চাকাইপুর 9 মে : বীরভূমের নারায়ণপুর অঞ্চলের খড়িডাঙ্গা, শালবুনি, রনিগ্রাম বেনাকুড়া, বিভিন্ন এলাকার গোয়ালারা আজও পরিবার গ্রাম ছেড়ে বছরে প্রায় চার মাস বাইরে থাকে । তারা গবাদি পশুর পাল নিয়ে চলে যায় লোকালয় থেকে দূরে বিস্তীর্ণ কোনও তৃণভূমি বেষ্টিত স্থানে । সারাদিন গোরু চরানোর পর সন্ধ্যায় ফিরে আসে আবার বাথানে । এভাবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস তারা সেখানে জীবন কাটায় ৷ বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ফিরে আসে গ্রামে । বাথান বাসের সময় গো-পালের গোরু বৃদ্ধি পায় ৷ এটুকুই তাদের লাভ । তাছাড়া বাথানে গোরুর যে দুধ হয় তা বিক্রি করে আয় হয় ।
বর্তমানে গোরু পালনের জন্য অত্যাধুনিক খামার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে বিভিন্ন এলাকায় । কিন্তু প্রাচীনকালে এরকম ছিল না । সেই সময় বেশি সংখ্যক গবাদি পশু লালন পালনের জন্য তৃণভূমি খোঁজ করতে গোয়ালারা এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেত । এই প্রথার নাম "বাথান" । "বাথান" শব্দের অর্থ গবাদিপশুর আবাসস্থল । প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্যে গো-পালকদের সঙ্গে দেবদেবীদের সম্পর্ক গড়ে তোলার অনেক উল্লেখ আছে । কিংবদন্তি অনুসারে দেবী মনসা'র ছদ্মবেশে বাথানে অবরোহণ করেন ৷ এক গোয়ালার কাছে আশ্রয় চান ।
কিন্তু এই বছর বাথান যাওয়ার কিছুদিন পরেই দেশে কোরোনা সতর্কতায় শুরু হয়েছে লকডাউন । লকডাউনের শুরু থেকে কোনওভাবে দিন কাটাচ্ছিল তারা । কিন্তু কয়েকদিন আগে রামপুরহাটের ভক্ত রামের এক যুবক কোরোনা সংক্রমিত হওয়ার পর বিপাকে পড়েছে তারা । বাথান সংলগ্ন গ্রামগুলিতে, যেখানে তারা প্রতিদিন বাথানের সংগ্রহ দুধ বিক্রি করতে যেত ৷ প্রবেশপথ বাঁশ দিয়ে ঘেরা । ফলে বেশ কয়েকদিন থেকেই বিক্রি হচ্ছে না তাদের দুধ । কোনওভাবে দিন কাটাচ্ছে তারা । তার উপর প্রতিদিন রাতে ঝড়-বৃষ্টিতে নাজেহাল হয়ে উঠছে তাদের জীবন । 300 গরু, মোষ নিয়ে 7 জন গোয়ালা অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে মাঝ মাঠে ।
বছর ষাটের কলেশ্বর মাহাতো বলেন, " বহু বছর থেকে আমরা প্রতিবছরই চার মাস বাইরে থাকি । গোরু-মোষের খাবারের জন্য দূর দূরান্তে চলে যাই । ফাঁকা মাঠের মধ্যে একটি জায়গায় বাথান তৈরি করে সেখানে রান্না করি । দিনের শেষে গোরু মোষ থেকে দুধ সংগ্রহ করি ৷ তারপর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বিক্রি করতে যাই । কিন্তু এবছর লকডাউন হওয়ার পর থেকেই মিষ্টির দোকান সব বন্ধ ৷ দুধ বিক্রি হচ্ছে না । তার উপর কয়েকদিন থেকেই প্রায় প্রতিটা গ্রামে ঢুকতে পারছি না ৷ রাস্তায় বাঁশ দিয়ে ঘেরা । কী করব বুঝতে পারছি না । "
বাথানের আর এক গোয়ালা ভিড়ের মাহাতো বলেন, " খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি ৷ এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও সাহায্য পাইনি ৷ আগামী দিনে কিভাবে জীবন যাপন করব সেই চিন্তায় রাত্রে ঘুম হচ্ছে না ৷ তার উপর কালবৈশাখি ঝড় । এই সময়টায় সরকারি সাহায্য পেলে খুব উপকৃত হতাম ৷ "