শিলিগুড়ি, 30 মে : দুর্ঘটনায় রোগীর কাটা পড়া হাত হাসপাতালের ওয়ার্ডের কাছ থেকে চুরি করে খুবলে খেল কুকুর ! উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এই ঘটনায় চক্ষু চড়কগাছ সকলের (a dog is biting the patient's hand in North Bengal Medical College) ৷ সমগ্র ঘটনায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে বড়সড় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে । ঘটনাটি জানাজানি হতেই হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখায় রোগীর পরিজনরা । চাপে পড়ে তড়িঘড়ি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ির গোড়ার মোড়ে টি পার্কের কাছে একটি পথ দুর্ঘটনা ঘটে । বাইকের সঙ্গে একটি চারচাকার সংঘর্ষে গুরুতর জখম হন শিলিগুড়ি পৌরনিগমের 20 নম্বর ওয়ার্ডের দূর্গাদাস সরণির বাসিন্দা সঞ্জয় সরকার । তাঁর একটি হাতের কনুই থেকে কাটা পড়ে । তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় বাসিন্দা এবং এনজেপি থানার পুলিশ উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । এমার্জেন্সি বিভাগে আহতের চিকিৎসা করার পর কাটা পড়া হাতটি একটি ব্যাগে ভরে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয় । সেইসময় চিকিৎসকরা পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, হাতটি জোড়া লাগানোর সম্ভাবনা রয়েছে । সেইমতো কাটা হাতটিকে ওই ব্যাগের মধ্যে করেই ওয়ার্ডের কাছে রাখতে বলেন দায়িত্বে থাকা নার্সরা ।
আরও পড়ুন : জঙ্গলে ঘাপটি মেরে লুকিয়েছিল বাঘ, সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ল মৎস্যজীবীর ঘাড়ে
রোগীকে ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করার পর মাঝরাতে কাটা হাতটির খোঁজ শুরু হয় । কিন্তু দেখা যায় ব্যাগ থেকে হাত গায়েব ! এরপরই পরিবারের লোকেরাই হাতটির খোঁজ শুরু করেন। দীর্ঘক্ষণ খোঁজার পর ওয়ার্ডেরই ছাদের উপর দেখা যায় একটি কুকুর সেই কাটা হাতটি চিবিয়ে খাচ্ছে ! অনেক চেষ্টার পরও কুকুরের মুখ থেকে উদ্ধার করা যায়নি হাতটি । সোমবার সকালে হাসপাতালের সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় রোগীর পরিজনেরা ।
অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে হাতটি জোড়া লাগার সম্ভাবনা রয়েছে জানানো হলেও হাতটিকে নিরাপদে রাখার কোনও ব্যবস্থাই করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উলটে ঘটনার পর জানিয়ে দেওয়া হয় হাতটি পরিবারের হেফাজতেই রাখতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে রোগীর মা নমিতা সরকার বলেন, "রাতে খবর পাই ছেলে দুর্ঘটনায় জখম হয়েছে। হাসপাতালে এসে দেখি ওর হাত কাটা পড়েছে। পরে শুনি ছেলের হাত কুকুরে নিয়ে গিয়েছে ।"
আরও পড়ুন : 14 জনের দেহ উদ্ধার, জীবিত যাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি
সঞ্জয়ের দাদা বাপ্পা দাস বলেন, "হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে একটি কুকুর কাটা হাত নিয়ে চলে গেল । এর থেকে বেদনাদায়ক কিছু আর হতে পারে না । হাসপাতালের নিরাপত্তা কোথায় ? কি করছিলেন নার্স, চিকিৎসক, নিরাপত্তা রক্ষীরা ? আমরা এর বিচার চাই । আমার ভাইকে সারাজীবনের মতো পঙ্গু করে দেওয়া হল ।"
হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, "ঘটনাটি কীভাবে ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে । ইতিমধ্যে তিনজনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । যদিও ওই হাতটি আর জোড়া লাগানো যেত না । কারণ আমাদের এখানে সেই পরিষেবা নেই । এই ধরনের ঘটনায় কাটা পড়ে যাওয়া অঙ্গের ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয় । এখানে তা করা যায়নি ।"