কলকাতা, ১২ মার্চ : বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে সরাসরি অভিযোগ জানালেন বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চ্যাটার্জির বান্ধবী তথা তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের প্রাক্তন নেত্রী নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠির সঙ্গে দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের অডিও ক্লিপ। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন ঘোষণার পরে কার্যত তাঁকে এবং শোভন চ্যাটার্জিকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। পাশাপাশি ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে লেখা চিঠিতে গতকাল রায়চকের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন বৈশাখি। ওই চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, তাঁর এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের BJP-র টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি সত্যের অপলাপ মাত্র। তাঁর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা অবশ্য এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।
রবিবার পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম এবং গুসকরায় তৃণমূলের কর্মী সম্মেলন ছিল। সেখানে দলের পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। কর্মীসভায় ব্লক সভাপতিদের কাছ থেকে বিগত দিনের ভোটের ফলাফলের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব নেন তিনি। সেদিনই দিল্লিতে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ, আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ার পরে অনুব্রত মণ্ডল শোভন-বৈশাখি নিয়ে রীতিমতো হুমকির সুরে কথা বলেন অনুব্রত। আরও অভিযোগ, সেখানে তিনি "খালাস" শব্দটি ব্যবহার করেন শোভন-বৈশাখির বিরুদ্ধে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনারকে আজ যে মেইল করেছেন বৈশাখি, তাতে এই শব্দটিকে "প্রাণে মারার হুমকি" বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
এদিকে কমিশনকে লেখা অভিযোগপত্রে বৈশাখি গতকাল রায়চকের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। বৈশাখির অভিযোগ, গতকাল রায়চকে ধর্ষণের হুমকির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, রায়চকের যে বাংলোয় তাঁর পরিবার এবং শোভন চ্যাটার্জির সঙ্গে তিনি ছিলেন, সেটি ঘিরে রাখে দুষ্কৃতীরা। বলতে থাকে, "ডায়মন্ডহারবারে BJP-র টিকিটে দাঁড়াবি ? এত বড় স্পর্ধা। ধর্ষণ করে ফেলে দেব।"
দিনকয়েক আগেই শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়ের BJP-তে যোগ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। BJP সূত্রে খবর ছিল, ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হতে পারে বৈশাখিকে। BJP যোগের বিষয়টিকে 'মিডিয়ার গুজব' বলে উড়িয়ে দিলেও জল্পনা জিইয়ে রেখেছিলেন বৈশাখি। তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ছিল, "আমার সঙ্গে (মুকুল রায়ের) কথা হয়েছে বলছি না, আবার কথা হয়নি সেটাও বলছি না।"
রবিবার রাতে মা, মেয়ে ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের (শোভনদা নামে সম্বোধন করেছেন বৈশাখি) সঙ্গে রায়চকে বেড়াতে যান বৈশাখি। তাঁর অভিযোগ, "গতরাতে কয়েকজন বাংলো ঘিরে রেখেছিল। তারপর সকাল থেকে যাঁরাই আমাদের বাড়িতে আসছেন তাঁদের ছবি তোলা হচ্ছে। আর বিষয়টি কাউকে ফোনে জানানো হচ্ছে।" বৈশাখির বক্তব্য, বিষয়টি এখানেই থেমে ছিল না। তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়। বলেন, "আমার নামে গালিগালাজ করছে। বলেছে, তুই আমাদের রক্ত খেয়েছিস। এখন ফুর্তি করছিস। রেপ করে ফেলে দেব। ডায়মন্ডহারবারে BJP-র টিকিটে দাঁড়াবি। এত বড় স্পর্ধা।" তাঁর অভিযোগ, পুলিশকে অভিযোগ করা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর কথায়, "রামনগর পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ না করেই চলে যায়। ফের সন্ধ্যা নামতেই বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। তারপর BDO-কে জানানো হয়। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই।" বৈশাখির দাবি, নির্বাচন কমিশনেও ফোন করা হয়।পরে অবশ্য স্বয়ং মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ় আফতাব ফোন করেন শোভন চ্যাটার্জিকে। তারপরে সক্রিয় হয় রামনগর থানার পুলিশ। তাদের নিরাপত্তা দিতে দেওয়া হয় পুলিশ পোস্টিং।
আজ জাতীয় নির্বাচন কমিশনারকে লেখা চিঠিতে বৈশাখি অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। এনেছেন অসহযোগিতার অভিযোগ। পাশাপাশি তিনি নিরাপত্তার দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে।