চন্দননগর, 30 সেপ্টেম্বর : করোনার জেরে অন্যদের মতোই ক্ষতিগ্রস্ত চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা । রোজগারের তাগিদে বেশিরভাগ শিল্পীই পেশা পরিবর্তন করেছেন । দুর্গাপুজোর সময়ই আলোকশিল্পীরা সারা বছরের রোজগারের আশা করেন । কিন্তু গত বছর থেকে সেভাবে অর্ডার না পাওয়ায় সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছিল ৷ তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় ফের ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে চন্দননগরের আলোকশিল্প ৷
জাদু ও মেকানিজ়মের জন্যই চন্দননগরের আলোকসজ্জার জগৎ জোড়া নাম । বিভিন্ন চলমান আলোর মডেলের তৈরি করেন এখানকার শিল্পীরা ৷ এবারে তার মধ্যে নতুন চমক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ও তাঁর উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি আলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । যেখানে দুর্গার রূপক হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলে ধরা হয়েছে ৷ তাঁর বিভিন্ন প্রকল্পগুলিকে দশহাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেখানে তিনি ভ্যাকসিন দিয়ে করোনাসুরকে বধ করছেন ৷ এই ছবিই ফুটিয়ে তুলেছেন অঙ্কনশিল্পী অভিজিৎ দাস ৷ তার উপরেই লাইট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আলোকসজ্জা ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja Special : রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত পুজো এবার 351 বছরে পা দিল
চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা সাধারণত দুর্গাপূজার সময় নতুন থিমের আলোকশিল্প সৃষ্টি করেন । যা দিয়ে সারাবছর কালি, লক্ষ্মী, জগদ্ধাত্রী ও কার্তিক-সহ একাধিক উৎসবে এই আলো ভাড়া দেন । তা থেকেই অর্থ উপার্জনে করে চলে সারাবছর ।
সরকারি মেলা ও বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে চন্দননগরের আলোর চাহিদা রয়েছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকারি প্রকল্পের আলোকসজ্জা ইতিমধ্যেই বেশ ভাল সাড়া জাগিয়েছে বলে জানাচ্ছেন আলোকশিল্পীরা । তবে আলোর জাদু বর্তমানে শুধু চন্দননগরেই সীমাবদ্ধ নেই । চন্দননগরের দেখানো পথেই ব্যারাকপুর -সহ একাধিক জায়গার আলোকশিল্পীরাও নতুন নতুন থিম তৈরি করছেন ৷
প্রথমে থিমের নকশা তৈরি করেন অঙ্কন শিল্পীরা । তারপর হাতের যাদুতে ক্যাটালগ থেকে বিশাল মডেল আঁকেন । প্লাস্টিক বোর্ডের সেই চিত্রকে রঙের মাধ্যমে রূপ দেন রংশিল্পীরা । আলোকশিল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক রকমের শিল্পীদের পরিশ্রম থাকে ৷ সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ হয় প্রতিটি আলোকসজ্জা ৷
আরও পড়ুন : চন্দননগরের আলো ডুবেছে "অন্ধকারে"
ছবির নকশার পরই এলইডি বোর্ডে রঙের কাজ হয় । পোলবার রাজহাটের শিল্পী সমীর পাকিরা সারাবছর এভাবেই চন্দননগরের লাইটের বোর্ডে রং করে যান ।শেষ বেলায় তিনিও জোর কদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । মুখ্যমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের এই সব ছবিতে আলো লাগানোর কাজ চলছে ৷ এর পাশাপাশি দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথী ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পগুলি আলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা ।
আলোকশিল্পের ডিজাইনার অভিজিৎ দাস জানান, চন্দননগরের আলোকশিল্পে আগে যে পরিমাণ কাজ হত, বিগত দেড় বছর ধরে তা অনেক সীমিত হয়ে গিয়েছে । এবছর বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প দিয়ে আলোর গেট তৈরি হয়েছে । দুয়ারে সরকার, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ও স্বাস্থ্যসাথী প্রভৃতি প্রকল্প আমাদের শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছি । ভ্যাকসিনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী অসুরকে বধ করেছেন সেটাও এবারের আলোকসজ্জায় দেখানো হয়েছে । আগামী দিনে করোনা মুক্ত হলে আবার পুনরুজ্জীবন পাবে চন্দননগরের আলোকশিল্প ।
আরও পড়ুন : Durga puja : এবছর দেবীর কোন বাহনে আগমন ও গমন? জেনে নিন কি প্রভাব পড়তে চলেছে মানব জীবনে
আলোকশিল্পের বোর্ড রং করার মাঝেই শিল্পী সমীর পাকিরা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর এই ছবি আঁকার পর আমার কাছে রং হয় । এছাড়াও চন্দননগরের আলোকশিল্পের বিভিন্ন আলোর গেট রং করা হয় । এ বছর শিল্পীদের অবস্থা খুব খারাপ । আমাদের কারখানায় 20 থেকে 25 জন শিল্পী কাজ করত । এখন 6 জন শিল্পী কাজ করছে ।
আরও পড়ুন : DurgaPuja : শরিক বিবাদে জৌলুসহীন 405 বছরের চিড়িমারসাই নন্দীবাড়ির পুজো