কুশমণ্ডি, 25 অগাস্ট: ব্যস্ততার তেমন ছাপ নেই ৷ ঠুকঠাক শব্দে কাজ চলছে ধীর গতিতে ৷ বছরের অন্যান্য বছরের তুলনায় যা যথেষ্ট বেমানান ৷ রথযাত্রা শেষ হতে না হতেই কলকাতা সহ অন্যান্য জেলা ও রাজ্যের ছোটো-বড় বাজেটের পুজোগুলি থেকে মণ্ডপসজ্জার ডাক আসে দক্ষিণ দিনাজপুরের মহিষবাথানের হস্তশিল্পীদের কাছে ৷ কোরোনার কারণে এবার বেশিরভাগ পুজোই বন্ধ ৷ আবার কিছু পুজো হলেও আগের মতো জাঁকজমকের বালাই নেই ৷ তাই কাজ নেই মহিষবাথানের হস্তশিল্পীদের হাতে ৷ পুজোর আর বেশি দেরী নেই ৷ এখন আর কাজের বরাত আসবে বলে আশা নেই শিল্পীদের ৷
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডির মহিষবাথান পরিচিত মুখ বা মুখোশ শিল্পের জন্য । এলাকার প্রায় 130 জন হস্তশিল্পী বর্তমানে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে । কয়েক বছর আগেও এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বর্তমান প্রজন্ম । একরকম বিলুপ্তির পথে চলে গেছিল কুশমণ্ডির মুখোশ শিল্প । অবশেষে 2013 সালে বর্তমান সরকার ও বাংলা নাটক ডট কমের সহযোগিতায় কুশমণ্ডির মুখোশ শিল্প উন্নতির শিখরে পৌঁছতে থাকে । শুধুমাত্র জেলা নয় দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও মুখোশ তার নিজস্ব পরিচয় তৈরি করেছে । কুশমণ্ডির মহিষবাথান এলাকার একজন শিল্পী ইতিমধ্যে লন্ডন, ফ্রান্স থেকে ঘুরে এসেছেন । উপার্জনের নতুন দিশা দেখানোয় বর্তমানে এই শিল্পে নতুন প্রজন্ম আসতে শুরু করেছে । প্রত্যেক বছর জেলা তো বটেই কলকাতা সহ অন্যান্য জেলা থেকেও মণ্ডপসজ্জার জন্য মহিষবাথানের হস্তশিল্পীদের ডাক পড়ত । মিলত মুখোশের অর্ডারও ।
পুজোর ঠিক আগে মহিষবাথানের হস্তশিল্পীদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে । নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে দিনরাত এক করে মণ্ডপসজ্জার নতুন নতুন ভাবনা হাতের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন । গত বছর পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল । তবে এবার কোরোনা লকডাউনের জন্য এখনও কাজের বরাত মেলেনি কুশমণ্ডির মুখোশ শিল্পীদের । নতুন মুখোশ তৈরি করলেও বিক্রি হচ্ছে না । কোরোনা ও লকডাউনের জন্য শিল্পীরা কোথাও যেতে পারেননি । আবার কোনও ক্লাব বা পুজো উদ্যোক্তারাও তাদের কাছে আসেনি । প্রত্যেক বছর মহিষবাথান থেকে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় । এবছর সেটাও বন্ধ ৷ দীর্ঘদিন ধরে উপার্জন বন্ধ থাকায় মহিষবাথানের বহু হস্তশিল্পী অন্য পেশায় ঝুঁকছেন । পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে আগামী দিনে এই শিল্প থেকে নতুন প্রজন্ম আবার মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কায় মহিষবাথানের মুখোশ শিল্পীরা ।