দক্ষিণ 24 পরগনা, 4 নভেম্বর: আলোর উৎসব দীপাবলি । দীপাবলি ও কালীপুজোর রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে দেখা যায় রঙিন আলোর ছটা। হাজার হাজার আতসবাজির মেলা। কিন্তু সংক্রমণের কারণে বাধা-নিষেধ থাকায় গত বছর রাজ্যে মার খেয়েছিল বাজির ব্যবসা ৷ ফলে গতবছর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন বাজি ব্যবসায়ীরা। অনেকটা ম্লান হয়েছিল আলোর উৎসব ৷
এবছরও, প্রথমে হাইকোর্ট যেকোনও রকম বাজি পোড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ৷ সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ব্যবসায়ীরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন দক্ষিণ 24 পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার বাজি ব্যবসায়ীরা। পরিবেশবান্ধব আতসবাজি যাকে গ্রিন ক্র্যাকারসও বলা হচ্ছে, সেগুলি পোড়ানোতে ছাড়পত্র দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ কিন্তু পরিবেশবান্ধব আতসবাজি কোনগুলি, তা এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা ৷ ফলে তৈরি হয়েছে ধন্দ ৷ গত বছরের বিক্রি না হওয়া প্রচুর বাজি এখনও রয়ে গিয়েছে, এবছরও টাকা ঋণ নিয়ে বাজি তৈরি করেছিলেন ব্য়বসায়ীরা ৷ যার মধ্যে সিংহভাগ প্রচলিত আতসবাজিই ছিল ৷ শেষ মুহূর্তে এখন শীর্ষ আদালত শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানোয় ছাড়পত্র দেওয়ায় বাকি বিপুল পরিমাণ বাজির কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা ৷
আরও পড়ুন : Green Firecracker : পরিবেশ বান্ধব বাজিতে সম্মতি কলকাতা হাইকোর্টের
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর শিবকাশীর মতোই এরাজ্যের বারুইপুরের চম্পাহাটি-হাড়ালের অর্থনীতি অনেকাংশে বাজি শিল্পের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আদালতের একের পর এক রায়ে আজ সেই বাজির ব্যবসা অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগতে শুরু করেছে। পুজো, দীপাবলি, জগদ্ধাত্রী পুজোর বাজির জোগান দিতে বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই বিপুল টাকা ঋণ নিয়ে আতসবাজির মালমশলা কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত বছর করোনার জেরে বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এবছর কিছুটা ছাড় মিললেও আদালতের কড়া নির্দেশে প্রায় খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছেন বাজি শিল্পের উপর নির্ভরশীল কয়ে হাজার মানুষ। এমনটাই দাবি বাজি ব্য়বসায়ীদের ৷
১৯৬০ সালে বাজি তৈরির কাজ শুরু হয় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বেগমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাড়ালে। চম্পাহাটি, বেগমপুর ও দক্ষিণ গড়িয়া এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৯টি গ্রামে কুটির শিল্প হিসেবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বাজি শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ। মূলত কালীপুজো, দীপাবলির বাজারকে কেন্দ্র করে এই সময়ে এখানে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশে এখন সবটাই অনিশ্চিত ৷ আতসবাজি ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র শঙ্কর মণ্ডল বলেন, "ব্যবসা প্রায় বন্ধ বলা চলে। হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আগামী দিনে বাজি ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে ।" গত প্রায় 2 বছরে কমেছে বাজির ক্রেতার সংখ্যাও ৷ এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন আতসবাজি ব্য়বসায়ীরা ৷