ডায়মন্ডহারবার, 6 অগস্ট : করোনা অতিমারির প্রভাব বাংলার প্রায় সবক’টি লোকশিল্পের উপরেই পড়েছে ৷ বাদ যায়নি বাংলার প্রথম বিনোদনের মাধ্যম যাত্রাপালাও (Yatrapala) ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রাশিল্পীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও, হাতে শো না থাকায় চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন তাঁরা ৷ তাই যাত্রার সঙ্গে যুক্ত বহু শিল্পী বাধ্য হয়ে অন্য পেশাকে বেছে নিচ্ছেন ৷ এমনই ছবি উঠে এসেছে ডায়মন্ডহারবারের অষ্টমী নাট্যসংস্থাতেও ৷ সেখানকার শিল্পীরা নিজেদের আত্মবিশ্বাসে ভর দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ৷ যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মহড়াও শুরু করে দিয়েছেন ৷ কিন্তু, পুজোর আগে বায়না না হওয়ায় তাঁদের সবার ভবিষ্যৎ বিশ বাঁও জলে ৷
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কিছুটা কমায় অষ্টমী নাট্যসংস্থা (Ashtami Natya sangstha)-র সদস্যরা ফের মহড়া শুরু করেছেন ৷ সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রার মহড়া দিচ্ছেন তাঁরা ৷ এ নিয়ে ওই সংস্থার সভাপতি অরুময় গায়েন জানান, শিল্পীদের অধিকাংশের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ৷ কেউ কেউ সংসার চালানোর দায়ে যাত্রাকে বিদায় দিয়েছেন ৷ এই অবস্থায় যে সব শিল্পীরা এখনও মনের জোর নিয়ে রয়েছেন ৷ তাঁদেরকেই যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সেই সঙ্গে যাত্রার মঞ্চকে যাঁরা ছেড়ে গিয়েছেন, ফের তাঁদের ফিরে আসার অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে ৷
আরও পড়ুন : করোনায় বিপন্ন বাংলার লোকশিল্প, কর্মহীন চন্দননগর ব্রতচারীর শিল্পীরাও
তবে, করোনার তৃতীয় ঢেউ খুব দ্রুত আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে চিকিৎসক মহল ৷ এই পরিস্থিতিতে কীভাবে যাত্রাশিল্প ঘুরে দাঁড়াবে ? এ নিয়ে অরুময় গায়েন জানান, রাজ্য সরকারের তরফে শিল্পী-সহ যাত্রাদলের সবাইকে করোনার ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয়েছে ৷ প্রায় সবাই প্রথম ডোজ পেয়ে গিয়েছেন ৷ বাকি যাঁরা রয়েছেন, দ্রুত তাঁদের প্রথম ডোজ দেওয়ানো হবে ৷ এর পর সবাইকে সময় মতো ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ব্য়বস্থাও করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ তবে, ততদিন সবাইকে লড়াই করে যেতে হবে বলে জানান অরুময়বাবু ৷
আরও পড়ুন : করোনায় ধ্বস্ত মালদার গম্ভীরা, বাঁশি ছেড়ে রিকশা টানছেন শিল্পী
যাত্রাদলের সভাপতি লড়াই করার কথা বললেও, শিল্পীদের আর্থিক অনটন তাঁদের অন্য পেশায় যেতে বাধ্য করছে ৷ এমনটাই জানাচ্ছেন এক যাত্রাশিল্পী ৷ মামনি মুখোপাধ্যায় নামে ওই শিল্পী জানান, করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে গত বছরের শেষের দিকে যাত্রাশিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল ৷ তখন থেকে গত মে মাস পর্যন্ত তাঁরা কম বেশি বেশ কয়েকটি শো করেছিলেন ৷ কিন্তু, করোনা দ্বিতীয় ঢেউ তাঁদের ফের আর্থিক সঙ্কটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ৷ মহড়া শুরু হলেও, তাঁদের হাতে কাজ নেই ৷ পুজোর কোনও বায়না তাঁদের হয়নি ৷ ফলে শো না এলে আর্থিক দুর্দশা আরও বাড়বে বলেই জানাচ্ছেন তিনি ৷ এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পুজো কমিটি এবং ক্লাবগুলিকে উদ্যোগ নিতে হবে যাত্রাপালার আয়োজনের জন্য ৷ আর তবে গিয়ে পুরনো দিন ফিরে আসবে বাংলার অন্যতম লোকশিল্প যাত্রা ৷