হুগলি, 23 মে: দৃষ্টিহীন মানুষদের জন্য স্মার্ট টুপি বানিয়ে চমক লাগিয়েছে চন্দননগরের ছাত্র আদিত্য রায়। এলাকারই কানাই লাল স্কুলের নবম শ্রেণীতে পড়ে সে। বাবা বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী। ফলে ছোট বেলা থেকেই বাবার ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র নিয়ে খেলাই ছিল তার নেশা। সেই নেশা থেকেই নানা রকম জিনিস তৈরি করতে শুরু করে সে । এবার সে বানিয়ে ফেলেছে দৃষ্টিহীন মানুষদের জন্য বিশেষ স্মার্ট টুপি ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল থেকে আসার পথে মাঝে মধ্যেই আদিত্যর নজরে পড়ে রাস্তায় থাকা দৃষ্টিহীন মানুষদের দিকে । তার মনে হয়, এই সকল অসহায় মানুষদের রাস্তা পারাপারে বেশি সমস্যা হবে । তার এই দেখে খারাপ লাগত । অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে কিছু একটা করার কথা ভাবে সে । সেই ভাবনা থেকেই আদিত্য বানিয়ে ফেলে রাস্তায় পরে চলার জন্য বা পারাপারের জন্য স্মার্ট টুপি । এই স্মার্ট ক্যাপ পরে অনায়াসেই রাস্তায় চলাচল করতে পারবে। এই স্মার্ট ক্যাপে থাকছে আল্ট্রা সনিক সিস্টেম। যা দিয়ে ডিভাইসের সামনে কোন বস্তু এলে তীব্র আওয়াজ হয়। আর তাতেই সতর্ক হতে পারবেন দৃষ্টিহীন মানুষেরা।
এছাড়াও টুপির মধ্যে থাকছে ব্লুটুথ হেড ফোন, জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম। এই গ্যাজেটগুলি চলবে সোলার চার্জারের মাধ্যমে । স্মার্ট ডিভাইসটি থাকছে একটি হালকা প্লাস্টিক টুপির উপর। যারা চোখে দেখতে পান না তাঁদের জন্য এটা খুবই কার্যকরী হবে বলে মনে করেছে খুদে ইঞ্জিনিয়ার। তবে সমস্ত ব্যাপারটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। স্কুল পড়ুয়া আদিত্য চায় এই প্রজেক্টকে আরও উন্নত করতে চায়। তাই তার ইচ্ছা, যদি কোনও কোম্পানি এগিয়ে আসে পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাহলে তার এই উদ্দেশ্য সফল হয়। এই স্মার্ট ক্যাপটি কিনলে গ্রাহকদের দিতে হবে 2 হাজার টাকা। যদি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে তৈরি করা হলে আরও কম খরচ পড়বে এটি। এই স্মার্ট ক্যাপের পেটেন্ট নেওয়ার চিন্তা ভাবনা রয়েছে আদিত্য ও তার পরিবারের।
এই বিষয়ে আদিত্য বলে, "বড় হয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে আমার। আল্ট্রা সোনিক সিস্টেম থেকে মোবাইল চার্জ সব কিছু আছে এই ডিভাইসে। আমি স্কুলে পড়ি । আমি নিজে বানিয়েছি বলে কিছু অসুন্দর হয়েছে। যদি কোনও কম্পানি বানায় তাহলে আরও সুন্দর হবে ।অনেকদিন ধরেই ভাবনা দৃষ্টিহীন মানুষরা যাওয়াত করতে খুব অসুবিধায় পরে। সেই কারণে আমি বানিয়েছি এটা। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য সোলার প্যানেল লাগানো। বাবার আগে ইলেকট্রিকের দোকান ছিল। বাবার থেকেই এসবের প্রতি ভালোলাগা। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে আছে।দৃষ্টিহীনদের উপকার হোক আমি চাই । এই টুপি বাজারে আসুক এটা আমিও চাই ।"
আরও পড়ুন: কাঁটা গাছের ভয়ে ঢুকছে না হাতি, হামলা থেকে ফসল বাঁচাতে বিকল্প চাষ কৃষকদের
আদিত্য-র মা দেবশ্রী রায় বলেন, "ওর নেশা টাকা পেলেই ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র কেনা। স্কুলে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানিয়ে পুরস্কার আনে। বাবার জিনিসপত্র নিয়ে খেলা করত । সময় পেলেই এসব কাজ করত । নিজে হাতে ইলেকট্রনিক জিনিস তৈরি করে গিফট করা । স্কুলের শিক্ষকরাও সহযোগীতা করেন । আমি চাই আরও ভালো কাজ করুক আদিত্য ।"