চন্দননগর, 19 জুলাই: পোর্টেবল জ্যামার দিয়ে নেটওয়ার্ক বন্ধ করে ডাকাতি করত বিহারের তিন দুষ্কৃতী । প্রায় দু'বছর আগেকার ঘটনা । চন্দননগর লক্ষ্মীগঞ্জের এক স্বর্ণঋণদানকারী সংস্থার কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে সমস্ত স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা । পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে তিনজন । এদের কাছ থেকে সোনার গহনা, আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও জ্যামার-সহ একাধিক জিনিসপত্র উদ্ধার হয় । তদন্ত নেমে পুলিশ জানতে পারে এরা কুখ্যাত ডাকাত । ভিন রাজ্যেও এদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে । এই ঘটনায় চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট ডাকাতি ও খুনের মামলা দায়ের করে । সেই মামলাতেই সোমবার চুঁচুড়া আদালত তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করে। পরদিন তাদের যাবজ্জীবনের সাজা ঘোষণা করা হয়। সমস্ত তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে অল্পদিনের মধ্যে এই ধরনের মামলার নিষ্পত্তিকে বড়সড় সাফল্য বলে মনে করছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট ।
এই বিষয়ে সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, "অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইলেকট্রনিকস গ্যাজেট-সহ একাধিক প্রমাণ ছিল । ডাকাতির সময় পোর্টেবল জ্যামার-সহ ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ডিটেক্টর ব্যবহার করে । জিপিএস ট্র্যাকারের সাহায্য নিয়ে সোনা নিয়ে যাওয়া গাড়ি সন্ধান করত । জ্যামার ব্যবহার করায় ফোন হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ থাকলেও সিসি ক্যামেরা চালু ছিল । স্বর্ণ ঋণ সংস্থার হেড অফিস বিশাখাপত্তম থেকে সিসি ক্যামেরা দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয় । তদন্তে নেমে একাধিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণার নির্দেশ দেয় আদালত ।"
আগ্নেয়াস্ত্র-সহ উন্নত টেকনোলজির মাধ্যমে ডাকাতি করেছিল ভিন্ন রাজ্যের তিন দুষ্কৃতী। পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। পালটা গুলি চালায় পুলিশও। পালাতে ব্যর্থ হলে পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরে ফেলে। এদের বিরুদ্ধে একাধিক রাজ্যে ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে । মূলত স্বর্ণঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতি করাই লক্ষ্যে ছিল এদের । এই ঘটনায় তিন ডাকাতকে ধরে ফেলে পুলিশ। এদের প্রত্যেকেই বিহারে বাসিন্দা। প্রায় দু'বছর ধরে চুঁচুড়া আদালতে মামলা চলছিল । তাতেই মঙ্গলবার তিনজন দোষীকে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে চুঁচুড়া আদালত ৷
2021 সালের 21 সেপ্টেম্বর চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে বেসরকারী স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতি হয় । পুলিশকে এড়াতে পোর্টেবল জ্যামার ও রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ডিটেক্টর (RFID)-এর সাহায্য নিয়েছিল ডাকাতরা। পরিকল্পনা করেই যে ডাকাতি করতে এসেছিল দলটি, সেটা পরিষ্কার। সিসিটিভি ক্যামেরা মাধ্যমে ডাকাতির ঘটনা দেখতে পায় ঋণদানকারী সংস্থা ম্যানেজার। খবর দেওয়া হয় চন্দননগর থানায় । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অতনু মাঝি। গয়না ও টাকা লুঠের পর ডাকাতদল পালাতে গিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশ পালটা গুলি চালিয়ে প্রথমে চন্দননগর থেকে দুই দুষ্কৃতীকে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করে। পরে চুঁচুড়া তুলোপট্টি ঘাটের কাছে এক দুষ্কৃতীকে পালানোর সময় ধরে ফেলে চুঁচুড়া থানার পুলিশ। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা শাখা তদন্ত নেমে জানতে পারে এরা বিহারের সোনপুর, সেখপুরা ও বৈশালী জেলার বাসিন্দা ।
জানা গিয়েছে, নানা প্রযুক্তিবিদ্যা অবলম্বন করে দুষ্কৃতীমূলক কাজ করত ওই ডাকাতদল। অনলাইনে বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থার রেটিং দেখে ডাকাতি করত । এর আগে আসানসোলে 18 লক্ষ টাকার ডাকাতি করে তারা। ধৃত করনের বিরুদ্ধে বিহারে এটিএম এর ক্যাশ গাড়ি লুট ও খুনের অভিযোগ রয়েছে । গুড্ডুর বিরুদ্ধে হরিয়ানায় একাধিক মামলা রয়েছে । পুলিশ এদের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও খুনের চেষ্টার অপরাধে 307, 392, 394, 397, 326 আইপিসি এবং 25/(1) বি ও 27 অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে । টানা দু'বছর মামলা চলার পর সোমবার চুঁচুড়া আদালতের ফার্স্টট্র্যাক কোর্টের বিচারক শিবশঙ্কর ঘোষ তিন দুষ্কৃতীকে দোষী সাব্যস্ত করেন । মঙ্গলবার তাদের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করা হয় ।
এত কম সময়ের মধ্যে এই ধরনের মামলার সমাধানে বড়সড় সাফল্য বলে মনে করছেন চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশের আধিকারিকরা । মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিশ কমিশনার পি জাভালগি জানান, সব সোনা উদ্ধার করা হয়েছে । জ্যামার, আগ্নেয়াস্ত্র-সহ নানা জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে । সমস্ত আদালতে দাখিল করা হয়েছে । তার ভিত্তিতে সাজা ঘোষণা হয়েছে ।