলু ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়া কঠিন বলে মত ব্যবসায়ীদের । এই পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার আবেদন জানানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের তরফে । তাদের আর্জি, এই পরিস্থিতিতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার আলু অন্য রাজ্যে অথবা বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা করুক । তা নাহলে হিমঘরে মজুত আলু নষ্ট যেমন হবে ৷ তেমনি ক্ষতির মুখে পড়বে চাষি থেকে ব্যবসায়ী সবাই ।

এছাড়াও সরকারকে আলুর জন্য হিমঘর ভাড়ার ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হয় । ফলে বাজারে আলু না বেরোলে সংকটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে ৷ তার উপর সরকার এ বছর কোনও আলু কেনেনি । আলুর দাম নিয়ে এবং হিমঘরে প্রয়োজনের থেকে বেশি আলু মজুত থাকার এই সমস্যা এখনই কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিপণন দফতর ৷ তবে, গতবারের তুলনায় আলু দাম অনেকটাই কম আছে । পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও নির্দেশিকা আসেনি এ নিয়ে । যেভাবে নির্দেশ আসবে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে জেলা কৃষি বিপণন দফতরের তরফে ।

আরও পড়ুন : পাকা ধানে মই ঝড়বৃষ্টির, ক্ষতির মুখে বীরভূমের চাষিরা

হুগলি জেলায় এ বছর 1 কোটি 10 লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে । যার মধ্যে প্রায় সাড়ে বাহাত্তর লক্ষ মেট্রিক টন বা 15 কোটি বস্তা আলু হিমঘরে মজুত করা হয় । জমুত করা আলুর মধ্যে 50 লক্ষ মেট্রিক টন এখনও হিমঘরে রয়েছে । আগামী 5 মাসে খুব বেশি হলে 40 লক্ষ মেট্রিক টন আলু বাজারে ছাড়া যাবে । ফলে আরও 10-12 লক্ষ মেট্রিক টন আলু হিমঘরে থেকে যাবে । ডিসেম্বর মাসে হিমঘর বন্ধ হওয়ার আগে সব আলু বের করে নিতে হবে । বর্তমানে পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলু 450 টাকা বস্তা ও খুচরো বাজারে প্রতি কেজি 13 টাকায় বিক্রি হচ্ছে । চন্দ্রমুখী আলু পাইকারি বাজারে 650 টাকা ও খুচরো বাজারে 17 টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৷ এর পর আলুর দাম আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে ।ফলে আখেরে সমস্যায় পড়বেন প্রান্তিক কৃষকরা । এ বছরে 5-6 হাজার টাকায় আলুর বীজ কিনতে হয়েছে । এক কেজি আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে 7 টাকা করে । কিন্তু সেই খরচ তোলা আর সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা ।

আরও পড়ুন : বৃষ্টির জেরে কাঁকসায় সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি

চাষিদের দাবি, যে পরিমাণে আলুর বীজ ও সার খরচ করে চাষ করা হয়েছে । তাতে খরচ ওঠেনি । এখন বাজারের বস্তা প্রতি 260 করে দাম পাচ্ছেন কৃষকরা । রাজ্যের বাইরে আলু না গেলে দাম পাওয়া যাবে না বলেই মনে জানাচ্ছেন তাঁরা । এবার অনেক কৃষক নিজেরাই আলু হিমঘরে রেখেছে । ফলে এতো খরচ করার পর আলু দাম না পাওয়া গেলে ব্যাপক ক্ষতি হবে কৃষকদের ৷

হিমঘর ঠাসা আলু, উঠছে না দাম; মাথায় হাত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের

রাজ্যের প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এবার আলু উৎপাদন বেশি হয়েছে গতবারের তুলনায় । সেই তুলনায় বাইরের রাজ্যে আলু রফতানিও কম হয়েছে । উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, গুজরাত সহ যে সব রাজ্যে আলু হয়, সেখানেও ফলন ভাল হয়েছে । তাই এ রাজ্যের আলুর চাহিদা কম । বর্তমানে মজুত আলুর অধিকাংশই কৃষকদের । কৃষকরা আলুর দাম না পেলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে । এমনিতেই করোনার সময় মানুষের হাতে কাজ নেই ৷ কৃষকদের হাতে টাকা না থাকলে আগামী দিনে চাষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে । এই পরিস্থিতিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে । আমরা বলেছি মিড ডে মিলে আলু বাড়াতে । সরকার সেই কথা শুনে এক কিলোর পরিবর্তে দু’কিলো করে আলু দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে । ভিন রাজ্যে আলু রফতানির ক্ষেত্রে পরিবহনে ভর্তুকি বাড়াতে হবে । এটা শুধু রাজ্যের বিষয় নয়, কেন্দ্রকেও ভাবতে হবে । কেন্দ্রীয় সরকারকে বিদেশে আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে ।’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.