কালীতলা (দক্ষিণ ২৪ পরগনা), 14 জুলাই : চিকিৎসকরা সত্যটা বলে দিয়েছিলেন । ভরতি না নিয়ে ফেরত পাঠিয়েছিলেন দেহ । কিন্তু, তা মেনে নিতে পারেনি পরিবার । আর তাই সাপে কাটা মহিলাকে ওঝার ভরসায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেখে দিল তারা । আশা, হয়তো বেঁচে উঠবেন ।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কালীতলার ওই মহিলার নাম মণিমালা দাস (29) । তাঁর স্বামী বলরাম দাস পেশায় মৎস্যজীবী । বলরাম জানান, রাত 11টা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা । রাত তখন 2টো হবে । স্ত্রী মণিমালা বলরামকে জানান, সাপে কাটার কথা । কিন্তু, চিকিৎসক নয়, ওঝাকে খবর দিয়েছিলেন বলরাম । যিনি এসে নিজের মতো করে কাজ শুরু করেছিলেন । যদিও সম্ভবত অবস্থা বেগতিক বুঝে হাত গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনিও । তখনই ওই মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ওঝার ।
রাতে সাপ কাটলেও সকালের আগে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি ওই মণিমালাকে । হাসপাতালে নিয়ে গেলে মহিলাকে মৃত বলে জানিয়ে দেওয়া হয় । তারপর শুরু হয় আর এক ওঝার কেরামতি । শুরু হয় মৃতদেহে প্রাণ ফেরানোর আশা জাগিয়ে ঝাড়ফুঁক ।
সম্ভবত সে সময় খবরটা পৌঁছায় স্থানীয় হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানায় । মৃত মণিমালার বাড়িতে যায় পুলিশ । দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তারা । আপত্তি তোলেন স্বয়ং বলরাম । স্ত্রীর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠাতে রাজি হননি তিনি । সেই আপত্তি অবশ্য ধোপে টেকেনি । আর মৃতদেহে প্রাণ ফেরাতে গিয়ে পুলিশের হাতে পাকড়াও হন ওঝা সঞ্জীব দাস । যদিও ওঝার দাবি, তিনি নাকি মৃতদেহ থেকে বিষ সরাতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছেন । তাঁর চিকিৎসায় নাকি সাড়া দিতে থাকে মৃতদেহ, দাবি সঞ্জীবের ।
অনেক সময় ওঝাদের হাত ঘুরে সর্পদষ্টারা যতক্ষণে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে পৌঁছান, অনেক দেরি হয়ে যায় । সে জন্য বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্যবিভাগ ওঝাদের প্রশিক্ষণ দিতে শিবির করছে । সেখানে ওঝাদের বোঝানো হচ্ছে পুরনো ধ্যানধারণা আঁকড়ে থাকলে হিতে বিপরীত হয় । ঝাড়ফুঁক করে সর্পদষ্টাকে বাঁচানো যায় না । প্রাণ বাঁচাতে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই একমাত্র রাস্তা । সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন অসরকারি সংগঠন প্রচার অভিযান চালালেও কাজের কাজ যে কিছু হচ্ছে না, তা আবারও প্রমাণ হল । এ প্রসঙ্গে ক্যানিং মহকুমা হাসাপাতালের চিকিৎসক সমর রায় মেনে নিলেন সচেতনতার অভাবের কথা । বিষয়টি দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।