দার্জিলিং, 10 অক্টোবর: নিজের প্রাণ দিয়ে শতাধিক গ্রামকে রক্ষা করে গেলেন বছর পঁয়ত্রিশের যুবক। শুধু সিকিম কিংবা কালিম্পং নয়, তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসের জন্য প্রলয়ের হাত থেকে বেঁচে গেল গোটা উত্তরবঙ্গের একটা বড় অংশ। তিনি দাওয়া তোংডেন লেপচা। সিকিমের লোয়াং সামডং এলাকার বাসিন্দা দাওয়া শেরপা। আজ তাঁর পরিবারে হাহাকার। কিন্তু গোটা সিকিম আজ তাঁর জন্য গর্বিত। রবিবার তাঁর বলিদানের খবর পেয়ে পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। তিস্তার প্রবল জলোচ্ছ্বাস থেকে কয়েক হাজার প্রাণহানি হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন তিনি।
সিকিমের সিংতামের বালুটারে তিস্তা-5 জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছিলেন দাওয়া লেপচা। পরিবারে রয়েছে, দাওয়ার স্ত্রী গীতা কুমারী রাই, ছেলে লিয়ং লেপচা ও কন্যা নয়ালমিত। দাওয়ার প্রয়াণের পর এখন কীভাবে সংসার চালাবেন সেই চিন্তাই করছেন স্ত্রী গীতা। তবে পরিবারকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। গত মঙ্গলবার রাতে লোনাক লেকের জল বাঁধ ভেঙে উন্মত্ত গতিতে আশেপাশের সব ধ্বংস করে নীচে নামছিল। তিস্তার জলের প্রবল দাপতে নিমেষে ধ্বংস হয়ে যায় লাচেন, লাচুং, চুংথান, সিংথামের মতো একাধিক এলাকা।
ধ্বংসলীলা চালাতে চালাতে তীব্র গতিতে নামতে শুরু করে জল। ভোররাতে দিকচুর সেই 5 নম্বর তিস্তা জলবিদ্যুৎ বাঁধে কর্তব্যরত ছিলেন দাওয়া লেপচা। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের শব্দে তাঁর বুক কেঁপে ওঠে। বাঁধের উপর থেকে জলের স্রোত দেখেই বুঝে যান যে প্রলয় আসছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখেও মনবল ও সাহসে ভর করে একাই একে একে লক গেট খুলতে শুরু করেন। কিন্তু 4 নম্বর গেট খুলতে গিয়েই হাইভোল্টেজের তার দাওয়া লেপচার উপর ছিঁড়ে পড়ে।
সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে কোনও বাধা না-পেয়ে তিস্তা নীচে নামতে শুরু করেছে। রক্ষা পায় আশেপাশের শতাধিক গ্রাম। আজ সেইসব গ্রামের ঘরে ঘরে বীর দাওয়ার গল্প। কীভাবে নিজের প্রাণ দিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভোরে দাওয়ার নিথর দেহ উদ্ধার হয়। দাওয়ার ভাই রঞ্জন লেপচা বলেন, "দাদার মৃত্যুতে পরিবারটা ভেসে গেল। কিন্তু দাদা যেভাবে নিজের প্রাণ দিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে তার জন্য আমরা গর্বিত।"
আরও পড়ুন: বিপর্যস্ত সিকিম, ফুলেফেঁপে উঠল তিস্তা! জলপাইগুড়িতে হলুদ সতর্কতা