সোনারপুর, 26 নভেম্বর: রাতে দিদাকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছিল ৷ ধৃত দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে সোনারপুর থানার পুলিশের ৷ ধৃত প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর স্বামী শান্তনু, মানসরঞ্জন ওরফে বিট্টু দাসকেও শ্বাসরোধ করে খুন করে বলে অভিযোগ । এর পরের দিন দুপুরবেলা দু'জন মিলে দেহ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় । তারপর নতুন করে সিল করে দেয় সেপটিক ট্যাংক ।
গতকাল রাতে সোনারপুর থানার জগদ্দল এলাকার একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হয় দিদা ও নাতির মৃতদেহ । এই ঘটনার তদন্তে নেমে সোনারপুর থানার পুলিশ মৃত বৃদ্ধার নাতনি ও তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করে । এই খুনের ঘটনায় ধৃতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সোনারপুর থানার পুলিশের হাতে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য । ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, দুর্গাপুজোর বিজয়া দশমীর দু'দিন পর রাতে দিদা গঙ্গারানিকে ছাদে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা ৷ এরপর হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করে অভিযুক্তরা ।
ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 302, 201, 34 ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে । আজ ধৃতদের বারুইপুর মহকুমার আদালতে পেশ করে সোনারপুর থানার পুলিশ । অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতের আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে ।ধৃতদের 10 দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক । ধৃতদের জিজ্ঞাসা করে কী কারণে এই খুন তা জানতে পারে সোনারপুর থানার পুলিশ ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শান্তনু ও প্রিয়াঙ্কার বিয়ে দু'জনেরই বাড়ির লোক মেনে নেয়নি । তাই তাঁরা বাধ্য হয়েই এই দিদার বাড়িতে থাকছিলেন । এই বাড়িতে থাকা নিয়ে মাঝে মধ্যেই গঙ্গারানি দাসের সঙ্গে ঝামেলা হত তাঁদের । একাধিকবার সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন গঙ্গারানি দেবী । থানায় অভিযোগের পর নিজের দিদার বিরুদ্ধে মনে মনে রাগ জন্মেছিল ওই দম্পতির । কিন্তু সে বিষয়ে রাগের বহিঃপ্রকাশ করতে পারেনি দম্পতি । প্রিয়াঙ্কার স্বামী শান্তনু নেশাগ্রস্ত ছিল । কোনও কাজই করত না সে । ঠাকুরদা পান্নালাল দাসের ফিক্সড করা টাকার সুদে তাদের সবার সংসার চলত । কিন্তু সেই টাকার কারণেই তাঁকে খুন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা । এছাড়া দিদা গঙ্গারানির কাছে নিজেদের বাচ্চাকে রেখে কোথাও গেলে সেইভাবে যত্ন করতেন না বলে অভিযোগ ।
অবশেষে নিজেদের পথের কাঁটাকে সরাতে ষড়যন্ত্র করে ওই দম্পতি । পুলিশ জানিয়েছে, পরিকল্পনা মাফিক শান্তনু ও প্রিয়াঙ্কা গঙ্গারানি দেবীকে খুন করেন । এছাড়াও প্রিয়াঙ্কার ভাই মানসরঞ্জন ওরফে বিট্টুকে ওই দম্পতি শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করে । খুনের পর দেহ লোপাটের পরিকল্পনা করে অভিযুক্তরা । পরিকল্পনা মাফিক বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে দুটি দেহ রেখে সেই সেপটিক ট্যাংক নতুন করে ঢালাই করে দেওয়া হয় ।
দুর্গাপুজোর পর থেকে গঙ্গারানি ও বিট্টুকে এলাকার মানুষ জনেরা দীর্ঘদিন ধরে আর দেখতে পাচ্ছিলেন না ওই এলাকায় । এলাকাবাসীরা ওই দম্পতিকে এঁদের দুজনের কথা জিজ্ঞাসা করলে ওই দম্পতি জানায়, দুজনেই তাঁদের আত্মীয়র বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছেন । এরপর কয়েক মাস পরে গঙ্গারানির বোন নিজের দিদির খোঁজে ওই বাড়িতে আসেন । এরপর প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর স্বামী দুর্ব্যবহার করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে । গতকাল গঙ্গারানির বোন ও পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এই বাড়িতে আসেন । জিজ্ঞাসাবাদ করেন প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর স্বামীকে । পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন অভিযুক্তরা । পরিবারের এক সদস্য সেপটিক ট্যাংকের উপর নতুন ঢালাই দেখে সন্দেহ করেন । খবর দেওয়া হয় সোনারপুর থানার পুলিশকে ৷ পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় ট্যাংকের নতুন ঢালাই ভেঙে নিখোঁজ দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয় । এই খুনের অভিযোগে প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
আরও পড়ুন: