মালদা, 27 জানুয়ারি: দুপুরে খাওয়ার সময় গলায় খাবার আটকে গিয়েছিল ৷ অনেক চেষ্টা করেও গলা থেকে সেই খাবার বের করতে না-পেরে তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন ৷ অভিযোগ, হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ভালো করে পরীক্ষা না-করেই ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণতন্ত্র দিবসের বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তপ্ত ছিল রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের সামসী গ্রামীণ হাসপাতাল ৷ শেষ পর্যন্ত বিডিও এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ সোমবার সকালে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য় মালদা মেডিক্যালে পাঠিয়েছে রতুয়া থানার পুলিশ ৷
মৃত ব্যক্তির নাম উৎপল চক্রবর্তী ৷ বয়স 41 বছর ৷ বাড়ি সামসীর দেশবন্ধু পাড়ায় ৷ তিনি পেশায় ছিলেন পুরোহিত ৷ ভালো মানুষ হিসাবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গতকাল বেলা তিনটে নাগাদ উৎপল চক্রবর্তী দুপুরের খাবার খেতে বসেন ৷ সেই সময় তাঁর মোবাইল ফোনে কেউ ফোন করেন ৷ তিনি খাবার খেতে খেতেই ফোনে কথা বলতে শুরু করেন ৷ হঠাৎ গলায় খাবার আটকে যায় তাঁর ৷
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর ইসিজি করানো হয় ৷ রিপোর্ট দেখে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা সরকার ৷ পরিবার এবং স্থানীয় কয়েকজনের বক্তব্য, চিকিৎসক মৃত ঘোষণা কররা পর স্ট্রেচারে নড়াচড়া করতে দেখা যায় উৎপলকে ৷ সেকথা চিকিৎসককে জানালে তিনি উৎপলকে অন্যত্র পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আসার পরামর্শ দেন ৷ অ্যাম্বুলেন্সও চলে আসে ৷ ঠিক সেই সময় হাসপাতাল পৌঁছন রতুয়া 1 নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রাকেশ কুমার ৷ তিনি উৎপলকে পরীক্ষা করে ফের জানিয়ে দেন, তিনি মারা গিয়েছেন ৷ তখনই উত্তেজিত হয়ে ওঠে উপস্থিত জনতা ৷
সামসীর বাসিন্দা নয়ন দাস বলেন, "গলায় খাবার আটকে উৎপলদা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে ৷ সেই সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঠিকমতো পরীক্ষা না-করেই দাদাকে বাইরে বের করে ফেলে রাখেন ৷ দাদাকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ কিছুক্ষণ পর স্থানীয় কয়েকজন ছেলে এসে দেখে, তখনও উৎপলদার জ্ঞান রয়েছে ৷ তারপর তাঁকে ফের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এই ডাক্তারবাবুদের চেম্বারে বসার সময় আছে ৷ কিন্তু হাসপাতালে আসার সময় নেই ৷ আমাদের করের টাকায় তাঁরা চাকরি করছেন ৷ টাকায় না পোষালে তাঁরা সরকারি চাকরি ছেড়ে দিন ৷ নিজের ক্লিনিকে রোগী দেখুন ৷ এখানে ডাক্তারদের গাফিলতিতেই উৎপলদার মৃত্যু হয়েছে ৷ আমরা এই ডাক্তারদের শাস্তি চাই ৷ 24 ঘণ্টা পরিষেবা দিতে না পারলে এই হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হোক ৷"
স্থানীয় গণেশ পাড়ার বাসিন্দা তন্ময় দাসের বক্তব্য, "দাদাকে দু’ঘণ্টা এখানে ফেলে রাখা হয়েছে ৷ কেন ? এই হাসপাতালে বড় ভবন করা হয়েছে ৷ অথচ অপারেশন থিয়েটার নেই ৷ এখানে আনার পর দাদার চিকিৎসা শুরু করা উচিত ছিল ৷ এই হাসপাতালে মজুত থাকা সত্ত্বেও বলা হয় ওষুধ নেই ৷ রাত 12টার পর কোনও রোগী এলে তাঁকেও বলা হয়, প্রেশক্রিপশন করে দেওয়া হচ্ছে ৷ বাইরে থেকে ওষুধ নিয়ে আসতে হবে ৷ এটা কেন হবে ? আমার স্ত্রী গর্ভবতী ৷ এই হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় কে নেবে ? আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই, সামসী বড় জায়গা ৷ এই হাসপাতালে সবসময় অন্তত দু’জন চিকিৎসক থাকা উচিত ৷ এখানকার চিকিৎসককে 200-250 টাকা ভিজিট দিয়ে দেখাতে হয় ৷ ডাক্তার কেন হাসপাতালে থাকবেন না ? তিনি তার জন্য সরকারের কাছ থেকে মাইনে নিচ্ছেন ৷ উৎপলদা ডাক্তারদের গাফিলতিতেই মারা গিয়েছেন ৷ গলায় খাবার আটকে এভাবে একজনের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না ৷"
এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অভিযুক্ত চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা সরকার কিংবা রতুয়া 1 নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রাকেশ কুমার ৷ তবে বিডিও রাকেশ টোপ্পো জানিয়েছেন, "এলাকার মানুষজন হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে আমাকে কিছু অভিযোগ করেছেন ৷ অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ ওই ব্যক্তির মৃতদেহ পুলিশ আজ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠিয়েছে ৷ তার রিপোর্ট আসার পরই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে ৷ সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের দোষ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে ৷"