শিলিগুড়ি, 11 জানুয়ারি: বিষয়টা 'অনেকটা এ বলে আমায় দ্যাখ তো ও বলে আমায় দ্যাখের' মতো ৷ শহরের যত্রতত্র বহুতল গড়ে ওঠায় আজ চরমের বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে উত্তরাখন্ডের জোশীমঠ ৷ কেদারনাথে 'কাণ্ড' করতে যাওয়ার আগে এই জোশীমঠেও নিজের কেরামতি দেখিয়েছিল ফেলুদা ৷ ফেলুর স্মৃতি বিজড়িত জোশীমঠের ভবিষ্যৎ আজ চরম অনিশ্চয়তার মুখে ৷ আর এসব দেখে চিন্তা বাড়ছে দার্জিলিংকে নিয়েও (Joshimath like incident can happen in Darjeeling ) ৷
শৈলরানির রাজ্যপাটে গত পাঁচ বছরে বহুগুণ বেড়েছে বহুতলের সংখ্যা ! উত্তরাখন্ডের জোশীমঠের ঘটনরার পর উদ্বিগ্ন প্রশাসন। চাপ বাড়ছে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের উপর। বহুতল নির্মাণে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা জারি করার আবেদন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ প্রেমীদের। সব খতিয়ে দেখে পরিবেশ রক্ষার দিকে নজর দিয়েই পদক্ষেপ করার আশ্বাস গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (Gorkha Territorial Administration)।
সম্প্রতি, উত্তরাখন্ডের জোশীমঠে (Joshimath) প্রায় 600টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে করণপ্রয়াগেও। এমত অবস্থায় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কালিম্পংয়ের ক্ষেত্রেও। কারণ হিমালয়ান সাব রিজিয়ন প্লেট (Himalayan Sub-Region Plate) টেকনোটিক্স পরিবর্তনশীল। সিসমিক জোন 4-এ রয়েছে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল। তার জেরে মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্প হয়ে থাকে পাহাড়ে। আর পাহাড়ে ভূমিকম্পের ফলে একাধিকবার ক্ষতির উদাহরণ কম নেই। সম্প্রতি দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে একের পর এক ধসের ঘটনা ঘটেছে। বিজনবাড়ি, তাকদা সহ বিভিন্ন এলাকায ধস নামার নজির রয়েছে। কিন্তু তারপরেও দার্জিলিং থেকে শুরু করে কালিম্পংয়ে অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে (Construction of High Rise is Under Scanner)।
আরও পড়ুন: জোশীমঠে ক্ষতিপূরণ রাজ্যের, পরিবার পিছু মিলবে 1.5 লক্ষ টাকা
এর সঙ্গে মনে রাখতে হবে সিকিমেও প্রায় নিয়মিত ধস নামে ৷ বর্ষাকাল এলে সেই ধসের প্রবণতাও বাড়তে থাকে। ধসের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে যায় রাস্তা। ভেঙে যায় বাড়়ি। প্রাণহানিও হয় আকচার। কিন্তু তারপরেও যাবতীয় নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি তৈরি হচ্ছে দার্জিলিংয়ে ৷ একটা সময় পাহাড়ে সাধারণত কাঠের বাড়ি বেশি দেখা যেত। ভূমিকম্পপ্রবণ দার্জিলিংয়ে এটাই ছিল রীতি। তবে বর্তমানে সেই পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের ইমারত। সেটাই বিপর্যয়ের কারণ।
দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে অনেকটাই আর্থ সামাজিক পরিবর্তন এসেছে। বেড়েছে হোটেলের সংখ্যা। দশ বছর আগেও দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে হোটেলের সংখ্যা ছিল পাচঁশোটির মতো। এখন সেই সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। পাহাড়ে মূলত কাঠের বাড়ির প্রচলন রয়েছে। কিন্তু এখন সরকারি সাহায্যে একের পর এক পাকাবাড়ি থেকে শুরু করে হোম স্টে তৈরি হয়ে চলেছে। অকল্পনীয়ভাবে বেড়েছে বহুতলের সংখ্যাও। যার জেরে চিন্তায় বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা।
আরও পড়ুন: ভাঙা হচ্ছে জোশীমঠে বিপজ্জনক বাড়ি ও হোটেল, নয়া ফাটল করণপ্রয়াগে
এই বিষয়ে হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ড বলেন, "প্রতিনিয়ত দার্জিলিংয়ে বহুতলের চাপ বাড়ছে। যে কোন দিন বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। রাজ্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। জোশীমঠের থেকে শিক্ষা নিতে হবে।" শিলিগুড়ি কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "হিমালয়ান প্লেট পরিবর্তন হচ্ছে। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা এই হিমালয়াম রিজিওন। প্রশাসনের উচিত বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে সেখানকার মাটি সহ যাবতীয় পরীক্ষা করে সেই অনুয়ায়ী পরিকল্পনায় ছাড়পত্র দেওয়া।" জিটিএ'র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক অনিত থাপার আশ্বাস, দার্জিলিঙের দায়িত্ব তাঁদের হাতে এলে বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে আইন কড়াভাবে প্রয়োগ করা হবে। ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা হবে বাঙালির আদি অকৃত্রিম ভালোবাসা দার্জিলিংকে ৷
আরও পড়ুন: ভিটে ছাড়তে নারাজ আক্রান্তরা, জোশীমঠ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে প্রশাসনের