ডায়মন্ড হারবার, 18 অগস্ট: চোখে তার অনেক স্বপ্ন ৷ দেশের হয়ে সোনা জিতে আনবে । কিন্তু অভাবের সংসারে দু'বেলা ভালো করে খাবারই জোগাড় হয় না, তাতে আবার সোনাজয়ের স্বপ্ন ৷ তবে মনের জোর তার অনেক, তার জেরেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পড়াশোনার পাশাপাশি চলে প্র্যাকটিস ৷
অপর্ণা বৈদ্য, ডায়মন্ড হারবার 1 নম্বর ব্লকের নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা । কলকাতায় সল্টলেক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অল বেঙ্গল অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় 100 মিটার ও 300 মিটার দৌড়ে সারা বাংলার হয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে অপর্ণা । ইতিমধ্যেই সে পেয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করার ছাড়পত্র ৷ আর তাতেই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অপর্ণাকে খেলানোর স্বপ্ন দেখছেন কোচ থেকে শুরু করে পরিবারের লোকজন(Diamond Harbour girl Aparna Baidya wants to play International Events)।
রাস্তার পাশে এক চিলতে ভাঙাচোরা ঘর অপর্ণাদের ৷ বাবা জয়দেব বৈদ্য লোকের দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন আর মা কালী বৈদ্য সকাল থেকেই সংসার সামলাতে চলে যান লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে । তিন সন্তানকে নিয়ে অভাবের সংসার তাঁদের । কিন্তু শত অভাবের মাঝেও মেয়ে অপর্ণাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছে বাবা-মা থেকে পরিবারের লোকজন ।
আরও পড়ুন : শিক্ষকের অভাবে 6 মাস বন্ধ বাঁকুড়ার স্কুল, সমস্যায় পড়ুয়ারা
স্কুলের এক শিক্ষক তার এই প্রতিভা দেখে তাকে ভর্তি করে দেয় অ্যাথলেটিক্সসে । সকাল ছ'টায় উঠে অপর্ণা চলে যায় মাঠে প্র্যাকটিস করতে ৷ তারপরই বাড়ি ফিরে স্কুল, পাশাপাশি অভাবের সংসারে মায়ের হাতে হাতে করতে হয় একাধিক কাজ । কোনওদিন হয়তো ঠিকঠাক করে খাওয়াটাও হয় না ৷ স্কুল থেকে ফিরে আবারও বিকালে প্র্যাকটিস । আর তার সেই অভ্যাসে প্রত্যেকটি সময় তার পাশে থাকে মা । অভাবের মধ্যেও মেয়ের স্বপ্নপূরণ করতে শক্ত খুঁটি এখন অপর্ণার মা ।
একটা ভালো অ্যাথলেটিক্সের যে সমস্ত খেলার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্য প্রয়োজন তার কোনও কিছুই পায় না অপর্ণা । কিন্তু তারপরেও তার সেই অদম্য জেদের কাছে হার মেনেছে অভাব । ছোটবেলায় বাবা-মা ভালোবেসে নাম রেখেছিল অপর্ণা । যার দেবী দুর্গার আরেক নাম । আর সেই অপর্ণায় এখন হয়ে উঠেছে এই অভাবী পরিবারের গর্ব । আগামী দিনে বাংলা জয়ের পাশাপাশি সারা দেশের হয়ে সে সোনা জিতে এনে ডায়মন্ড হারবারের মুখ উজ্জ্বল করতে চায় সে ৷
এই বিষয়ে তার প্রশিক্ষক রাখাল হালদার বলেন, অপর্ণার মধ্যে যা প্রতিভা আছে তাতে সে অনেকদূর যেতে পারবে ৷ আমি চাই ও অলিম্পিক ও কমনওয়েলথ গেমস খেলুক ৷ অভাবের মধ্যেও ওর বাবা-মা যেভাবে ওকে সাপোর্ট করেন তাতে ও এগিয়ে যাবেই ৷"
পরিশ্রমের পাশাপাশি স্বপ্ন পূরণের জন্য সাহায্যের দিকে তাকিয়ে অপর্ণা ৷ কে বলতে পারে, অচিন্ত্যর মতো অচিরেই হয়তো দেশের হয়ে এবার পদক জিতবে অপর্ণা ৷
আরও পড়ুন : জলমুড়ি খাওয়া থেকে কমনওয়েলথে সোনা জয়, অচিন্ত্যর কীর্তিতে গর্বিত মা পূর্ণিমাদেবী