ETV Bharat / state

Balurghat TMC Woman Wing: দণ্ডবৎ প্রত্যাবর্তনে পঞ্চায়েতের মুখে ব্যাকফুটে তৃণমূল, পিছনে রাজনীতির জটিল প্যাঁচ - দক্ষিণ দিনাজপুর মহিলা তৃণমূল

দণ্ডি কাটিয়ে আদিবাসী মহিলাদের দলে ফেরানোর ঘটনায় ইতিমধ্যেই পদ খুইয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের মহিলা তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী ৷ এবার তাঁকে সংগঠনের সভানেত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে দল ৷

ETV Bharat
ফাইল ছবি
author img

By

Published : Apr 10, 2023, 6:20 PM IST

বালুরঘাট, 10 এপ্রিল: রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন কোনও সাম্প্রতিক ঘটনা নয় ৷ রাজনীতিতে বিষয়টি নতুনও নয় ৷ কিন্তু দল বদলের 'অপরাধে' আদিবাসী মহিলাদের দিয়ে দণ্ডি কাটানোর মতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা জেলা রাজনীতিতে আমদানি করে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত নাম দক্ষিণ দিনাজপুর মহিলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভানেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী ৷ তিন আদিবাসী মহিলাকে দণ্ডি কাটিয়ে দলে ফের যোগদান করিয়ে বর্তমানে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি ৷

প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর এমন কাজ সমর্থন করেনি রাজ্যের শাসকদল ৷ ঘটনায় খুশি নন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ তাঁর নির্দেশে রবিবারই প্রদীপ্তাকে জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই ইস্যুতে যাতে আদিবাসী সমাজের কাছে ভুল বার্তা না যায়, তার জন্য ওই পদে নিয়ে আসা হয়েছে ওই সমাজেরই প্রতিনিধি স্নেহলতা হেমব্রমকে ৷

কিন্তু এই কাজ কেন করলেন প্রদীপ্তা ? এই রাজনীতির পিছনে কোন না জানা কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে ? সেটাই জানার চেষ্টা করেছে ইটিভি ভারত ৷ মূল ঘটনাটি ঘটেছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের আদিবাসী অধ্যুষিত তপন ব্লকে ৷ গত বৃহস্পতিবার ওই ব্লকের গোফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাদ সানকৈর গ্রামে একটি যোগদান কর্মসূচির আয়োজন করেছিল বিজেপি ৷ পদ্ম শিবিরের দাবি, ওই শিবিরে প্রায় 200 জন তৃণমূল কর্মী তাদের দলে যোগ দেন ৷

এরপরের রাতেই ঘটে সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা ৷ চার আদিবাসী মহিলাকে বালুরঘাট শহরে থাকা বিজেপি পার্টি অফিস থেকে শাসকদলের পার্টি অফিস পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা দণ্ডি কাটানো হয় ৷ তারপর তাঁদের ঘাসফুল শিবিরে ফিরিয়ে নেওয়া হয় ৷ এই ঘটনার নেতৃত্ব দেন রাজ্যের প্রাক্তন কারামন্ত্রী শংকর চক্রবর্তীর পুত্রবধূ প্রদীপ্তা চক্রবর্তী ৷ সেদিন তিনি ওই চার মহিলার তৃণমূলে পুনরায় যোগদানের জন্য নিজে কৃতিত্বও নেন ৷

এমন ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্যজুড়ে ৷ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই ঘটনা যে শাসকদলকে বেকায়দায় ফেলতে পারে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব ৷ তাই তড়িঘড়ি গঠিত হয় তদন্ত কমিটি ৷ সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তৃণমূলের তরফে জানানো হয় গোটা ঘটনার দায় প্রদীপ্তার ৷ তিনি দলের কোনও অনুমোদন না নিয়েই এই কর্মসূচি করেছিলেন ৷

আরও জানা গিয়েছে, যে চার আদিবাসী মহিলাকে প্রদীপ্তা দলে যোগদান করিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলেরই কর্মী ৷ তাঁদের একজন আবার দলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের স্ত্রী ৷ রাজ্যের কাছে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই তিনি এই কাজ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে ৷ বিজেপিতে যাওয়ার ফল কী হতে পারে সেই বার্তা দিতেও প্রদীপ্তা একাজ করে থাকতে পারেন ৷ এরপরেই প্রদীপ্তাকে জেলা মহিলা তৃণমূল সভানেত্রীর পদ থেকে অপসারিত করা হয় ৷

আরও পড়ুন: এক কিমি দণ্ডি কেটে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ চার আদিবাসী মহিলার

কিন্তু কেন এত কিছু ! আসলে গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে গোফানগর পঞ্চায়েতের রাজনৈতিক অবস্থান ৷ একসময় এই পঞ্চায়েত আরএসপি'র দুর্গ ছিল ৷ 2013 এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে আরএসপি'কে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল ৷ 2018 এর নির্বাচনেও সেই ছবির বদল হয়নি ৷ কিন্তু 2019 এর লোকসভা নির্বাচন থেকেই এখানকার রাজনৈতিক ছবিটা বদলাতে শুরু করে ৷ শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতি দেখে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন ৷ গত বিধানসভা ভোটে তার প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ এই পঞ্চায়েতে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি ৷

জানা গিয়েছে, এবারের পঞ্চায়েত ভোটে গোফানগর নিজেদের দখলে রাখতে প্রদীপ্তাকেই দায়িত্ব দেয় তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব ৷ এরপর থেকেই তিনি নিজের নির্বাচনী নকশা তৈরি করেন ৷ শুক্রবার রাতের ঘটনা সেই নকশারই বাস্তবায়ন ৷ কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, পুত্রবধূর এই নকশার কথা কি জানতেন না তাঁর শ্বশুর, প্রাক্তন মন্ত্রী শংকর চক্রবর্তী ? নাকি এই নকশায় তাঁরও সায় ছিল ৷ দলের জেলা নেতৃত্ব চাইছে, পঞ্চায়েতের আগে প্রদীপ্তা দলের গায়ে যে কালো দাগ লাগিয়ে দিয়েছে, তা পুরোপুরি মুছতে রাজ্য নেতৃত্ব শংকরবাবুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করুক ৷ একইসঙ্গে প্রদীপ্তাকে বালুরঘাট পৌরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন পদ থেকেও অপসারিত করা হোক ৷ নইলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের রোষ ব্যালটে গিয়ে পড়বে ৷

আরও পড়ুন: দণ্ডি কাটা বিতর্কের জেরে পদ খোয়ালেন দক্ষিণ দিনাজপুরের মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী, আনা হল আদিবাসী মুখ

বালুরঘাট, 10 এপ্রিল: রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন কোনও সাম্প্রতিক ঘটনা নয় ৷ রাজনীতিতে বিষয়টি নতুনও নয় ৷ কিন্তু দল বদলের 'অপরাধে' আদিবাসী মহিলাদের দিয়ে দণ্ডি কাটানোর মতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা জেলা রাজনীতিতে আমদানি করে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত নাম দক্ষিণ দিনাজপুর মহিলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভানেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী ৷ তিন আদিবাসী মহিলাকে দণ্ডি কাটিয়ে দলে ফের যোগদান করিয়ে বর্তমানে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি ৷

প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর এমন কাজ সমর্থন করেনি রাজ্যের শাসকদল ৷ ঘটনায় খুশি নন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ তাঁর নির্দেশে রবিবারই প্রদীপ্তাকে জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই ইস্যুতে যাতে আদিবাসী সমাজের কাছে ভুল বার্তা না যায়, তার জন্য ওই পদে নিয়ে আসা হয়েছে ওই সমাজেরই প্রতিনিধি স্নেহলতা হেমব্রমকে ৷

কিন্তু এই কাজ কেন করলেন প্রদীপ্তা ? এই রাজনীতির পিছনে কোন না জানা কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে ? সেটাই জানার চেষ্টা করেছে ইটিভি ভারত ৷ মূল ঘটনাটি ঘটেছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের আদিবাসী অধ্যুষিত তপন ব্লকে ৷ গত বৃহস্পতিবার ওই ব্লকের গোফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাদ সানকৈর গ্রামে একটি যোগদান কর্মসূচির আয়োজন করেছিল বিজেপি ৷ পদ্ম শিবিরের দাবি, ওই শিবিরে প্রায় 200 জন তৃণমূল কর্মী তাদের দলে যোগ দেন ৷

এরপরের রাতেই ঘটে সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা ৷ চার আদিবাসী মহিলাকে বালুরঘাট শহরে থাকা বিজেপি পার্টি অফিস থেকে শাসকদলের পার্টি অফিস পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা দণ্ডি কাটানো হয় ৷ তারপর তাঁদের ঘাসফুল শিবিরে ফিরিয়ে নেওয়া হয় ৷ এই ঘটনার নেতৃত্ব দেন রাজ্যের প্রাক্তন কারামন্ত্রী শংকর চক্রবর্তীর পুত্রবধূ প্রদীপ্তা চক্রবর্তী ৷ সেদিন তিনি ওই চার মহিলার তৃণমূলে পুনরায় যোগদানের জন্য নিজে কৃতিত্বও নেন ৷

এমন ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্যজুড়ে ৷ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই ঘটনা যে শাসকদলকে বেকায়দায় ফেলতে পারে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব ৷ তাই তড়িঘড়ি গঠিত হয় তদন্ত কমিটি ৷ সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তৃণমূলের তরফে জানানো হয় গোটা ঘটনার দায় প্রদীপ্তার ৷ তিনি দলের কোনও অনুমোদন না নিয়েই এই কর্মসূচি করেছিলেন ৷

আরও জানা গিয়েছে, যে চার আদিবাসী মহিলাকে প্রদীপ্তা দলে যোগদান করিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলেরই কর্মী ৷ তাঁদের একজন আবার দলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের স্ত্রী ৷ রাজ্যের কাছে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই তিনি এই কাজ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে ৷ বিজেপিতে যাওয়ার ফল কী হতে পারে সেই বার্তা দিতেও প্রদীপ্তা একাজ করে থাকতে পারেন ৷ এরপরেই প্রদীপ্তাকে জেলা মহিলা তৃণমূল সভানেত্রীর পদ থেকে অপসারিত করা হয় ৷

আরও পড়ুন: এক কিমি দণ্ডি কেটে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ চার আদিবাসী মহিলার

কিন্তু কেন এত কিছু ! আসলে গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে গোফানগর পঞ্চায়েতের রাজনৈতিক অবস্থান ৷ একসময় এই পঞ্চায়েত আরএসপি'র দুর্গ ছিল ৷ 2013 এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে আরএসপি'কে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল ৷ 2018 এর নির্বাচনেও সেই ছবির বদল হয়নি ৷ কিন্তু 2019 এর লোকসভা নির্বাচন থেকেই এখানকার রাজনৈতিক ছবিটা বদলাতে শুরু করে ৷ শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতি দেখে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন ৷ গত বিধানসভা ভোটে তার প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ এই পঞ্চায়েতে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি ৷

জানা গিয়েছে, এবারের পঞ্চায়েত ভোটে গোফানগর নিজেদের দখলে রাখতে প্রদীপ্তাকেই দায়িত্ব দেয় তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব ৷ এরপর থেকেই তিনি নিজের নির্বাচনী নকশা তৈরি করেন ৷ শুক্রবার রাতের ঘটনা সেই নকশারই বাস্তবায়ন ৷ কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, পুত্রবধূর এই নকশার কথা কি জানতেন না তাঁর শ্বশুর, প্রাক্তন মন্ত্রী শংকর চক্রবর্তী ? নাকি এই নকশায় তাঁরও সায় ছিল ৷ দলের জেলা নেতৃত্ব চাইছে, পঞ্চায়েতের আগে প্রদীপ্তা দলের গায়ে যে কালো দাগ লাগিয়ে দিয়েছে, তা পুরোপুরি মুছতে রাজ্য নেতৃত্ব শংকরবাবুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করুক ৷ একইসঙ্গে প্রদীপ্তাকে বালুরঘাট পৌরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন পদ থেকেও অপসারিত করা হোক ৷ নইলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের রোষ ব্যালটে গিয়ে পড়বে ৷

আরও পড়ুন: দণ্ডি কাটা বিতর্কের জেরে পদ খোয়ালেন দক্ষিণ দিনাজপুরের মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী, আনা হল আদিবাসী মুখ

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.