কলকাতা, 27 জানুয়ারি: সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চায় না আরজি করের নির্যাতিতার পরিবার ৷ তাদের পক্ষের আইনজীবী শামিম আহমেদ কলকাতা হাইকোর্টে আজ একথা জানিয়েছেন ৷ এদিকে, আরজি করে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবিতে আবেদনের শুনানি আজ শেষ হয়েছে ৷ রায়দান স্থগিত রেখেছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বার রাশিদির বেঞ্চ ৷
এদিন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, "আমরা মনে করি, যারা আসল অপরাধী তারা এখনও ধরা পড়েনি ৷ তাদের ধরতে হবে ৷ আমরা মনে করি, তারাও ধরা পড়ুক এবং কঠোর শাস্তি পাক ৷ সিবিআই ও রাজ্যের ফাঁসির দাবিতে করা আবেদনে আমরা চরম শাস্তি চাইছি না, এটাই আদালতে জানিয়েছি ৷"
কেন তাঁরা ফাঁসি চাইছেন না এই প্রশ্ন করা হলে আদালতের বাইরে নির্যাতিতার বাবা বলেন, এবিষয়ে সবকিছু তাঁদের আইনজীবী বলবেন ৷ তিনি আরও বলেন, "যারা যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে, তাদের তদন্তের আওতায় এনে চরম শাস্তি দেওয়া হোক, এটাই আমরা চাইছি ৷" তাঁরা রাজ্য বা সিবিআইয়ের আর্জিকে সমর্থন করছেন কি না এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "যেখানে মেয়ের বিচার পাব, আমি তাদের সঙ্গে আছি ৷ সিবিআই তো কাজই করছে না, তার প্রমাণ শিয়ালদা আদালত দিয়েছে ৷ রাজ্য পুলিশ আমাদের ডুবিয়েছে ৷ এবার সিবিআইও আমাদের ডোবাচ্ছে ৷ এবার আমরা কার কাছে যাব ? বিচারকের কাছে আমরা জানতে চেয়েছি, তিনি যা বলবেন, তাই করব ৷"
ফাঁসির দাবিতে মামলার বিষয়ে সিবিআই এদিন বেঞ্চের সামনে দাবি করে যে, সাজা যথাযথ বলে মনে না-হলে শুধুমাত্র তাদেরই হাইকোর্টে আপিল করার অধিকার রয়েছে, কারণ তারাই মামলার তদন্তকারী সংস্থা । যদিও রাজ্য সরকার যুক্তি দেয় যে, কেন্দ্রীয় সংস্থা ছাড়াও, তারাও ট্রায়াল কোর্টের দেওয়া সাজা সঠিক হয়নি বলে দাবি করে আপিল করতে পারে ৷
এদিন রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত আদালতে বলেন, "দিল্লি পুলিশ এসটাবলিশমেন্ট অ্যাক্টের 417-র (2) ধারা অনুযায়ী রাজ্যও আপিল জানাতে পারে, যদি আসামিকে বেকসুর খালাস করার নির্দেশ দেওয়া হয় অথবা নিম্ন আদালত যে শাস্তির নির্দেশ দিয়েছে সেটা যদি যথাযথ মনে না হয় ।"
তিনি বলেন, আইনের 377 ধারা অনুযায়ী কেন্দ্র তদন্ত করছে এমন মামলায় তারাই আপিল করতে পারে । তবে যদি শাস্তি উপযুক্ত বলে মনে না-হয়, তবে তারা রাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউটরকে এই ধরনের আপিলের অনুমতি দিতে পারে ৷
বিচারপতি দেবাংশু বসাক তখন বলেন, "বিএনএসএস-এর 418 ধারা অনুয়ায়ী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যদি আপিল না-করে একমাত্র তখনই তদন্তের অগ্রগতির স্বার্থে রাজ্য এমন আপিল করতে পারে ।" যদিও রাজ্যের এজির বক্তব্য ছিল, "সিবিআইকে বিশেষ ক্ষেত্রে তদন্তের অধিকার দেওয়া মানেই রাজ্যের অধিকার উবে যায় না । আইন অনুযায়ী পাবলিক প্রসিকিউটরেরও অধিকার আছে আপিল করার ।"
এ প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী তথা অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু বলেন, "মামলার সমস্ত রেকর্ড, কেস ডায়েরি, সবকিছু সিবিআইয়ের হাতে । 13 অগস্ট হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা পুলিশের হাত থেকে তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তর করেছিল । সিবিআই 7 অক্টোবর চার্জশিট পেশ করে । 18 জানুয়ারি নিম্ন আদালত রায় ঘোষণায় দোষী সাব্যস্ত করে সঞ্জয় রায়কে । এই মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে নিম্ন আদালতে রাজ্য কোনও আবেদন পর্যন্ত করেনি । রাজ্য সিবিআইকে সহযোগিতা করারও কোনও চেষ্টা করেনি । এই ধরনের মামলায় রাজ্যের আপিলের এক্তিয়ারই নেই ।"
এরপর বিচারপতি বসাকের প্রশ্ন, "যদি সিবিআই কোনও আপিল না-করে, তাহলে রাজ্যের কি অধিকার নেই আপিল করার ?" এই প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী এসভি রাজু দাবি করেন, "না, আইনগত দিক থেকে রাজ্যের অধিকার নেই ।" তিনি আরও জানান, বিএনএস 18 (8) এ অনুয়ায়ী, সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী অমাজিৎ দে-কে পিপি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে ৷
এদিন যশ জালান নামে এক আইনজীবী আদালতে দাবি করেন যে, তিনি সঞ্জয় রায়ের হয়ে হাইকোর্টে সওয়াল করবেন । কিন্তু অন্য এক আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে জানান যে, সঞ্জয় রায়ের হয়ে সওয়াল করার জন্য তাঁকে ওকালতনামা দেওয়া হয়েছে । যশ জালান নামে ওই আইনজীবীকে তাঁর পক্ষে সওয়াল করার সম্মতি দেয়নি সঞ্জয় নিজেই । ফাঁসির আর্জি সংক্রান্ত রাজ্যের আবেদন মামলায় শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখে আদালত ।