বোলপুর (বীরভূম), 23 মার্চ: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (President Droupadi Murmu) কাছে দেউচা-পাচামি সহ শিক্ষা-স্বাস্থ্যের একাধিক সমস্যা তুলে ধরবেন আদিবাসী সংগঠনগুলি ৷ জানা গিয়েছে, মধ্যস্থতা করবেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী । আগামী 28 মার্চ বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে যোগ দিতে আসছেন রাষ্ট্রপতি (President to Attend Visva Bharati Convocation) । তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের 'পরিদর্শক' । রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই প্রথম বঙ্গে আসছেন দ্রৌপদী মুর্মু (President Bengal Visit) । 27 মার্চ তিনি কলকাতায় আসছেন । থাকবেন রাজভবনে ৷ রয়েছে একগুচ্ছ কর্মসূচি ৷ 28 মার্চ বিশ্বভারতীর আম্রকুঞ্জের জহরবেদীতে সমাবর্তনে যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি ।
উল্লেখ্য, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলামুখ কয়লা খনি গড়তে দেউচা-পাচামিতে জমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে রাজ্য সরকার । যার বিরোধিতা করে জমি বাঁচাও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় আদিবাসী মানুষজন । সেই কারণে আদিবাসীদের তরফে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই বিষয়ে কথা বলা হবে বলে খবর ৷
উল্লেখ্য, আমেরিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলামুখ কয়লা খনি হতে চলেছে বীরভূমের দেউচা-পাচামি (Deucha Pachami Open Cast Mine) । তার জন্য কমপক্ষে 3400 একর জমি প্রয়োজন । এর মধ্যে 1000 একর সরকারি জমি ৷ বাকি জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় 21 হাজার মানুষের বসতি অন্যত্র সরাতে হবে ৷ এছাড়া, ধ্বংস হবে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, চারণভূমি প্রভৃতি ৷
জমি অধিগ্রহণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Bengal CM Mamata Banerjee) একাধিক প্রকল্প ও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন ৷ তবে এই অঞ্চলে বেশিরভাগ আদিবাসী-সাঁওতাল জনজাতির বাস । এই এলাকার মানুষজন খনির জন্য জমি দিতে নারাজ ৷ তাই কয়লা খনি ঘোষণার পর থেকেই খনি বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে একাধিক আদিবাসী সংগঠন ।
দেউচা-পাচামি ছাড়াও, বীরভূমের শান্তিনিকেতন ও সংলগ্ন এলাকায় বহু আদিবাসী মানুষের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে ৷ গড়ে উঠছে রিসর্ট, রেঁস্তোরা, হোটেল, আবাসন, লজ, কটেজ প্রভৃতি । একই অবস্থা ইলামবাজারের চৌপাহাড়ী জঙ্গলে আদিবাসী গ্রামগুলির । এমনকি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বরাবরই বঞ্চিত আদিবাসী সম্প্রদায় ।
এই প্রথম একজন আদিবাসী মহিলা দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন । তাই এই জেলার কমপক্ষে 12 থেকে 14টি আদিবাসী সংগঠনের নেতারা চান দেউচা-পাচামি সহ আদিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরতে ৷ জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । ইতিমধ্যেই আদিবাসী সংগঠনগুলি এই মর্মে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিবকে একটি চিঠিও দিয়েছেন ৷ সব কিছু ঠিক থাকলে আদিবাসী সংগঠনের কয়েকজন নেতা তাদের রেওয়াজ অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে অভ্যর্থনা জানাবেন ও আদিবাসী মানুষজনের সমস্যার দাবিপত্র তুলে দেবেন ।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের একটা দূরত্ব যে তৈরি হয়েছে, তা বলাইবাহুল্য । সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে উপাচার্য ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের চাপানউতোর প্রকাশ্যে এসেছে ৷ এই অবস্থায় এই জেলায় আদিবাসী মানুষজনের দুর্দশা ও দেউচা-পাচামিতে জমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গ রাষ্ট্রপতির কাছে পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে ।
এক আদিবাসী নেতা রাম সরেন বলেন, "আমরা বিশ্বভারতী রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়েছি । উপাচার্য স্যারের কাছে আমাদের আশা উনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবেন ৷ এই প্রথম কোনও আদিবাসী মহিলা দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন । আমরা গর্বিত৷ তাঁর কাছে আমরা আদিবাসীদের জমি দখল, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সহ নানা সমস্যা তুলে ধরব ৷ আমাদের রীতি অনুযায়ী তাঁকে সম্মানও জানাতে চাই ।"
আরও পড়ুন: পাঁচ বছরে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত, বিশ্বভারতীতে দাবি রাজনাথের