সাগর, 6 নভেম্বর : গত 10 বছর ধরে গঙ্গাসাগর মেলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সদ্যপ্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৷ বস্তুত, গঙ্গাসাগর মেলার আমূল পরিবর্তন ঘটেছিল তাঁরই হাত ধরে ৷ শরীর বৃদ্ধ হলেও তরুণদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মেলার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতেন তিনি ৷ প্রতি বছর 11 জানুয়ারি থেকে 16 জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা বসে গঙ্গাসাগরে ৷ চলে পুণ্যস্নান ৷ আর মেলা শুরুর ঠিক একদিন আগে, 10 জানুয়ারি সাগরে চলে আসতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৷ মাঝের ক’টা দিন কার্যত ছুটে বেড়াতেন তিনি ৷ 16 জানুয়ারি বিকেলে অথবা রাতে ফিরতেন কলকাতায় ৷ সুব্রতর প্রয়াণে মন খারাপের ছায়া তাঁর সাধের এই গঙ্গাসাগরে ৷
আরও পড়ুন : Subrata-Jyoti Basu : কংগ্রেস হারায় সুব্রতর বাড়িতে হামলা হয়, বাঁচিয়েছিলেন জ্যোতি বসু
সাগরে মেলার দিনগুলোয় সুব্রত থাকতেন জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের আবাসন ‘উর্মিমুখর’-এ ৷ সেই সময় জনসাধারণ এবং দলের নেতা, কর্মীদের জন্য সবসময়েই খোলা থাকত তাঁর দুয়ার ৷ মেলাপ্রাঙ্গণে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড়ের মধ্যে বসেই বহু মানুষের সমস্যার সমাধান করতেন তিনি ৷ সঙ্গে চলত গঙ্গাসাগরের সৌন্দর্যায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে এলাকার বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার সঙ্গে নানা আলোচনা ও রূপরেখা তৈরির কাজ ৷ মেলা শেষে কলকাতায় ফিরে সেসব মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেন সুব্রত ৷ সেই মতোই পদক্ষেপ করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ আর এভাবেই ধাপে ধাপে সারা হচ্ছিল গঙ্গাসাগরের যাবতীয় উন্নয়ন প্রকল্প ৷
মেলার ক’দিন রোজ সন্ধেবেলায় অন্যান্য মন্ত্রী ও বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রতটে মেলা অফিসে পৌঁছে যেতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৷ সেখানে বসেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হতেন তিনি ৷ জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের আবাসন থেকে মেলা অফিসে যাওয়ার পথে মেলা প্রাঙ্গণেই একটি চায়ের দোকানে বসে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন সুব্রত ৷ এটা ছিল তাঁর ওই ক’দিনের রোজের রুটিন ৷ সুযোগ পেলেই সাধুদের আখড়ায় ঢুকে সময় কাটানো, মকর সংক্রান্তিতে পুণ্যার্থীদের সঙ্গেই সাগরে নেমে স্নান সারা, এভাবেই সুব্রতকে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ ৷
গত 15 বছর ধরে উর্মিমুখর আবাসনের পাশে একটি অস্থায়ী চায়ের দোকান রয়েছে ভৃগুরাম দাসের ৷ তাঁর স্মৃতিতে এখনও টাটকা সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের নানা মুহূর্ত ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে তিনি জানান, গঙ্গাসাগর মেলা চলাকালীন রোজ প্রাতঃভ্রমণ সেরে তাঁর দোকানেই সকালের চা খেতে আসতেন মন্ত্রী ৷ নামী মানুষ ৷ তাই চায়ের দাম নিতে চাইতেন না ভৃগুরাম ৷ কিন্তু, প্রতিবারই সুব্রত চায়ের দাম মিটিয়ে তবেই দোকান ছাড়তেন ৷ সেকথা বলতে গিয়ে গলার স্বর বুজে এল ‘মামুলি’ চা-দোকানির ৷
আরও পড়ুন : Partha chatterjee-Subrata Mukherjee : যুবক সুব্রতর ছবি শেয়ার করে কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণা পার্থর
প্রয়াত নেতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ভারাক্রান্ত সাগরের বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরাও ৷ তিনি বলেন, ‘‘1972 সালে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিই ৷ দীর্ঘদিন ওঁর সঙ্গে একান্তে কাটিয়েছি ৷ সাগর দ্বীপের উন্নয়ন ও গঙ্গাসাগরের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে ওঁর সঙ্গে প্রচুর কথা হত ৷ অনেক ঘটনার সাক্ষী থেকেছি ৷ সুব্রতবাবুর জন্যই মেলার পরিকাঠামোর এতটা উন্নতি হয়েছে ৷ তাঁর লক্ষ্য ছিল, গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করানো ৷’’