কোচবিহার, 20 অগাস্ট : ইঞ্জিন কিংবা বইঠার সাহায্যে নয় । দড়িতে টান দিলেই চলে নৌকা । অভিনব এই পদ্ধতিতে যাত্রী পারাপার করা হয় কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম মাতালহাটের বুড়াধরলা নদীতে । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন কয়েক হাজার বাসিন্দা পার হন । কিন্তু কেন এই পদ্ধতি ? প্রশ্নের উত্তরে মাঝি জানান, এই পদ্ধতিতে নৌকা চালালে পরিশ্রমও কম । অন্যদিকে সহজেই নৌকা পারাপার হয়।
কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার একটা অংশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে বুড়াধরলা নদী । এই নদী মাতালহাট গ্রাম পঞ্চায়েতকে দু'টি ভাগে ভাগ করেছে । নদীর উত্তরাংশে রয়েছে চারটি গ্রাম । এছাড়া রয়েছে বাজার, হাইস্কুল, প্রাইমারি স্কুল এমনকী গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস । নদীর দক্ষিণাংশে থাকা ছয়টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে প্রতিদিন নদী পেরিয়ে এদিকে আসতে হয় বিভিন্ন প্রয়োজনে । গ্রীষ্মকালে বুড়াধরলা শুকিয়ে যায় । তবে, বর্ষায় ফোঁসে নদী । ভেঙে দেয় নদীর উপর গড়ে ওঠা একাধিক সাঁকো । তখন বাসিন্দাদের যাতায়াতের ভরসা একমাত্র নৌকা । দিনে যতবার যাতায়াত করতে হয় ততবারই মাঝিকে দিতে হয় পাঁচ টাকা । তবে এই নৌকা ইঞ্জিন কিংবা বৈঠা দিয়ে নয়, দড়িতে টান দিয়ে চলে ।
নদীর দু'পাড়ে দুটি বাশেঁর খুঁটি থাকে । সেই খুঁটি দু'টি মোটা নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা । নৌকার এক কিনারে মোটা নাইলনের দড়ি বেঁধে অপর পাশে লোহার রিঙে ওই দড়িটা বাঁধা থাকে । লোহার রিংটা নদীর দু'পাড়ে খুঁটিতে বাঁধা দড়িতে ঢোকানো থাকে । প্রথমে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালানো শুরু করতে হয় । তখন নৌকায় থাকা একজন যাত্রী কিনারায় থাকা দড়িতে টান দেন । এরপরেই এগোতে থাকে নৌকা ।
100 মিটার পার হতে সময় লাগে 10-15 মিনিট । এই পদ্ধতিতে নৌকা চালালে সময় যেমন কম লাগে পরিশ্রমও কম হয় । এছাড়া কম যাত্রী নিয়ে সহজেই যাতায়াত করা যায় । গত 8-9 বছর ধরে এভাবেই নৌকা চালিয়ে আসছেন মাতালহাটের শাহাজের ঘাটের মাঝি মকবুল মিঁঞা । তিনি বলেন, "বড় বড় ঘাটগুলিতে ইঞ্জিন দিয়ে নৌকা চালানো হলেও এখানে দড়ি দিয়ে টেনে নৌকা চালানো হয় । এতে অল্প সংখ্যক যাত্রী হলেও নিয়ে যাওয়া যায় ।"
মাতালহাট গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল বর্মণ বলেন, "দড়ি টেনে নৌকা চালানো অন্য কোথাও দেখিনি । এখানেই দেখি । তবে এই এলাকায় একটি সেতুর দরকার ।" এলাকার বাসিন্দা জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া বলেন, "ওই এলাকায় দড়ি টেনে নৌকা চালানো হয় । তবে সেতুর বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে ।"