ETV Bharat / state

Kali Puja 2023: আর নয় পশুবলি, সিদ্ধান্ত হংসেশ্বরী মন্দির কর্তৃপক্ষের - Kali Puja 2023

Bansberia Hanseshwari Temple: এবার থেকে বন্ধ হয়ে গেল বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দিরের বলি প্রথা ৷ "আগে যা হওয়ার হয়েছে, আর নয় পশুবলি সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ছাগ বলি আর হবে না ৷" ইটিভি ভারতকে এমনই জানালেন বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বসন্ত চট্টোপাধ্যায় ৷

বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দিরে বন্ধ হল বলি প্রথা
Kali Puja 2023
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 8, 2023, 3:20 PM IST

ছাগ বলি আর হবে না হংসেশ্বরী মন্দিরে

বাঁশবেড়িয়া, 8 নভেম্বর: এ বছর থেকে কালীপুজোয় বলি প্রথা রদ করল বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দিরের সেবাইতরা। এখানে হংসেশ্বরী কালী মূর্তির শান্ত রূপ বিরাজমান। সারাবছর শান্ত রূপেই পুজো হয় দেবীর। কিন্তু কালীপুজোয় এলোকেশী উগ্ররূপে পুজো হয় মায়ের। এখানে পশুবলির প্রচলন রয়েছে প্রায় 208 বছর ধরে। শুধু কালীপুজোর দিন নয়, বছরের বিভিন্ন সময় বলি দেওয়া হত হংসেশ্বরী মা'কে। পশুবলি নৃশংসতার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন মন্দিরের পুরোহিত।

পুরোহিতের কাছ থেকে ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, 1799 খ্রিস্টাব্দে হংসেশ্বরীর মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। তৎকালীন সময় স্বপ্নাদেশ পান রাজা নৃসিংহদেব। তিনি মা হংসেশ্বরীর মন্দির তৈরি করার সংকল্প নেন। কিন্তু তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। পরবর্তীকালে তাঁর স্ত্রী রানি শঙ্করীদেবী এই কাজ সম্পন্ন করেন। অভূতপূর্ব মন্দির স্থাপন করা হয় এখানে। ষটচক্রভেদ প্রণালীতে এই মন্দির নির্মিত হয়। মন্দির 70 ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ছ'তলা ও 3টি চূড়া বিশিষ্ট।

মানবদেহের ঈরা, পিঙ্গলা, বজ্রাক্ষ, সুষুম্না ও চিত্রিনী নামক যে পাঁচটি নারী বিদ্যমান আছে, সেই অনুযায়ী মন্দির তৈরি হয়েছিল। মন্দিরের চারপাশের প্রতিটি চূড়ার নীচে একটি করে কালো শিবলিঙ্গ রয়েছে। উপরে একতলায় একটি সাদা শিবলিঙ্গ পূজিত হয়ে আসছে। প্রতিটি চূড়াই পদ্মের আকারের এবং মূল বেদি গোলাকার প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো। পঞ্চমুণ্ডি আসনের উপর অধিষ্ঠিত দেবী। মূল মন্দিরে কুণ্ডলিনী শক্তিরূপে দেবী হংসেশ্বরীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

দেবীর শরীরের রং নীল, বামহাতে রয়েছে খড়্গ ও নরমুণ্ড ৷ ডানহাতে অভয়মুদ্রা ও শঙ্খ। বছরে 364 দিন দেবীর শান্ত মূর্তিরূপে থাকা নিত্যপুজো করা হয় ৷ কেবল বাৎসরিক পুজোর দিন রূপোর মুখোশ ও সোনার জিভ পড়িয়ে এলোকেশী উগ্রমূর্তিরূপে পুজো করা হয়। তৎকালীন সময়ে বেনারস থেকে ভেসে আসা নিম কাঠের এই মূর্তি নীলাভ বর্ণের চতুর্ভূজা মাকে পুজো করা হয়। এই মন্দিরের বিশেষ আকর্ষণ হল পাশে থাকা অনন্ত বাসুদেবের টেরাকোটার মন্দির। যা দেখতে বহু মানুষ আকর্ষিত হন।

এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার দুর্গা, কালী, শিব, কৃষ্ণ, রাসলীলা, নৌকা বিলাস এবং নারায়ণের অনন্তশয্যা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা আছে। তবে বর্তমানে এইসব টেরাকোটার কাজ নষ্ট হতে বসেছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ কিছুটা রক্ষণাবেক্ষণ করলেও তা সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়নি। মন্দিরের প্রবেশে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহুকাল আগে আসল বিষ্ণুমূর্তি ছিল সেটাও আগেই চুরি হয়ে যায়।

হংসেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বসন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সারাবছর শান্ত থাকলেও বাৎসরিক কালীপুজোর দিন এক রাতের জন্য তিনি এলোকেশী। রাজবেশ পড়ানো হবে তাঁকে। রূপোর মুখোশ ও সোনার জিভ পড়ানো হবে। পুজোর পরদিন ভোরবেলা এই রাজবেশ খুলে দেওয়া হয় ৷ আগে যা হওয়ার হয়েছে, তবে আর নয় পশুবলি ৷ সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ছাগ বলি আর হবে না ৷"

আরও পড়ুন: রায়গঞ্জে বন্দর আদি করুণাময়ী মন্দিরে কালীপুজোর রাতে নূপুরের আওয়াজ শোনা যায়

ছাগ বলি আর হবে না হংসেশ্বরী মন্দিরে

বাঁশবেড়িয়া, 8 নভেম্বর: এ বছর থেকে কালীপুজোয় বলি প্রথা রদ করল বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দিরের সেবাইতরা। এখানে হংসেশ্বরী কালী মূর্তির শান্ত রূপ বিরাজমান। সারাবছর শান্ত রূপেই পুজো হয় দেবীর। কিন্তু কালীপুজোয় এলোকেশী উগ্ররূপে পুজো হয় মায়ের। এখানে পশুবলির প্রচলন রয়েছে প্রায় 208 বছর ধরে। শুধু কালীপুজোর দিন নয়, বছরের বিভিন্ন সময় বলি দেওয়া হত হংসেশ্বরী মা'কে। পশুবলি নৃশংসতার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন মন্দিরের পুরোহিত।

পুরোহিতের কাছ থেকে ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, 1799 খ্রিস্টাব্দে হংসেশ্বরীর মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। তৎকালীন সময় স্বপ্নাদেশ পান রাজা নৃসিংহদেব। তিনি মা হংসেশ্বরীর মন্দির তৈরি করার সংকল্প নেন। কিন্তু তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। পরবর্তীকালে তাঁর স্ত্রী রানি শঙ্করীদেবী এই কাজ সম্পন্ন করেন। অভূতপূর্ব মন্দির স্থাপন করা হয় এখানে। ষটচক্রভেদ প্রণালীতে এই মন্দির নির্মিত হয়। মন্দির 70 ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ছ'তলা ও 3টি চূড়া বিশিষ্ট।

মানবদেহের ঈরা, পিঙ্গলা, বজ্রাক্ষ, সুষুম্না ও চিত্রিনী নামক যে পাঁচটি নারী বিদ্যমান আছে, সেই অনুযায়ী মন্দির তৈরি হয়েছিল। মন্দিরের চারপাশের প্রতিটি চূড়ার নীচে একটি করে কালো শিবলিঙ্গ রয়েছে। উপরে একতলায় একটি সাদা শিবলিঙ্গ পূজিত হয়ে আসছে। প্রতিটি চূড়াই পদ্মের আকারের এবং মূল বেদি গোলাকার প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো। পঞ্চমুণ্ডি আসনের উপর অধিষ্ঠিত দেবী। মূল মন্দিরে কুণ্ডলিনী শক্তিরূপে দেবী হংসেশ্বরীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

দেবীর শরীরের রং নীল, বামহাতে রয়েছে খড়্গ ও নরমুণ্ড ৷ ডানহাতে অভয়মুদ্রা ও শঙ্খ। বছরে 364 দিন দেবীর শান্ত মূর্তিরূপে থাকা নিত্যপুজো করা হয় ৷ কেবল বাৎসরিক পুজোর দিন রূপোর মুখোশ ও সোনার জিভ পড়িয়ে এলোকেশী উগ্রমূর্তিরূপে পুজো করা হয়। তৎকালীন সময়ে বেনারস থেকে ভেসে আসা নিম কাঠের এই মূর্তি নীলাভ বর্ণের চতুর্ভূজা মাকে পুজো করা হয়। এই মন্দিরের বিশেষ আকর্ষণ হল পাশে থাকা অনন্ত বাসুদেবের টেরাকোটার মন্দির। যা দেখতে বহু মানুষ আকর্ষিত হন।

এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার দুর্গা, কালী, শিব, কৃষ্ণ, রাসলীলা, নৌকা বিলাস এবং নারায়ণের অনন্তশয্যা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা আছে। তবে বর্তমানে এইসব টেরাকোটার কাজ নষ্ট হতে বসেছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ কিছুটা রক্ষণাবেক্ষণ করলেও তা সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়নি। মন্দিরের প্রবেশে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহুকাল আগে আসল বিষ্ণুমূর্তি ছিল সেটাও আগেই চুরি হয়ে যায়।

হংসেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বসন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সারাবছর শান্ত থাকলেও বাৎসরিক কালীপুজোর দিন এক রাতের জন্য তিনি এলোকেশী। রাজবেশ পড়ানো হবে তাঁকে। রূপোর মুখোশ ও সোনার জিভ পড়ানো হবে। পুজোর পরদিন ভোরবেলা এই রাজবেশ খুলে দেওয়া হয় ৷ আগে যা হওয়ার হয়েছে, তবে আর নয় পশুবলি ৷ সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ছাগ বলি আর হবে না ৷"

আরও পড়ুন: রায়গঞ্জে বন্দর আদি করুণাময়ী মন্দিরে কালীপুজোর রাতে নূপুরের আওয়াজ শোনা যায়

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.