কোচবিহার, 5 সেপ্টেম্বর : জলপ্রকল্প শুরুর পর থেকে ছয় বছরে চারজন চেয়ারম্যান বদল হয়েছে । তবুও কোচবিহারের অর্ধেকের বেশি বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছায়নি । বহু ওয়ার্ডের বাসিন্দাকে এখনও জলের জন্য তাকিয়ে বসে থাকতে হয় । অনেককে আবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় জল টেনে আনতে হয় । অনেকে আবার জল কিনে খান । এভাবেই বছরের পর বছর জল সমস্যায় ভুগতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের । গত কয়েক বছরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দারা বিক্ষোভ আন্দোলন করেছেন । কাজ না হওয়ায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন । যদিও কোচবিহার পৌরসভার প্রশাসক ভূষণ সিং বলেছেন, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ।
রাজার শহর কোচবিহার ৷ জনসংখ্যা লক্ষাধিক । হোল্ডিং রয়েছে 20 হাজার । শহরে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু সেইসব বাড়িতে ঠিকমতো জল পৌঁছায়নি । যেখানে জল পৌঁছেছে, সেইজল পানের যোগ্য নয় । এ নিয়ে বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে । সেই সমস্যা সমাধানে পৌরসভার উদ্যোগে 2014 সালে 34 কোটি টাকা খরচ করে পানীয় জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় । ঠিক ছিল তোর্ষা নদীর জল এনে সেই জল পরিষোধন করে শহরের 20 হাজার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে । সে সময় কোচবিহার পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন কংগ্রেসের বীরেন কুণ্ডু । পরবর্তীতে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন ।
ধীরে ধীরে সময় পরিবর্তন হয়, চেয়ারম্যান পরিবর্তন হতে থাকে । বীরেন কুণ্ডুর মৃত্যুর পর কোচবিহার পৌরসভার চেয়ারম্যান হন দীপক ভট্টাচার্য । এরপর প্রয়াত বীরেন কুণ্ডুর স্ত্রী রেবা কুণ্ডু এবং সবশেষে ভূষন সিং । ভূষনবাবু বর্তমানে কোচবিহার পৌরসভার প্রশাসকও বটে । তবে গত 6 বছরে চেয়ারম্যান যেমন বদল হয়েছে পাশাপাশি জল প্রকল্পের খরচও বাড়তে থাকে । আসতে থাকে বরাদ্দ । সব মিলিয়ে খরচ হয় 65 কোটি টাকা । তবে আজও কোচবিহার শহরের অর্ধেকের বেশি বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছায়নি । আর খাবারের জল না পেয়ে মাঝেমধ্যেই কোচবিহার শহরের বিভিন্ন এলাকা বিক্ষোভ ,পথ অবরোধ শুরু হয় । উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়ি শহরের 8 নং ওয়ার্ডে মাঝেমধ্যে বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেন । পৌরসভার দাবি, শহরের 20 হাজার বাড়ির মধ্যে 8 হাজার বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে । বাকি বাড়ি গুলোতে শীঘ্রই পৌঁছে দেওয়া হবে । শহরের মসজিদ পাড়া এলাকার বাসিন্দা বনশ্রী মহন্ত, রসমতি মহন্ত বলেন, গত 8-9বছর ধরে দেখছি, বাড়িতে জলের সংযোগ থাকলেও জল আসে না । রাস্তার ধারে পাইপ কেটে জল সংগ্রহ করতে হয় । এলাকার আরেক বাসিন্দা হরি সূত্রধর বলেন, "বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ থাকলেও জল আসে না । তাই দূর থেকে টোটো করে জল আনতে হয় । 12 নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা চন্দন সরকার বলেন, "আমাদের এলাকায় জল আসে তবে তা পানের অযোগ্য । আমাদের জল কিনে ক্ষেতে হয়। একই অবস্থা শহরের কলাবাগান, নতুন পল্লী, গুঞ্জবাড়ি, তল্লিতলা,চাকিরমোড় সহ বহু এলাকা । বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে এঅবস্থা চলতে থাকলেও পৌরসভা উদাসীন ।"
যদিও কোচবিহার পৌরসভার চেয়ারম্যান ভূষণ সিং বলেন, "ফাইল নবান্নে আছে। সেখান থেকে অনুমোদন এলেই বাকি বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ পৌছে দেওয়া যাবে ।"