মালদা, 14 অক্টোবর: মাস দেড়েক আগেই বাঁধের গায়ে ধাক্কা দিয়েছিল গঙ্গা(Ganga Erosion in Malda) ৷ জারি হয়েছিল লাল সতর্কতা (Red Alert in Malda) ৷ তখন ঘোর বর্ষা ৷ নদীর জলস্তর বৃদ্ধি স্বাভাবিকই ছিল ৷ কিন্তু কালীপুজোর মুখেও গঙ্গার জলস্তর যে বিপদসীমা পেরোবে, আরও একবার যে নদীতে লাল সতর্কতা জারি হবে, বুঝতে পারেননি মানিকচক ব্লকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর হুকুমতটোলার কেউ ৷ বাস্তবে সেটাই হয়েছে ৷ নদীর জল ফের ধাক্কা দিচ্ছে বাঁধের গায়ে ৷ একই সঙ্গে চলছে গঙ্গার ভাঙন ৷ মালদার মানিকচকের হুকুমতটোলা গ্রামের বাসিন্দারা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন ৷
তৃণমূলের বুথ সভাপতি মহম্মদ আয়েশ আলি ৷ ঠাকুরদার সাড়ে তিনশো বিঘা জমি ছিল গঙ্গার ধারে ৷ তখন নদী অনেক দূরে ছিল ৷ 1995 থেকে 97 সাল পর্যন্ত ভাঙনে তার বেশিরভাগই তলিয়ে গিয়েছে৷ 97 সালে আয়েশ সাহেব পরিবার নিয়ে চলে আসেন উত্তর হুকুমতটোলায় ৷ নিজে গঙ্গাপাড়ে 17 বিঘা জমি কেনেন ৷ সব মিলিয়ে 50 বিঘারও বেশি জমি ৷ সেখানেই চাষাবাদ করতেন ৷ প্রতিদিন অন্তত 100 মজুর জমিতে চাষ করত ৷ দিন বদলের সঙ্গে ভাগ্যও বদলে গিয়েছে আয়েশ সাহেবের ৷ গঙ্গা ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে জমি ৷ বর্তমানে মাত্র 22 বিঘা জমির অস্তিত্ব আছে ৷
এই প্রসঙ্গেই তৃণমূলের বুথ সভাপতি আয়েশ সাহেব বলেন, “আগে আমি দিনে 100 শ্রমিক খাটাতাম ৷ এখন নিজেই শ্রমিক ৷ তিন মেয়ে, এক ছেলে লেখাপড়া করে ৷ ওদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই শিউড়ে উঠছি ৷ সরকারও তো এখন বিনা পয়সায় চাকরি দেয় না ৷ যেটুকু জমি বেঁচে আছে, দু’বছরেই শেষ হয়ে যাবে ৷ শুধু জমি কেন, পুরো গ্রামটাই শেষ হয়ে যাবে ৷ গঙ্গায় নিঃস্ব হতে বসলেও প্রশাসন বা সরকার আমাদের কথা কিছু ভাবেনি ৷ আমাদের বাঁচাতে কিছু করছেও না ৷ গঙ্গার ভাঙনে এর আগে তিনবার ভিটে বদলাতে হয়েছে ৷ এবার কোথায় যাব ? ভোট আসলে নেতারা আসেন ৷ আমাদের ভাঙন রোধ আর পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেন৷ ফের ভুলে যান ৷ আবার ভোট আসছে ৷ এবারও নেতারা আসবেন ৷ তাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখব, আমরা ভোট কেন দেব ?”
আরও পড়ুন : ঠাকুর জলে পড়তেই ফের ভাঙন শুরু, কালিয়াচকে মন্দির গিলে খেল গঙ্গা
জেলা সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার উত্তমকুমার পাল জানিয়েছেন, গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভাঙন রোধের কাজের জন্য একটি পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে ৷ কিন্তু এখন নদীতে প্রচুর জল ৷ গঙ্গা তার বিপদসীমা ছাপিয়ে গিয়েছে৷ এই সময় কোনও কাজ করা যাবে না ৷ তাই ডিসেম্বরে ওই কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ৷ তবে ভাঙন পরিস্থিতির উপরেও নজর রাখা হচ্ছে ৷