ETV Bharat / state

TMC Leader Murder Case: গরীবের মেয়ের বিয়েতে 'মুশকিল আসান' ছিলেন সইফুদ্দিন, তারপরেও কেন... উত্তর খুঁজছে দলুয়াখাকি

TMC Leader Shot Dead in Jaynagar: দুস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়াতেন তিনি ৷ গ্রামের মেয়েদের বিয়েতে টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন মৃত তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর ৷

TMC Leader Shot Dead in Jaynagar
তৃণমূল নেতা সাইফুদ্দিন লস্কর
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 14, 2023, 7:58 PM IST

ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে জয়নগরে খুন তৃণমূল নেতা !

জয়নগর, 14 নভেম্বর: সোমবার নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে ৷ এলাকায় জনদরদী নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এলাকায় দুঃস্থ মেয়েদের বিয়ের জন্য সাহায্য করতেন এই তৃণমূল নেতা । আর্থিক অভাবে কোনও মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, খবর পেলেই সেখানে ছুটে যেতেন তিনি ৷ সেই মেয়ের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন এবং আর্থিক সাহায্য করতেন । এমনকী সইফুদ্দিনকে খুনে অভিযুক্ত মৃত সাহাবুদ্দিনের মেয়ের সামনেই বিয়ে। তাই গত মঙ্গলবারই সইফুদ্দিনের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি, সাহাবুদ্দিনের মেয়ের বিয়ের জন্য 15 হাজার টাকা দিয়েছিলেন মৃত তৃণমূল নেতা বলে। এরপরেও কোন আক্রোশে সইফুদ্দিনকে খুন করল সাহাবুদ্দিন, সেই উত্তর খুঁজে চলেছে প্রতিবেশীরা ।

সোমবারের ঘটনার পরেই জতুগৃহ হয়ে ওঠে জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রাম । গ্রামের একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন বেছে বেছে বিরোধীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে । এতে বাড়িতে রাখা শস্য ক্ষতি হয়েছে । এই পরিস্থিতির পর মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিনের উত্থানটা ও রূপকথার গল্পের মতন ৷ জয়নগরের মহিষমারিতে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সইফুদ্দিনের কর্মজীবনের শুরুটা বারুইপুর আদালতে মুহুরির কাজ করে। বিয়ে হয় সরিফা বিবি লস্করের সঙ্গে । স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তারপরেই নাকি তরতর করে উন্নতি হয়েছে সইফুদ্দিনের । বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন তিনি । মুহুরির কাজ করার সুবাদে পুলিশের সঙ্গে বেশ ভাল চেনাজানা ছিল তাঁর। তবে সইফুদ্দিনের রাজনীতিতে এসে পড়াটা আচমকাই বলে জানাচ্ছে স্থানীয় নেতৃত্ব।

জানা গিয়েছে, 2011 সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হতেই তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন সইফুদ্দিন । কিছুদিনের মধ্যে মুহুরির কাজ ছেড়ে দেন তিনি। তারপর জয়নগর থানায় ডাকমাস্টারের কাজ শুরু করেন । প্রতিবেশীরা বলছেন, তখন থেকেই এলাকায় প্রভাব বাড়তে থাকে সইফুদ্দিনের। ক্রমশ শাসকদলের আরও ঘনিষ্ঠ হন তিনি। 2018 সালে বামনগাছি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি করা হয় সইফুদ্দিনকে। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পান স্ত্রী। সইফুদ্দিনের স্ত্রী জেতার পরেই পুরো পরিবারের চালচলনই নাকি বদলে যায়। সইফুদ্দিনের এক প্রতিবেশীর কথায়, "এলাকায় ওর কথাতেই সব চলত।"

2023 সালের পঞ্চায়েত ভোটে স্ত্রীর পাশাপাশি নিজেও ভোটে দাঁড়ান সইফুদ্দিন। এবার সস্ত্রীক ভোটে জেতেন তিনি । এবারও বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন স্ত্রী সেরিফা। মৃত সইফুদ্দিনের ঘনিষ্ঠদের দাবি, রোজ লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হত তাঁর হাত ধরে । জীবনযাত্রাতেও বদল আসে । এখন আর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন না সাইফুদ্দিন । চোখধাঁধানো বাড়ি তৈরি করেন তিনি ।

যদিও সইফুদ্দিনের ব্যবসা ঠিক কীসের, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি । এই খুনের পিছনে পাঁচজন ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে । পুলিশের অনুমান, ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরেই খুন হয়েছেন এই তৃণমূল নেতা । জেলার পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি জানান, দু'টি বাইকে চারজন এসেছিল। তারপর গুলি চলে। একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । একজন মারা গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের দলে থাকা সাহাবুদ্দিন লস্কর নামে একজনকে জনতা ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ ।

আরও পড়ুন:

  1. নমাজ পড়তে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির
  2. তৃণমূল নেতা খুনে জয়নগরে ধুন্ধুমার; অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা, জ্বলছে গ্রাম
  3. জোড়া খুনে অগ্নিগর্ভ জয়নগর, সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি জ্বালানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে

ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে জয়নগরে খুন তৃণমূল নেতা !

জয়নগর, 14 নভেম্বর: সোমবার নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে ৷ এলাকায় জনদরদী নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এলাকায় দুঃস্থ মেয়েদের বিয়ের জন্য সাহায্য করতেন এই তৃণমূল নেতা । আর্থিক অভাবে কোনও মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, খবর পেলেই সেখানে ছুটে যেতেন তিনি ৷ সেই মেয়ের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন এবং আর্থিক সাহায্য করতেন । এমনকী সইফুদ্দিনকে খুনে অভিযুক্ত মৃত সাহাবুদ্দিনের মেয়ের সামনেই বিয়ে। তাই গত মঙ্গলবারই সইফুদ্দিনের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি, সাহাবুদ্দিনের মেয়ের বিয়ের জন্য 15 হাজার টাকা দিয়েছিলেন মৃত তৃণমূল নেতা বলে। এরপরেও কোন আক্রোশে সইফুদ্দিনকে খুন করল সাহাবুদ্দিন, সেই উত্তর খুঁজে চলেছে প্রতিবেশীরা ।

সোমবারের ঘটনার পরেই জতুগৃহ হয়ে ওঠে জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রাম । গ্রামের একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন বেছে বেছে বিরোধীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে । এতে বাড়িতে রাখা শস্য ক্ষতি হয়েছে । এই পরিস্থিতির পর মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিনের উত্থানটা ও রূপকথার গল্পের মতন ৷ জয়নগরের মহিষমারিতে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সইফুদ্দিনের কর্মজীবনের শুরুটা বারুইপুর আদালতে মুহুরির কাজ করে। বিয়ে হয় সরিফা বিবি লস্করের সঙ্গে । স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তারপরেই নাকি তরতর করে উন্নতি হয়েছে সইফুদ্দিনের । বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন তিনি । মুহুরির কাজ করার সুবাদে পুলিশের সঙ্গে বেশ ভাল চেনাজানা ছিল তাঁর। তবে সইফুদ্দিনের রাজনীতিতে এসে পড়াটা আচমকাই বলে জানাচ্ছে স্থানীয় নেতৃত্ব।

জানা গিয়েছে, 2011 সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হতেই তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন সইফুদ্দিন । কিছুদিনের মধ্যে মুহুরির কাজ ছেড়ে দেন তিনি। তারপর জয়নগর থানায় ডাকমাস্টারের কাজ শুরু করেন । প্রতিবেশীরা বলছেন, তখন থেকেই এলাকায় প্রভাব বাড়তে থাকে সইফুদ্দিনের। ক্রমশ শাসকদলের আরও ঘনিষ্ঠ হন তিনি। 2018 সালে বামনগাছি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি করা হয় সইফুদ্দিনকে। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পান স্ত্রী। সইফুদ্দিনের স্ত্রী জেতার পরেই পুরো পরিবারের চালচলনই নাকি বদলে যায়। সইফুদ্দিনের এক প্রতিবেশীর কথায়, "এলাকায় ওর কথাতেই সব চলত।"

2023 সালের পঞ্চায়েত ভোটে স্ত্রীর পাশাপাশি নিজেও ভোটে দাঁড়ান সইফুদ্দিন। এবার সস্ত্রীক ভোটে জেতেন তিনি । এবারও বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন স্ত্রী সেরিফা। মৃত সইফুদ্দিনের ঘনিষ্ঠদের দাবি, রোজ লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হত তাঁর হাত ধরে । জীবনযাত্রাতেও বদল আসে । এখন আর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন না সাইফুদ্দিন । চোখধাঁধানো বাড়ি তৈরি করেন তিনি ।

যদিও সইফুদ্দিনের ব্যবসা ঠিক কীসের, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি । এই খুনের পিছনে পাঁচজন ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে । পুলিশের অনুমান, ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরেই খুন হয়েছেন এই তৃণমূল নেতা । জেলার পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি জানান, দু'টি বাইকে চারজন এসেছিল। তারপর গুলি চলে। একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । একজন মারা গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের দলে থাকা সাহাবুদ্দিন লস্কর নামে একজনকে জনতা ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ ।

আরও পড়ুন:

  1. নমাজ পড়তে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির
  2. তৃণমূল নেতা খুনে জয়নগরে ধুন্ধুমার; অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা, জ্বলছে গ্রাম
  3. জোড়া খুনে অগ্নিগর্ভ জয়নগর, সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি জ্বালানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.