ঘোষগ্রাম (বীরভূম), 9 অক্টোবর: প্রায় 1600 বছর আগের কথা। স্বপ্নাদেশ পেয়ে মা লক্ষ্মী প্রতিষ্ঠিত হন বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে ঘোষগ্রামে (Laxmi Puja 2022)। সেই থেকে এই গ্রামের একমাত্র আরাধ্যা দেবী মা লক্ষ্মী । তাই এই গ্রামের কোনও বাড়িতেই লক্ষ্মীপুজো হয় না। গ্রামের মন্দিরেই মা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন গ্রামবাসীরা।
কথিত রয়েছে, হর্ষবর্ধনের আমলে কামদেব ব্রহ্মচারী নামে একজন সাধক এই ঘোষগ্রামে (Village of Birbhum) এসেছিলেন মা লক্ষ্মীর সাধনার আসনের সন্ধানে । বীরভূমের রাঢ় অঞ্চলে ঘুরতে ঘুরতে তিনি একচক্র ধাম বীরচন্দ্রপুরের গর্ভবাসে এসে পৌঁছন। জানা যায়, ভরা বর্ষায় যমুনা নদী সাঁতরে তিনি ঘোষগ্রামে পৌঁছেছিলেন । রাত্রি হয়ে যাওয়ায় তিনি একটি নিম গাছের নীচে বসে ঘুমিয়ে পড়েন । পরে ঘোষগ্রামের ওই নিম গাছের তলাতেই তিনি সাধনা শুরু করেন ৷
দীর্ঘদিন কঠোর সাধনার পর তিনি মা লক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে মা লক্ষ্মী স্বপ্ন দিয়ে জানান, যেখানে তুই সাধনা করছিস সেখানে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজোর ব্যবস্থা কর। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন গ্রামের হলধর ঘোষ নামে এক কৃষক। একদিন ওই কৃষক মাঠে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে। হলধর ঘোষ কৃষিকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমন সময় পাশে থাকা একটি শ্বেত পদ্ম জলাশয়ে ভাসতে দেখে ফুল তোলার জন্য বাবার কাছে ছেলে বায়না ধরে। ছেলের বায়না রাখতে শ্বেত পদ্ম তুলতে গেলে সেটি বারবার সরে যায় । ব্যর্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
আরও পড়ুন: বাহুবলীর মাহিস্মতি মণ্ডপে ঝিনুকের লক্ষ্মীপ্রতিমা, নজর কাড়ছে মথুরাপুরে ধনদেবীর আরাধনা
এরপর রাতে তিনিও স্বপ্ন দেখেন, কোনও সাধক পুরুষই শ্বেত পদ্ম তুলতে পারবে । এরপর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গ্রামে আশ্রয় নেওয়া কামদেব ব্রহ্মচারীর কাছে ছুটে যান তাঁরা । সেদিন ছিল কোজাগরী পূর্ণিমার তিথি। ব্রহ্মচারী হলধর ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে জলাশয় থেকে সেই শ্বেতপদ্ম ও ভাসমান কাষ্ঠখণ্ড তুলে নিয়ে এসে গঙ্গার (Ganges River) মাটির রঙ দিয়ে লক্ষ্মীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেছিলেন। সেই সময় থেকে আজও ঘোষগ্রামে মহা সমারোহে মা লক্ষ্মী পূজিত হয়ে আসছেন । মা লক্ষ্মীই এই গ্রামের আরাধ্যা দেবী।
তাই ঘোষগ্রামে কোনও বাড়িতেই আলাদা করে লক্ষ্মীর পুজো হয় না । জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির রাজা কৃষ্ণচন্দ্র খবর পেয়ে গ্রামের মা লক্ষীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর রাতে 9টি ঘট ভরে নবঘটের পুজো করা হয় । 108টি ক্ষীরের নাড়ুর নৈবেদ্য দেওয়া হয়।লক্ষ্মীপুজোর দিন সকাল থেকেই গ্রামের মানুষ ভিড় করেন সেখানে । শুধু কোজাগরী লক্ষ্মী নয়, প্রতি বছর পৌষ মাসে বৃহস্পতিবার ধুমধাম করে পুজো হয়, মেলাও বসে।