ইলামবাজার, 20 মে : প্রায় দেড় থেকে দু’কোটি বছরের প্রাচীন ও বৃহৎ আকারের উদ্ভিদ জীবাশ্মের ভাণ্ডার রয়েছে বীরভূমের ইলামবাজারের আমখইয়ে ৷ তাই রাজ্যের একমাত্র উদ্ভিদ জীবাশ্ম উদ্যানের উদ্ভিদ জীবাশ্মগুলি নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু করেছেন ভূবিজ্ঞানীরা ৷
এই উদ্ভিদ জীবাশ্মগুলি কমপক্ষে দেড় থেকে দু’কোটি বছরের পুরনো ৷ এখনও পর্যন্ত এই এলাকায় প্রায় 165 টি ছোট-বড় জীবাশ্ম উদ্ধার হয়েছে ৷ এগুলি ক্রিটেশিয়াস যুগের ভূ-আন্দোলনের সময়কার বলে মনে করছেন ভূতাত্ত্বিকরা ৷ তাঁদের অনুমান, এই এলাকায় আরও জীবাশ্ম উদ্ধার হতে পারে ৷ তাই খননকার্য এখনও চলছে ৷ বীরভূমের পর্যটন মানচিত্রের অন্যতম আকর্ষণ হল এই উদ্ভিদ জীবাশ্ম উদ্যান।
2015 সালে ইলামবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে আমখই গ্রামে পুকুর খননের কাজ চলছিল ৷ সেই সময় স্থানীয় আদিবাসী মানুষজন এখান থেকে উদ্ধার করেন 165 টি প্রস্তরীভূত কাঠ ৷ যা উদ্ভিদ জীবাশ্ম নামে পরিচিত ৷ এই নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে যায় ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে ৷ তড়িঘড়ি জীবাশ্মগুলিকে পাঠানো হয় লখনউয়ের বীরবল সাহানি ইনস্টিটিউটে ৷
আরও পড়ুন : পাকা ধানে মই ঝড়বৃষ্টির, ক্ষতির মুখে বীরভূমের চাষিরা
জানা গিয়েছে, কমপক্ষে দেড় থেকে দু’কোটি বছরের পুরনো এই উদ্ভিদ জীবাশ্মগুলি ৷ এর আগেও বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম, বাঁকুড়ার সোনামুখী, মেদিনীপুরের গড়বেতা এবং ওড়িশা রাজ্যের ময়ূরভঞ্জ জেলার নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ জীবাশ্মের হদিশ মিলেছে ৷ কিন্তু, এত প্রাচীন ও বড় আকারের উদ্ভিদ জীবাশ্ম কোথাও পাওয়া যায়নি ৷ ইলামবাজারে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে শাল, সেগুন, মহুয়া প্রভৃতি বড় বড় গাছের জঙ্গল ৷ তাই বন বিভাগের উদ্যোগেই ইলামবাজারের আমখই গ্রামে রাজ্যের একমাত্র জীবাশ্ম উদ্যানটি তৈরি করা হয়েছে।
কীভাবে, কোন সময় এই অঞ্চলে তৈরি হয়েছে এই উদ্ভিদ জীবাশ্ম গুলি ?
এই প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তথা ভূতাত্ত্বিক কৃষ্ণগোপাল ঘোষ জানান, ‘‘ইলামবাজার এলাকা ছোটনাগপুর প্রান্তীয় অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত ৷ বৃহৎ এলাকা জুড়ে ভূ-আন্দোলনের ফলে একসঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকার উদ্ভিদ ভূ-অভ্যন্তরে চলে যায় ৷ এরপর উপরের স্তরের চাপ ও নিচের স্তরের তাপের ফলে চাপা পড়ে যাওয়া উদ্ভিদগুলি ধীরে ধীরে থিতিয়ে যায় ৷ এর মধ্যে শিলাস্তরের খনিজ পদার্থ মিশে ক্রমে তা জীবাশ্মে পরিণত হয় ৷ উদ্ভিদের মূল গড়ন একই থাকলেও তা কাঠ থেকে শিলায় পরিণত হয় ৷ কমপক্ষে 10 হাজার বছরের প্রাচীন না হলে তাকে জীবাশ্ম হিসেবে ধরা হয় না ৷ এছাড়া, অনেক সময় পাললিক শিলার মাঝে যদি কোনও উদ্ভিদ ঢুকে যায়, তাহলেও সেটি জীবাশ্মে পরিণত হতে পারে ৷ জীবাশ্ম তৈরি হওয়ার এই সমগ্র প্রক্রিয়াকে বলে মিনারেলাইজেশন ৷ আর এই ধরনের কাঠকে বলে পেট্রিফায়েড উড বা প্রস্তরীভূত কাঠ।’’
জীবাশ্ম কতটা পুরনো কীভাবে বুঝবেন ?
এই প্রসঙ্গে ভূতাত্ত্বিক কৃষ্ণগোপাল জানান, ‘‘জীবাশ্ম নিয়ে চর্চাকে বলে প্যালিওনটোলজি। কার্বন ডেটিং-এর মাধ্যমে জীবাশ্মের সঠিক সময় নির্ধারণ করা যায় ৷ ইলামবাজারের উদ্ভিদ জীবাশ্ম গুলি ক্রিটেশিয়াস যুগ তথা মেসোজোয়িক যুগের ভূ-আন্দোলনের সময়কার।’’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জীবাশ্মগুলি নিয়ে গবেষণা করে জানা যাবে এই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান কেমন ছিল ? এখানে অতীতে কী ধরনের বনাঞ্চল ছিল ? মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল ? প্রভৃতি ৷ অন্যান্য জায়গার জীবাশ্ম থেকে ইলামবাজার উদ্ভিদ জীবাশ্মের আকারগত তারতম্য ও প্রাচীনতার জন্য এর গুরুত্ব অনেক বেশি বলে মনে করছেন ভূতাত্ত্বিকরা ৷ তাই নতুন করে শুরু হয়েছে গবেষণাও। এই এলাকায় আরও এই ধরনের জীবাশ্ম রয়েছে বলে মনে করছেন ভূতাত্ত্বিকরা। তাই চলছে খননকার্য।
আরও পড়ুন : করোনার কড়াকড়িতে দুঃস্থদের জন্য মধ্যহ্নভোজ বীরভূম পুলিশের
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক কৃষ্ণগোপাল ঘোষ বলেন, ‘‘ইলামবাজারের উদ্ভিদ জীবাশ্ম নিয়ে আরও পড়াশোনার প্রয়োজন রয়েছে ৷ এত বড় আকারের জীবাশ্ম থেকে গবেষণা করে অনেক কিছু জানা যাবে ৷’’