কার্শিয়াং, ২৬ অক্টোবর : "আমিই পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে দেব। আমাকে সহযোগিতা করুন। পাহাড়ের মাটিতে সোনার খনি আছে। উন্নয়নের অনেক জায়গা আছে ৷" মঙ্গলবার কার্শিয়াংয়ের টাউন হলে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠকে এমনই প্রতিশ্রুতি দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পাহাড়বাসীর প্রত্যাশা মতো এদিন ওই দুই জেলার উন্নয়নে একাধিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়। উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত করে আমলাদের মধ্যে প্রশাসনিক রদবদলের ঘোষণাও করেন তিনি।
এতদিন গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ-র সচিব পদ সামলে আসছিলেন জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনার। যিনি আবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মুখ্যসচিব। এখন ওই তিন পদের দায়িত্বে রয়েছেন অজিতরঞ্জন বর্ধন। তিন পদ একসঙ্গে সামলাতে অজিতবাবুকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেই কারণে এখন থেকে জিটিএ-র সচিব পদ একদম আলাদা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে তিনি ৷ প্রশাসনিক বৈঠকে জিটিএ-র সচিব পদের দায়িত্ব দেওয়া হল দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুন্নমবলমকে ৷ মমতা জানান, যদি জেলাশাসকের অসুবিধা হয় তবে পরবর্তীতে অন্য আধিকারিককে ওই দায়িত্ব দেওয়া হবে ৷
এদিন পাহাড়ের উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়ের উন্নয়নের রোডম্যাপের জন্য অনিত থাপা, রোশন গিরি, গৌতম দেব ও পাহাড়ের প্রাক্তন বিধায়ক অমর সিং রাইয়ের নেতৃত্বে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেন তিনি। ওই কমিটি ডিসেম্বরের মধ্যে পাহাড়ের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাব তুলে দেবে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকের শুরুতে দার্জিলিং জেলার রঙলিয়ত ও পুলবাজার দুটি থানার উদ্বোধন করেন। একগুচ্ছ পরিকল্পনার মধ্যে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ও মিরিকে ‘জয় হিন্দ’ নামে চারটি কমিউনিটি হল তৈরি করার নির্দেশ দেন তিনি।
শুধু তাই নয়। এদিন পাহাড়ে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিল্পপতিদের বিনিয়োগের আহ্বান করেন মমতা। চা বাগানের ১৫% শতাংশ জমি ট্যুরিজমের জন্য দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও, টি ট্যুরিজমের ব্যাপারে আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য শিল্পপতিদের এগিয়ে আসতে বলেন। পাহাড়ের যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য ছোট ছোট আইটি পার্ক, স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে সরকারি প্রকল্পে যুবকদের অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহারের কথা জানান তিনি।
আরও পড়ুন :জিটিএ নির্বাচনের ইঙ্গিত, পাহাড়ে শীঘ্রই লাগু ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা
কৃষি বিপণন, পোলট্রি ব্রিডিং, মার্কেটিংয়ে যুবকদের ব্যবহারের পাশাপাশি পানীয় জলের সমস্যা মেটানো এবং পাহাড়ি ঝর্নার জল থেকে ছোট ছোট বটলিং কারখানা গড়ার মতো প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। এসব ছাড়াও হিল ইউনিভার্সিটির পঠনপাঠন চলতি শিক্ষাবর্ষেই শুরু করার নির্দেশ দেন। অনিত থাপার আবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো তৈরি না-হলেও অন্য কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শুরু করার ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দিয়েছেন মমতা। এছাড়া সিঙ্কোনা চা বাগানের ফাঁকা জমি ছোট পরিবেশ বান্ধব শিল্পর জন্য ব্যবহারের কথাও বলেন। পাহাড়ের যুবকদের পর্যটনে আরও বেশি ব্যবহারের জন্য তাঁদের স্কিল ডেভলপমেন্ট এবং গাইড হওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে সরাসরি পর্যটন বিভাগে চাকরির সুযোগের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷