শিলিগুড়ি, 24 সেপ্টেম্বর : নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, কাশফুলের সারি জানান দেয় শরৎকালের ৷ আর শরৎকাল মানেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোপুজো । পাঁচটা দিনের জন্য মানুষ সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন ৷ শুধু সাধারণ মানুষ নন। অপেক্ষা করে থাকেন আরও কিছু মানুষ ৷ কারণ এই দুর্গাপুজোর উপরই নির্ভর করে তাঁদের সারা বছরের আয় ৷ বলতে গেলে যাঁদের ছাড়া দুর্গাপুজোই একপ্রকার অসম্পূর্ণ ৷ তাঁরা মৃৎশিল্পী ৷ মৃৎশিল্পীদের তুলির টানেই সেজে ওঠেন মা ৷ আর এই মায়ের প্রতিমা গড়েই তা বিক্রি করে সারা বছরের রসদ জোগাড় করেন মৃৎশিল্পীরা । তবে করোনা পরিস্থিতিতে তাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয় ৷ শিলিগুড়ির কুমোরটুলির শিল্পীদেরও একই পরিস্থিতি ৷ গত বছর সেরকম একটা মূর্তি তৈরির বরাত পাননি তাঁরা ৷ আর এবছর ? কেমন আছেন তাঁরা ? পরিস্থিতি কি আগের থেকে ভাল নাকি আরও খারাপ হয়েছে ? শিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত বারের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি ভাল ৷ তবে লাভ খুব একটা হচ্ছে না ৷
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত শহর শিলিগুড়ি । পাশেই রয়েছে সিকিম, অসম ৷ কাছেই নেপাল ৷ প্রতিবারই শিলিগুড়ি থেকে ওইসব জায়গায় দুর্গা প্রতিমা যায় । প্রতিবছর প্রায় এক থেকে দেড় হাজার ছোট থেকে বড় মাপের দুর্গা প্রতিমা পাহাড় ও ভিনরাজ্যে গিয়ে থাকে । তবে করোনার জন্য দু'বছর ধরে তা অনেকটাই ম্লান । অবশ্য গত বছরের তুলনায় এ বছর কিছুটা হলেও স্বস্তিতে মৃৎশিল্পীরা । প্রতিমার বরাত মিলছে ৷ সেজন্য পুজোর মুখে এখন কিছুটা হলেও ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে শিল্পীদের মধ্যে । কম হলেও ভাল বরাত মিলেছে । সঙ্গে বায়না এসেছে । সমতলের পাশাপাশি শিলিগুড়ি থেকে প্রতিমার একটা বড় অংশ পাহাড়ে যায় । যা করোনার জন্য প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । গত বছর যে কয়েকটা প্রতিমা গিয়েছিল, তাও ছোট মাপের । তাতে লাভের থেকে বেশি লোকসানই হয়েছিল শিল্পীদের । কিন্তু এই বছর পাহাড়ের পাশাপাশি ভিনরাজ্য থেকে অর্ডার এসেছে দুর্গা প্রতিমার । এবছর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মাঝারি এবং বড় মাপের কিছু প্রতিমার বরাদ্দ পেয়েছেন শিল্পীরা । দুলকি চালে হলেও সেই সব পুজো উদ্যোক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে শিলিগুড়ির কুমোরটুলিতে ।
আরও পড়ুন, Krishnanagar to Canada : করোনা আবহেও কৃষ্ণনগরের দুর্গাপ্রতিমা পাড়ি দিচ্ছে টরেন্টোয়
তবে ভাল বরাত এলেও সমস্যা কিন্তু রয়ে গিয়েছে মৃৎশিল্পীদের । প্রতিমার সাজসজ্জার সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ৷ পাশাপাশি করোনার জেরে হস্তশিল্পীরা পেশা বদল করেছে ৷ অন্য কাজে নিযুক্ত হয়ে গিয়েছেন ৷ ফলে মূর্তি বানাতে গিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়ছেন শিল্পীরা ৷ এই বিষয়ে মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন পাল বলেন, " প্রতিমা অর্ডার পেলেও প্রতিমার সাজসজ্জার সামগ্রী কিনতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের । প্রতিমার সাজানোর সামগ্রী বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ৷ এদিকে, মূর্তির দামও বেশি পাচ্ছি না ৷ ফলে লাভের পরিমাণ কম হচ্ছে । "
তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল । স্বীকার করে নিচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা ৷ এই বিষয়ে মৃৎশিল্পী অরূপ পাল বলেন, "লাভের পরিমাণ কম হলেও এবছর যেহেতু বড় প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি তা আমাদের কাছে স্বস্তির । 50 শতাংশ বায়নাও দিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা । তবে প্রতিমা বড় হলেও যা মূল্য হওয়া উচিত, তার থেকে কম মিলছে । তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এবার পাহাড়ের পাশাপাশি ভিনরাজ্যে প্রতিমা যাচ্ছে । আর তাতেই আমরা কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি ।" আরেক শিল্পী দিপালী পাল বলেন, "গতবার পাহাড়ে সেভাবে প্রতিমা যায়নি । যে কয়েকট গিয়েছিল সব ছোট মাপের ছিল । কিন্তু এবছর সমতলের পাশাপাশি পাহাড়েও বড় মাপের প্রতিমা যাচ্ছে । তাতে আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি । আশা করছি পুজোর আগে পরিস্থিতি আরেকটু ভাল হবে ৷"
আরও পড়ুন, Burdwan Kumartoli: সামনেই দুর্গাপুজো, অন্ধকারেই দিন কাটছে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীদের
সমস্যার সম্মুখীন হয়েও সমস্ত বাধা পেরিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা ৷ আশা ছাড়ছেন না কেউ ৷ ভাল সময়ের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তাঁরা ৷