হুগলি, 3 নভেম্বর: দীপাবলি ভাইফোঁটার আগেই পেঁয়াজের দামে আগুন । ফলে জেরবার সাধারণ মানুষজন । অথচ হুগলির একটি বড় অংশে শীতকালীন ও বর্ষাকালীন পেঁয়াজের চাষ হয় । তারপরেও জেলায় পেঁয়াজের এত দাম নিয়ে অভিযোগের সুর চাষীদের একাংশের গলায় ৷ তাঁদের দাবি, পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশাসন উদাসীন ৷ জেলায় উৎপন্ন পেঁয়াজ যথেষ্ট পরিমাণে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বলেই দাম বাড়ছে ৷ সরকারিভাবে যদি আলু সংরক্ষণের মতো পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হয় তাহলে আগামী দিনে এই সমস্যা আর থাকবে না ৷
অন্যদিকে, হুগলি জেলা কৃষি বিপণন সূত্রে খবর এই সময় নাসিকের পেঁয়াজ আমদানি নেই তাই দাম বেড়েছে । তবে আশা করা যায় এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের আমদানি ঠিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তাহলে অনেকটাই স্বাভাবিক দাম হয়ে যাবে ।
হুগলি জেলায় বলাগড় ও পোলবা-সহ বেশ কিছু ব্লকে পেঁয়াজের চাষ হয় । শুধুমাত্র হুগলিতেই 3 হাজার 786 হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয় । বিশেষত নভেম্বর থেকে পেঁয়াজ রোপণ করা হয় । ফেব্রুয়ারি মাসে ফলন হয় । যেটা দিয়ে বছরে অনেকটাই পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করা যায় । কিন্তু সারাবছর চাহিদা পূরণ করা যায় না । তার জন্য নাসিকের পেঁয়াজের উপরই ভরসা করতে হয় । পুজোর খুচরো বাজারে 30 থেকে 35 টাকা কেজি পেঁয়াজের দাম থাকলেও তা বেড়ে এখন দাম হয়েছে 60 থেকে 70 টাকা । যদি এভাবে পেঁয়াজের আমদানি না থাকে আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা । হুগলি জেলায় কিছু বছর আগে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ শুরু হয় । খুব বেশি সংখ্যক না হলেও বেশি কিছু চাষী এখন বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ করেন ৷
আরও পড়ুন : মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে খুচরো বাজারে বাড়তি মজুত পেঁয়াজ ছাড়ছে কেন্দ্র
এই বিষয়ে হুগলির এক পেঁয়াজ চাষী বাবলু সাঁতরা বলেন, "শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে উপযুক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই । আলুর মতো পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে এই দাম বাড়ার মতো পরিস্থিত তৈরি হত না । আর বর্ষাকালীন পেঁয়াজ বর্ষার জলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই চাষীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে । সরকারি ভর্তুকি পেলে চাষীরা এই চাষে আগ্রহী হতে পারে ।"
হুগলি জেলা উদ্যান পালন বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শুভাশিস গিরির কথায়, "শীতকালীন সময়ে পেঁয়াজের জোগান মেটানো সম্ভব হলেও এই সময় নাসিকের পেঁয়াজের উপর ভরসা করতে হয় । বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি কম তাই দাম বেড়েছে । যতক্ষণ না নতুন পেঁয়াজ উঠছে ততদিন এইরকম পরিস্থিতি চলতে থাকবে । পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যাপারে জেলায় সরকারিভাবে অনেক জায়গায় করা হয়েছে । আমাদের জেলায় 2012 সাল থেকে 80 থেকে 90টি সংরক্ষণের জন্য ঘর করা হয়েছে সরকারিভাবে । প্রতিবছর সংরক্ষণের জন্য ঘর করে দেওয়া হয় চাষীদের ।"
শেওড়াফুলি বাজারের পাইকারি কাঁচা সবজি বাজারের সম্পাদক সুকল্যাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন,"পুজোর আগে যে দাম ছিল ।পুজোর পর তা দ্বিগুণ হয়ে যায় । মূলত নাসিকের উৎপাদন কম তাই দামটা বেশি আছে । এখন আমদানি আবার চালু হয়েছে । শেওড়াফুলি পাইকারি বাজারে 54 টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে । এতটা দাম বাড়ার কারণ চাহিদার তুলনায় কম আমদানি হচ্ছে । তবে আশা আছে দাম আর বাড়বে না ।"
আরও পড়ুন : পেঁয়াজের জমিতে কর্মরত শ্রমিকদের চোখে কৃমি ! আতঙ্কে কাবু মহারাষ্ট্রের গ্রাম