শিলিগুড়ি, 9 ডিসেম্বর: একের পর এক অবহেলা ও গাফিলতির ছবি মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প তথা দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বেঙ্গল সাফারি পার্কে (Deer deaths in Bengal Safari Park)। গত সাত থেকে আট মাস ধরে ব্যাপক গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে । যার কারণে পরপর হরিণের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ (Siliguri News)৷ এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী (Forest minister on Bengal Safari Park)৷
সম্প্রতি বেঙ্গল সাফারি পার্কে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে একটি অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে । আর এ বার পার্কের একাধিক জায়গায় ভাঙা এনক্লোজার, ওয়াচ টাওয়ারের বেহাল ছবি ধরা পড়ল । পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, এনক্লোজারের ভাঙা জায়গা থেকে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে দলে দলে হরিণ । শুধু তাই নয় । পার্ক কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে গত দু'মাসে মৃত্যু হয়েছে 27টিরও বেশি হরিণের । হরিণের সংখ্যা কমে পার্কে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ।
এনক্লোজার থেকে বেরিয়ে ক্যান্টিনের আবর্জনা খেয়ে ফেলছে হরিণেরা । বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি । এছাড়াও পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে তারা । যদিও দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ।
সলিট্যারি নেচার অ্যান্ড অ্যানিমেল প্রোটেকশন ফাউন্ডেশনের সম্পাদক কৌস্তভ চৌধুরী অভিযোগ করেন, "বেঙ্গল সাফারি পার্কের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক মাস ধরেই গাফিলতির অভিযোগ উঠে আসছে । সম্প্রতি ক্যাঙ্গারুর মৃত্যু হয়েছে । হরিণের এনক্লোজার ভাঙা, ওয়াচ টাওয়ারের বেহাল দশা । অদ্ভুত বিষয় হরিণ নির্দিষ্ট এনক্লোজার থেকে বেরিয়ে সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছে । অথচ পার্ক কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই । বাইরে বেরিয়ে গেলে সেইসব হরিণগুলোকে চোরাশিকারিরা মেরে পাচার করে দেবে । এ সব অবশ্যই দেখা উচিত । আমরা দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানাই ।"
আরও পড়ুন: খাবারে বিষক্রিয়ার জের, বেঙ্গল সাফারি পার্কে মৃত্যু অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙারুর
শিলিগুড়ি অপ্টোপিক সোসাইটির সভাপতি দীপজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, "বেঙ্গল সাফারি পার্ক শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গ বা রাজ্যের নয়, গোটা দেশের অন্যতম সাফারি পার্ক । সেখানে এই ধরনের অবহেলা মানা যায় না । হরিণ বাইরে যেমন বেরিয়ে যাওয়ায় চোরাশিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকছে, তেমনই আশপাশের মহানন্দা অভয়ারণ্যতে বহু চিতাবাঘ রয়েছে । তারা যদি এখন খাবারের খোঁজে হরিণের এনক্লোজারে ঢুকে পড়ে তবে বিপদ নিশ্চিত । দ্রুত কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ করা উচিত ।"
রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, "বিষয়টি জানা ছিল না । আমি এখনই বিষয়টি দেখছি ।" রাজ্য জু অথরিটির সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী বলেছেন, "একটা সমস্যা ছিল । আমরা সেগুলি দ্রুত সমাধান করছি । মেরামত ও সংস্কারের কাজও চলছে ।"
বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, 2016 সালে বেঙ্গল সাফারি পার্ক শুরুর সময় হার্বিভোরাস ( তৃণভোজী) এনক্লোজারে প্রায় সাড়ে চারশোটি স্পটেড ডিয়ার, বার্কিং ডিয়ার, সম্বর, হগ ডিয়ারের মতো হরিণ প্রজাতির প্রাণী ছাড়া হয়েছিল । রায়গঞ্জের আদিনা পার্ক, খড়গপুরের হিজলি ও শান্তিনিকেতনের বল্লভপুর থেকে বেঙ্গল সাফারি পার্কে আনা হয়েছিল হরিণ । পরবর্তীতে হরিণের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় । ফলে তৎকালীন পার্ক কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য বন দফতর 2018-19 সালে সেখান থেকে প্রায় 50টি হরিণ অন্যত্র স্থানান্তরিত করে । কিন্তু 2022 সালে হরিণের সংখ্যা কমে 250টিতে এসে দাঁড়িয়েছে ।