দার্জিলিং, 8 জুন : যুদ্ধ বলতেই প্রথমেই মাথায় যে ছবি ভেসে ওঠে তা হল বড় বড় কামান, বন্দুক, যুদ্ধ জাহাজ, জওয়ান ইত্যাদি । ছোট থেকে বড় ৷ যুদ্ধ বলতে মনে আসে স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশের জন্য সীমান্তে জওয়ানদের আত্মবলিদান । সেনা জওয়ানদের জীবন নিয়ে আমাদের সবার বরাবরের আগ্রহ । কীভাবে দুষ্কর, দুর্গম পরিস্থিতিতে দেশ পাহারায় রয়েছে তাঁরা । কীভাবে আগলে রেখেছে দেশের সীমান্ত । যাদের জন্য আমরা নিশ্চিন্তে বাঁচতে পারছি ৷ প্রতি মুহূর্তে এক কঠিন সংগ্রাম করে চলেছেন সেই সমস্ত বীর জওয়ানরা ৷
এবার সেনা-জওয়ানদের জীবনের ইতিহাস সহজেই চাক্ষুষ করতে পারবেন পর্যটকরা । উত্তর-পূর্ব ভারতের পাশাপাশি ভারতের বাকি সমস্ত জায়গার যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন পর্যটকরা । শুধু তাই নয়, ভারতীয় সেনার জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে যুদ্ধে ব্যবহারকারী কামান, যুদ্ধ জাহাজ থেকে বন্দুক । এমনকি শত্রুদের থেকে বাজেয়াপ্ত করা সামগ্রীও ৷ তবে এসব দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে শিলিগুড়ি থেকে কিছুটা দূরে শুকনায় । শিলিগুড়ির নাগালে এমনও একটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে তা হয়ত অনেকেরই অজানা (War Heritage Memorial Museum is the New Edition of North Bengal Tourism)।
আরও পড়ুন : Jaipur Khazana Mahal : হাঙরের দাঁত থেকে হিরে, ডায়নোসরের মল-মূত্রের হিরেতে রূপান্তর দেখা যাবে খাজানা মহলে
শিলিগুড়ি থেকে সড়কপথে দার্জিলিং যাওয়ার সময় রোহিনীর আগে শুকনা । ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি আঁকাবাকা পথ ধরে এগোলেই জঙ্গলের মাঝে পরবে সেনা ছাউনি । তার মাঝেই তৈরি করা হয়েছে সেনার ওয়ার হেরিটেজ মেমোরিয়াল মিউজিয়াম । 2022 সালের মে মাস থেকে শুরু হয় ওই মিউজিয়ামটি । প্রথমে দুটি বিভাগ নিয়ে শুরু করা হয় । তার মধ্যে একটিতে উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ের জীব বৈচিত্র্য ও অন্যটিতে কিছু ঐতিহাসিক সেনার সামগ্রী রাখা হয় । পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ওই মিউজিয়ামটিকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরার উদ্যোগ নেন ত্রিশক্তির সেনা আধিকারিকরা ।
দুটো বিভাগ থেকে বাড়িয়ে মিউজিয়ামটিকে চারটি বিভাগে করা হয় । আর তাতেই ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ইতিহাসকে সুসজ্জিত রাখা হয়েছে । এই মিউজিয়ামকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ছে, পাশাপাশি পড়ুয়াদের মধ্যেও দেশের সেনাদের বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে । পর্যটকদের আরও নাগালে নিয়ে আসতে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন ও সিকিম পর্যটনের সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে মিউজিয়ামটি ।
চারটি ব্লক থ্রি ডি অঙ্কনে সাজানো হয়েছে । গিনেস বুক ওফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের শিরোপাধারী অঙ্কন শিল্পী মিঠু রায় নিজে গোটা মিউজিয়ামটিকে কারুকার্যে সাজিয়ে তুলেছেন । জীব বৈচিত্র্যর উপর রয়েছে চোগিয়াল ব্লক ও কাঞ্চনজঙ্ঘা ব্লক । যেখানে উত্তর- পূর্ব ভারতের পশু-পাখি-ফুল-ফল-সহ সেখানকার জীব বৈচিত্র্য তুলে ধরা হয়েছে । বাকি দু'টির মধ্যে একটি ক্রিস্টিসন ব্লক । যা প্রথম ব্রিটিশ জিওসির নামে রাখা হয়েছে । দ্বিতীয়টি উমরাও ব্লক । যা প্রথম ভারতীয় সেনাবাহিনীর জিওসির নামে রাখা হয়েছে ।
ওয়ার হেরিটেজ মিউজিয়ামে শহিদের পাশাপাশি প্রথম চিফ অফ আর্মি স্টাফের ব্যবহারকারী ইউনিফর্ম, সামগ্রী, প্রথম টেলিফোন থেকে শুরু করে 1944 সালের বার্মা ক্যাম্পেইন, ব্যাটল অফ কোহিমা অ্যান্ড ইম্ফল, 1955 সালের অপারেশন বিজয়, 1962 নাথুলা স্কারমিশ, 1971 সালের বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রাম, তিদ্দিম এবং টামু পুনর্দখল, মেকটলা যুদ্ধ থেকে শুরু করে পারসুট এক্সস সিটং, লিবারেশন অফ গোয়া, দমন-দিউয়ে সেনার পরিচালনা, সিকিমের ছো লা যুদ্ধ অভিযান, হিলি ও বোগরা অভিযান । সমস্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই মিউজিয়ামে । শুধু তাই নয় । সেইসব যুদ্ধে ব্যবহারকারী অস্ত্রশস্ত্রও সাজিয়ে রাখা হয়েছে এখানে ।
আরও পড়ুন : 160 Year Old Skeletons : পঞ্জাবের কুয়োয় পাওয়া কঙ্কাল সিপাই বিদ্রোহের সময়কার, বলছে গবেষণা
এই বিষয়ে ক্যাপ্টেন গৌরব জাডোন বলেন, "মিউজিয়ামটিতে পর্যটকরা সহজেই আসতে পারবেন । এখানে একদিকে যেমন উত্তর- পূর্ব ভারতের পাহাড়ের জীব বৈচিত্র্যকে তুলে ধরা হয়েছে। তেমনই ভারতীয় সেনা ও যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে । যুদ্ধে ব্যবহারকারী বহু সামগ্রীও সাজিয়ে রাখা হয়েছে এখানে । এতে পড়ুয়াদের মধ্যেও দেশাত্মবোধ জাগবে ।"
ক্যাপ্টেন প্রেম শঙ্করের কথায়,"পর্যটকদের সুবিধার জন্য গুগল ম্যাপ থেকে ট্যুর অপারেটর, রাজ্য পর্যটন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে মিউজিয়ামটিকে পর্যটন কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত করা হবে । রাজ্যের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে এটাই প্রথম সেনার ইতিহাসের মিউজিয়াম (West Bengal Army Museum)।"
আরও পড়ুন : Solid Waste Management Project at Binnaguri: বিন্নাগুড়ি সেনা ছাউনিতে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প গড়তে উদ্য়ােগ সেনাবাহিনীর