ইলামবাজার, 29 জুন : গাড়ি পিছু টাকা নিয়ে বেআইনিভাবে গোরু পাচারে মদত দিচ্ছে পুলিশ ! প্রকাশ্যে টাকা তোলার ছবি ধরা পড়ল ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় । স্থানীয়দের অভিযোগ, ইলামবাজারের সুখবাজার গোরুহাটে প্রতি শনিবার এভাবেই চলে 'তোলাবাজি' ।
দক্ষিণবঙ্গের সব থেকে বড় গোরুর হাট ইলামবাজার থানার সুখবাজার গোরুহাট । প্রতি শনিবার কোটি কোটি টাকার গোরুর কারবার চলে এখানে । এই হাট থেকে ছোটো ম্যাটাডোর, ট্রাক, লরি করে গোরু রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাচার হয় । যায় বাংলাদেশেও । অভিযোগ, বীরভূমের ইলামবাজার, বোলপুর, নানুর থানা ও বর্ধমান জেলার কাঁকসা, কোকওভেন থানার পুলিশকে টাকা দিয়ে চলে গোরু পাচার ।
এই সংক্রান্ত খবর পেয়ে আজ ওই এলাকায় যান ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি । গোরুহাটের আগেই বোলপুর রোডের জঙ্গল । সেখানে দেখা গেল, পরপর দাঁড়িয়ে ট্রাক, ম্যাটাডোর । পুলিশকর্মীরা আসছেন । চালকদের সঙ্গে কথা বলছেন । জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে টাকা নিচ্ছেন । এরপরই ছাড়া হচ্ছে গাড়ি । চালকরা জানাচ্ছেন, ছোটো ম্যাটাডোর হলে নেওয়া হচ্ছে 200 টাকা, বড় গাড়ি হলে 300 টাকা ও লরি হলে 500 টাকা নেয় পুলিশ । টাকা দিলে তবেই গাড়ি যেতে দেয় ।
বোলপুর রোডের গুরুত্ব অন্য জায়গায় । মেন রোড ধরে সোজা গেলে পড়বে বোলপুর । বোলপুর থেকে নানুর হয়ে যাওয়া যায় মুর্শিদাবাদ । আর এই মুর্শিদাবাদই হল গোরুপাচারের অন্যতম কেন্দ্র । এখান থেকে কোটি-কোটি টাকার গোরু যায় বাংলাদেশ । স্থানীয়রা বলছেন, এভাবেই চলে গোরু পাচার । আর মদত দেয় পুলিশ ।
শুধু বাংলাদেশ নয়, রাজ্যের অন্য প্রান্তে চলে গোরুর কারবার । এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে অন্য পথ । বোলপুর রোডের জঙ্গলের ভিতর দিয়েও আছে রাস্তা । সেখানে একটু দূর গেলেই অজয় নদ । নদ পার হলেই যাওয়া যাবে বর্ধমান । গাড়িচালকদের অভিযোগ, বর্ধমান যাওয়ার পথে কাঁকসা, কোকওভেন থানার পুলিশ টাকা তোলে ।
তবে, পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, এখন বাংলাদেশে গোরু পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে । রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই হাট থেকে গোরু যায় । কিন্তু, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গোরু গেলে তা বেআইনি কেন ? আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনানুযায়ী কোনও ব্যক্তি হেঁটে হেঁটে একটি বা দুটি গোরু নিয়ে গেলে তা বৈধ । কিন্তু, একাধিক গোরু গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া মানেই তা পাচার । অবৈধ । সূত্রের খবর, পুলিশ যতই বলুক, সংখ্যায় কম হলেও এখনও বাংলাদেশে গোরু পাচার চলে ।
এদিকে, গোরুহাট নিয়ে সদাসতর্ক থাকেন গোয়েন্দারাও । বর্ধমানের খাগড়াগড় কাণ্ডের পর জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA) বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছিল । তাদের যোগসূত্র ছিল সুখবাজার । গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এই হাট থেকে গোরু পাচারের আড়ালে চলত জঙ্গি কার্যকলাপ । প্রশ্ন উঠছে, তারপরও কী করে এত ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ? গাড়ি তল্লাশি না চালিয়ে শুধুমাত্র টাকা নিয়ে কেনই বা ছাড়া হচ্ছে ?
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংয়ের সঙ্গে । কিন্তু, তিনি ফোন ধরেননি । SMS-এরও রিপ্লাই দেননি । জেলা প্রশাসনেরও মুখে কুলুপ ।
যদিও জেলা BJP সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ আক্রমণ করছেন তৃণমূলকেই । তাঁর কথায়, "এগুলো তৃণমূলের রোজগারের পথ । তাদের মদত ছাড়া বেআইনি কারবার চলতে পারে ?" জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য বলছেন, "এটা রাজনৈতিক বিষয় নয় । এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই ।"