শিলিগুড়ি, 3 সেপ্টেম্বর : কোরোনা পরিস্থিতির জেরে এখন জেরবার শিলিগুড়ির টেবিল টেনিস । উত্তরবঙ্গের অন্যতম শহর শিলিগুড়ি ৷ টেবিল টেনিসের জন্য বিখ্যাত । বস্তুত এই শহরকে বলা হয়ে থাকে টেবিল টেনিসের শহর । দেশের টেবিল টেনিসের প্রসারে এই শহরের অবদান কম নয় । এখান থেকেই বিভিন্ন বিভাগে একাধিক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন উঠে এসেছেন । এই শহরের টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মান্তু ঘোষ অর্জুন পুরস্কার পেয়েছেন । যদিও কোরোনা পরিস্থিতিতে এখন শিলিগুড়ি টেবিল টেনিস ঘোর সংকটে ।
শিলিগুড়ির অলি গলিতে বিভিন্ন ক্লাবে টেবিল টেনিস খেলে বহু ছেলে মেয়ে । এই শহর থেকে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উঠে এসেছেন গণেশ কুন্ডু, সৌভিক বসাক, মৌমিতা দত্ত, কস্তুরী চক্রবর্তী, শুভজিৎ সাহা, সৌম্যজিৎ ঘোষ । তাঁদের দেখে উৎসাহিত হয়ে খেলাধুলোয় যোগ দিয়েছে বহু ছেলে মেয়ে । পাড়ায় পাড়ায় সকাল বিকেল টেবিল টেনিস চর্চা এই শহরের অন্যতম পরিচিত ছবি । কিন্তু কোরোনার জেরে সেই পুরোনো ছবিটাই এখন বিলীন ৷
সংক্রমণের ভয়ে অধিকাংশ ক্লাবেই খেলাধুলো শিকেয় উঠেছে । বন্ধ রয়েছে একাধিক ক্লাব । কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবকেরাও ছেলেমেয়েদের অনুশীলনে পাঠাতে চাইছেন না । খেলোয়াড়দের টেবিল টেনিস চর্চা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগামী দিনে দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ।
ঠিক কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে শিলিগুড়ির টেবিল টেনিস? ক্যাডেট গ্রুপের টেবিল টেনিস খেলোয়াড় দেবরাজ ভট্টাচার্য জানায়, ‘‘লকডাউনে খেলা প্রায় বন্ধ । আগে দুবেলা খেলা হত । এখন দুবেলা ক্লাব খুলছে না । এছাড়াও কনটেইনমেন্ট জ়োন সহ নানা কারণে সিংহভাগ সময় ক্লাব বন্ধ থাকছে । ফলে হাত কিছুটা হলেও বসে গিয়েছে । কিছু ক্লাবে ফের খেলা শুরু হয়েছে ঠিকই । কিন্তু আগের মত দীর্ঘ সময় ধরে খেলা হচ্ছে না । সীমিত সময়ে কয়েক ঘণ্টায় সকলে মিলে প্র্যাকটিস করছি । এর জেরে কিছু সমস্যা হচ্ছে । ’’
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে জুনিয়র গ্রুপে দেশের মধ্যে ষষ্ঠ র্যাঙ্কে থাকা জয়ব্রত ভট্টাচার্যের দাবি তিনি বাড়িতেই ফিটনেস সারছেন । কারণ মাঠ বন্ধ । প্র্যাক্টিস কিছুটা কমেছে । তবে তাঁরা চেষ্টা চালাচ্ছেন ।
সিনিয়র গ্রুপে জাতীয় স্তরের খেলোয়াড় সৌম্যদীপ সরকার জানান, ‘‘খেলার পরিবেশটাই আর নেই । চতুর্দিকে ভয় । সংক্রমণের আশঙ্কা । প্র্যাকটিস আগের চেয়ে অনেক কমেছে । এরমধ্যে চেষ্টা চালাচ্ছি । আগে সারাদিনে দুবেলা বেশ কয়েক ঘণ্টা খেলতাম । এখন শুধুমাত্র বিকেলে কয়েকঘণ্টা খেলতে পারছি । তাও মনের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা আছেই । তবুও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা নিজেদের খেলাটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি ।’’
জাতীয় স্তরে প্রথম ষোলোতে থাকা খেলোয়াড় নিকিতা সরকার বলেছেন,‘‘ গতবছর জাতীয় স্তরে ব্রোঞ্জ পেয়েছি । এবছর কী হবে জানি না । প্র্যাকটিস নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে কমেছে । তবুও চেষ্টা চালাচ্ছি । যেটুকু সময় পাচ্ছি মন দিয়ে খেলছি । কোচেরা সাহায্য করছেন ।’’
টেবিল টেনিস কোচ অমিত দাম বলেন, ‘‘সামাজিক দূরত্ব মেনে খেলোয়াড়দের খেলাতে হচ্ছে । গোটা দেশজুড়ে খেলাধুলা এখন অনিশ্চিত পর্যায় রয়েছে । ফলে শিলিগুড়িতেও তার প্রভাব পড়েছে । এই শহর টেবিল টেনিসের শহর । উত্তরবঙ্গকে টেবিল টেনিসে আলাদা রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে প্রচুর সংখ্যায় ছেলেমেয়েরা জাতীয় স্তরে প্রতিবছর অংশ নিয়ে থাকে । প্রত্যেকটি ক্লাবে টেবিল টেনিসের চর্চা এই শহরের পরিচিত ছবি । এই শহর থেকে প্রতিবছর বহু খেলোয়াড় জাতীয় স্তরে নিজেদের সাফল্য দেখিয়েছে । গোটা দেশজুড়ে জাতীয় স্তরে কোন খেলাধুলা এখন হচ্ছে না । ফলে জাতীয় স্তরের রাঙ্কিং নিয়ে সেভাবে খেলোয়াড়দের সমস্যা হবে না । তার কারণ কেউই সেভাবে খেলতে পারছেন না । তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেসব খেলোয়াড়ের রাঙ্কিং রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হবে । কারণ আন্তর্জাতিক স্তরে কিছু দেশে এখনও খেলাধুলো চলছে । তবে এই ক্ষতি স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া আপাতত আমাদের কাছে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই ।’’
রাজ্য টেবিল টেনিস সংস্থার অন্যতম কর্ণধার অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত মান্তু ঘোষ টেলিফোনে জানান, ‘‘ বর্তমানে দেশজুড়ে এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে শিলিগুড়ি টেবিল টেনিসকে বড় ধাক্কা দিয়েছে ৷ খেলাধূলা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে প্লেয়ারদের নানা সমস্যা দেখা দেবে ৷ চর্চা নিয়মিত না হলে ভবিষ্যতে বহু সমস্যা হবে ৷ তাদের কেরিয়ারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । আমরাও চেষ্টা চালাচ্ছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলা শুরু করার ৷ কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা সম্ভব না ৷’’