কুশমন্ডি (দক্ষিণ দিনাজপুর), 24 অক্টোবর: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রাচীন কালীপুজোগুলির (Kali Puja 2022) মধ্যে অন্যতম ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী কুশমন্ডি (Kushmandi) ব্লকের আমিনপুরের 'মা মাটিয়া কালী'র (Maa Matia Kali) পুজো ৷ দীপান্বিতা অমাবস্যায় পূজিতা হন দেবী ৷ দীর্ঘ প্রায় 600 বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে ৷ তবে আজও মায়ের কোনও মন্দির নেই ৷ মাটির থানেই পুজো হয় ৷ ভক্তদের বিশ্বাস, পুজোর পর মা এখানে মাটিতেই মিশে যান !
ইংরেজ আমলে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় প্রায় 600 বছর আগে জমিদার যোগেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর উদ্যোগে শুরু হয় এই কালীপুজো ৷ কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেছিলেন যোগেন্দ্রনারায়ণ ৷ মায়ের নির্দেশ ছিল, মাটিতেই পুজো করতে হবে তাঁকে ৷ নির্মাণ করা যাবে না কোনও মন্দির ! তাই সেই সময় থেকেই মায়ের পুজো হয় মাটিতে ৷ এমনকী, মা মাটিতে থাকেন বলেই জমিদার বংশের সকলেও মাটিতেই শয়ন করতেন বলে শোনা যায় ! ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় রটন্তী কালী নামে মায়ের পুজো করে জয়লাভ করেছিল এই জমিদার বংশ। যদিও পরে মাটিতে থাকার কারণে এই রটন্তী কালীই এলাকাবাসীর কাছে 'মা মাটিয়া কালী' নামে পূজিতা হতে শুরু করেন ৷ এখনও এলাকার সকলে যেকোনও শুভ কাজ শুরু করার আগে মায়ের পুজো দেন ৷ যে কোনও মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য 'মা মাটিয়া কালীর' পুজো করেন তাঁরা ৷ দীপান্বিতা অমাবস্যায় মায়ের পুজোর সময় দূরদূরান্ত থেকে ভক্তদের সমাগম হয় ৷ বসে বিরাট মেলা ৷
আরও পড়ুন: ফাটিয়ে নয়, বাজি খেয়ে দীপাবলি কাটান ! বার্তা শহরের ঐতিহ্যশালী মিষ্টান্ন সংস্থার
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, 'মা মাটিয়া কালীর' থানের ঈশান কোণে ছিল একটি ঘর ৷ যেখানে এক সময় মায়ের গয়না রাখা হত ৷ তার পাশেই রয়েছে পঞ্চমুখী শিব ৷ মায়ের মন্দির না থাকলেও পঞ্চমুখী শিবের জন্য মন্দির তৈরি করা হয়েছে ৷ অনেকেই জানেন না, কুশমন্ডি ব্লকের আমিনপুরে রয়েছে পাঁচমাথা শিবের মন্দির ৷ লোকমুখে প্রচলিত আছে, এই পাঁচমাথা শিব মন্দিরের ইতিহাস 217 বছরেরও বেশি পুরনো ৷ দূরদুরান্ত থেকে দর্শনাথীরা আসেন আমিনপুরের শিবমন্দির আর 'মা মাটিয়া কালী'র দর্শন করতে ৷ বর্তমানে জমিদারি প্রথা উঠে গিয়েছে ৷ তাই পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন পূর্বতন জমিদারদের এক সেবায়েত ও তাঁর বংশধররা ৷
সেবায়েত বংশের বর্তমান প্রতিনিধি দীপা সিংহ বলেন, "জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পর থেকে আমরাই পুজোর দেখাশোনা করি ৷ মাটিয়া কালীর পুজো দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ কালীপুজোয় ভিড় জমান ৷ প্রাচীন রীতি মেনে আজও এই পুজোয় ছাগল বলি দেওয়া হয় ৷"
স্থানীয় বাসিন্দা অনিমা সিংহ বললেন, "প্রায় 600 বছর আগে জমিদার যোগেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর উদ্যোগে এই পুজো শুরু হয় ৷ স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের পুজো শুরু করেছিলেন তিনি ৷ কালীপুজোর সময় এখানে প্রচুর ভিড় হয় ৷ মায়ের পুজো দিলে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় ৷"