ETV Bharat / state

Tarapith Temple: সতীপীঠ তারাপীঠ কেন সিদ্ধপীঠ ? কীভাবে দেবীর আবির্ভাব ? জানুন পৌরাণিক কাহিনি

Details of Tarapith Temple: সতীপীঠ তারাপীঠ সিদ্ধপীঠ হিসেবে পরিচিত ৷ কিন্তু কেন ? কীভাবে আবির্ভাব ঘটে মা তারার ? জেনে নিন পৌরাণিক কাহিনি ৷

Tarapith Temple
তারাপীঠ মন্দির
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 11, 2023, 6:00 PM IST

সতীপীঠ তারাপীঠের পৌরাণিক কাহিনি

তারাপীঠ, 8 সেপ্টেম্বর: প্রখ্যাত সাধকেরা সিদ্ধিলাভ করায় 'সিদ্ধপীঠ' হিসাবে পরিচিত বীরভূমের তারাপীঠ । বশিষ্ঠমুনি থেকে শুরু করে সাধক বামাক্ষ্যাপার অলৌকিক কাহিনীতে পূর্ণ মা তারার এই প্রাঙ্গণ ৷ ঐতিহ্যবাহী তারাপীঠে যে মানুষজন শুধু ভক্তির টানেই ছুটে আসেন তা নয় । ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতিহাসের টানেও এখানে ছুটে আসেন অনেকেই ৷ দেবীর আবির্ভাব ও পৌরাণিক কাহিনি বর্ণিত আছে তারাপীঠের অঙ্গে অঙ্গে ।

কথিত আছে, ব্রহ্মার সপ্তম মানসপুত্র ছিলেন বশিষ্ঠমুনি । তিনি সপ্তর্ষিদের মধ্যে একজন ছিলেন ৷ বীরভূমের এই তারাপীঠ শ্মশান সংলগ্ন স্থানে তিনি মাতৃ আরাধনায় দীর্ঘ তপস্যায় বসেছিলেন । তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গা দেখা দেন । মাতৃগর্ভে তাঁর জন্ম হয়নি বলে বর হিসাবে বশিষ্ঠমুনি দেবীকে মাতৃরূপে দেখা দেওয়ার নিবেদন করেছিলেন । সমুদ্র মন্থনের সময় নীলকণ্ঠ পান করে মহাদেব শিথিল হয়ে পড়েছিলেন ৷ দেবী দুর্গা মা তারা রূপে মহাদেবকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন ৷ শুক্লা চতুর্দশীর দিন সেই মা তারা রূপেই বশিষ্ঠমুনিকে দেখা দিয়েছিলেন তিনি ৷ সেই থেকে এই স্থানের নাম হয় তারাপীঠ । তবে আরও বিভিন্ন মত রয়েছে । বলা হয়, বিষ্ণুর চক্রে সতীর দেহ যখন খণ্ড খণ্ড হয়ে গিয়েছিল, সেই সময় চোখের মণি বা তারা এখানে পড়েছিল ৷ এর বাইরেও আরও পৌরাণিক মত রয়েছে ।

তবে বর্তমানে তারাপীঠে তারা মায়ের মন্দিরটি 1818 সালে বীরভূমের মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায় নির্মাণ করেছিলেন । এই তারাপীঠ আরও খ্যাতিলাভ করে সাধক বামাক্ষ্যাপার ভক্তি ও অলৌকিক কাহিনী সমূহের মধ্যে দিয়ে ৷ 1837 সালে তারাপীঠ সংলগ্ন আটলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় । এই তারাপীঠে দ্বারকা নদীর তীরে সাধনা করে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন ৷ তারাপীঠে মা তারার দর্শন করতে গেলে 'সাধক বামাক্ষ্যাপার' জন্মভিটে দর্শন না করে ফেরেন না ভক্তরা ।

আরও পড়ুন: কৌশিকী অমাবস্যার আগে তারাপীঠে নিষিদ্ধ অনলাইনে পুজো

এই তারাপীঠ মন্দির সংলগ্ন একটি কুণ্ড রয়েছে । কথিত আছে, বণিক জয় দত্ত দ্বারকা নদী পথ ধরে বজরা নিয়ে যাচ্ছিলেন ৷ তারাপীঠের কাছে সাপের কামড়ে তাঁর পুত্রের মৃত্যু হয় ৷ সেই সময় বণিকের এক ভৃত্য মন্দির সংলগ্ন কুণ্ডে কাটা শোল মাছ ধুতে দিয়েছিলেন । জলে ধোয়ার সময় শোল মাছ জীবিত হয়ে জলে চলে যায় । ভৃত্য ছুটে এসে সে কথা জয় দত্তকে জানান ৷ শুনেই তিনি তাঁর মৃত পুত্রকে ওই কুণ্ডে নিয়ে গিয়ে স্নান করাতেই সে জীবিত হয়ে জয় তারা বলে চিৎকার করে ওঠে । এই ঘটনার পর থেকে এই কুণ্ডের নাম হয় 'জীবিত কুণ্ড'। এই কুণ্ড থেকেই মা তারার আবির্ভাব হয়েছিল বলে শোনা যায় ৷

এই রকম বহু অলৌকিক, পৌরাণিক কাহিনী বর্ণিত আছে তারাপীঠের বিভিন্ন পবিত্র স্থানে ৷ বছরে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় এখানে । দেশের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় থেকে মানুষজন আসেন তারাপীঠে । বিশেষ করে রথযাত্রা, কৌশিকী অমাবস্যা, ফলহারিণী অমাবস্যা, কালী পুজো, শুক্লা চতুর্দশী প্রভৃতি দিনগুলিতে ভক্তদের ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশ ও প্রশাসনকে ৷

আরও পড়ুন: তারা মায়ের আবির্ভাব দিবস, সকাল থেকেই পুজো চলছে তারাপীঠ মন্দিরে

তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, "বশিষ্ঠমুনি তপস্যা থেকে সাধক বামাক্ষ্যাপার কাহিনী তারাপীঠকে প্রসিদ্ধ করেছে । মা তারার আশীর্বাদে এখান থেকে সিদ্ধিলাভ করেন সাধকেরা ৷ বণিক জয় দত্তের ছেলেও জীবিত হয়েছিল মা তারার কৃপায় । মন্দির, স্নানের ঘাট, জীবিত কুণ্ড, মহাশ্মশান, বামাক্ষ্যাপার আটলা গ্রাম প্রভৃতি পবিত্র স্থানের এক একটি অলৌকিক কাহিনী রয়েছে ।"

তারাপীঠ মন্দির কমিটির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "কৌশিকী অমাবস্যা, শুক্লা চতুর্দশী, কালী পুজো প্রভৃতি দিনগুলিতে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় । এই দিনগুলিতে বিশেষ রীতি মেনে মায়ের পুজো, স্নান, আরাধনা, সন্ধ্যারতি করা হয় ।"

সতীপীঠ তারাপীঠের পৌরাণিক কাহিনি

তারাপীঠ, 8 সেপ্টেম্বর: প্রখ্যাত সাধকেরা সিদ্ধিলাভ করায় 'সিদ্ধপীঠ' হিসাবে পরিচিত বীরভূমের তারাপীঠ । বশিষ্ঠমুনি থেকে শুরু করে সাধক বামাক্ষ্যাপার অলৌকিক কাহিনীতে পূর্ণ মা তারার এই প্রাঙ্গণ ৷ ঐতিহ্যবাহী তারাপীঠে যে মানুষজন শুধু ভক্তির টানেই ছুটে আসেন তা নয় । ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতিহাসের টানেও এখানে ছুটে আসেন অনেকেই ৷ দেবীর আবির্ভাব ও পৌরাণিক কাহিনি বর্ণিত আছে তারাপীঠের অঙ্গে অঙ্গে ।

কথিত আছে, ব্রহ্মার সপ্তম মানসপুত্র ছিলেন বশিষ্ঠমুনি । তিনি সপ্তর্ষিদের মধ্যে একজন ছিলেন ৷ বীরভূমের এই তারাপীঠ শ্মশান সংলগ্ন স্থানে তিনি মাতৃ আরাধনায় দীর্ঘ তপস্যায় বসেছিলেন । তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গা দেখা দেন । মাতৃগর্ভে তাঁর জন্ম হয়নি বলে বর হিসাবে বশিষ্ঠমুনি দেবীকে মাতৃরূপে দেখা দেওয়ার নিবেদন করেছিলেন । সমুদ্র মন্থনের সময় নীলকণ্ঠ পান করে মহাদেব শিথিল হয়ে পড়েছিলেন ৷ দেবী দুর্গা মা তারা রূপে মহাদেবকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন ৷ শুক্লা চতুর্দশীর দিন সেই মা তারা রূপেই বশিষ্ঠমুনিকে দেখা দিয়েছিলেন তিনি ৷ সেই থেকে এই স্থানের নাম হয় তারাপীঠ । তবে আরও বিভিন্ন মত রয়েছে । বলা হয়, বিষ্ণুর চক্রে সতীর দেহ যখন খণ্ড খণ্ড হয়ে গিয়েছিল, সেই সময় চোখের মণি বা তারা এখানে পড়েছিল ৷ এর বাইরেও আরও পৌরাণিক মত রয়েছে ।

তবে বর্তমানে তারাপীঠে তারা মায়ের মন্দিরটি 1818 সালে বীরভূমের মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায় নির্মাণ করেছিলেন । এই তারাপীঠ আরও খ্যাতিলাভ করে সাধক বামাক্ষ্যাপার ভক্তি ও অলৌকিক কাহিনী সমূহের মধ্যে দিয়ে ৷ 1837 সালে তারাপীঠ সংলগ্ন আটলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় । এই তারাপীঠে দ্বারকা নদীর তীরে সাধনা করে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন ৷ তারাপীঠে মা তারার দর্শন করতে গেলে 'সাধক বামাক্ষ্যাপার' জন্মভিটে দর্শন না করে ফেরেন না ভক্তরা ।

আরও পড়ুন: কৌশিকী অমাবস্যার আগে তারাপীঠে নিষিদ্ধ অনলাইনে পুজো

এই তারাপীঠ মন্দির সংলগ্ন একটি কুণ্ড রয়েছে । কথিত আছে, বণিক জয় দত্ত দ্বারকা নদী পথ ধরে বজরা নিয়ে যাচ্ছিলেন ৷ তারাপীঠের কাছে সাপের কামড়ে তাঁর পুত্রের মৃত্যু হয় ৷ সেই সময় বণিকের এক ভৃত্য মন্দির সংলগ্ন কুণ্ডে কাটা শোল মাছ ধুতে দিয়েছিলেন । জলে ধোয়ার সময় শোল মাছ জীবিত হয়ে জলে চলে যায় । ভৃত্য ছুটে এসে সে কথা জয় দত্তকে জানান ৷ শুনেই তিনি তাঁর মৃত পুত্রকে ওই কুণ্ডে নিয়ে গিয়ে স্নান করাতেই সে জীবিত হয়ে জয় তারা বলে চিৎকার করে ওঠে । এই ঘটনার পর থেকে এই কুণ্ডের নাম হয় 'জীবিত কুণ্ড'। এই কুণ্ড থেকেই মা তারার আবির্ভাব হয়েছিল বলে শোনা যায় ৷

এই রকম বহু অলৌকিক, পৌরাণিক কাহিনী বর্ণিত আছে তারাপীঠের বিভিন্ন পবিত্র স্থানে ৷ বছরে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় এখানে । দেশের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় থেকে মানুষজন আসেন তারাপীঠে । বিশেষ করে রথযাত্রা, কৌশিকী অমাবস্যা, ফলহারিণী অমাবস্যা, কালী পুজো, শুক্লা চতুর্দশী প্রভৃতি দিনগুলিতে ভক্তদের ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশ ও প্রশাসনকে ৷

আরও পড়ুন: তারা মায়ের আবির্ভাব দিবস, সকাল থেকেই পুজো চলছে তারাপীঠ মন্দিরে

তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, "বশিষ্ঠমুনি তপস্যা থেকে সাধক বামাক্ষ্যাপার কাহিনী তারাপীঠকে প্রসিদ্ধ করেছে । মা তারার আশীর্বাদে এখান থেকে সিদ্ধিলাভ করেন সাধকেরা ৷ বণিক জয় দত্তের ছেলেও জীবিত হয়েছিল মা তারার কৃপায় । মন্দির, স্নানের ঘাট, জীবিত কুণ্ড, মহাশ্মশান, বামাক্ষ্যাপার আটলা গ্রাম প্রভৃতি পবিত্র স্থানের এক একটি অলৌকিক কাহিনী রয়েছে ।"

তারাপীঠ মন্দির কমিটির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "কৌশিকী অমাবস্যা, শুক্লা চতুর্দশী, কালী পুজো প্রভৃতি দিনগুলিতে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় । এই দিনগুলিতে বিশেষ রীতি মেনে মায়ের পুজো, স্নান, আরাধনা, সন্ধ্যারতি করা হয় ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.