বোলপুর, 31 অগস্ট: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের সাধনা স্থল ৷ প্রাণপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে আড়াই বিঘা জমি, বাড়ি-সহ কমপক্ষে 10 কোটি টাকার সম্পত্তি দান করলেন প্রবাসী বাঙালি দম্পতি । দু'জনেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বিজ্ঞানী অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী নীতা মুখোপাধ্যায় এদিন সম্পূর্ণ সম্পত্তির কাগজপত্র তুলে দেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য ও কর্মসচিবের হাতে । সম্পত্তি হস্তান্তরের পর নাম না-করে অমর্ত্য সেনকে বিঁধলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী । তিনি বলেন, "একজন সাড়ে ছ'কাটা জমির জন্য কী করছেন দেখুন ৷ আরেকজন নির্দ্বিধায় গুরুদেবকে এতবড় সম্পত্তি দান করে দিলেন ।"
মুর্শিদাবাদের কাকগ্রামের বাসিন্দা অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়। সেখান থেকেই 1951 সালে শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে পড়াশোনা করতে আসেন। সেই বছরই বিশ্বভারতী ‘কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ হয় ৷ এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন ইংল্যান্ড। গবেষণা করেন মেটেরিয়াল সাইন্স নিয়ে। তাঁর নামে একাধিক পেটেন্টও রয়েছে । লন্ডনে কর্মরত অবস্থায় 1997 সালে শান্তিনিকেতনের সীমান্তপল্লীতে একটি বাড়ি করেন । প্রায় আড়াই বিঘা জমির উপর সেই অট্টালিকা ৷ আউট হাউস, গোয়াল ঘর, লন থেকে পুকুর- সবই আছে । বর্তমান বাজারমূল্য 10 কোটি টাকার কম নয় । অরবিন্দবাবু ও তাঁর স্ত্রী নীতা মুখোপাধ্যায়ের এক পুত্র ও এক কন্যা আছেন ৷ তাঁরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে এখন অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত।
ফলে অবসরজীবনে এসে প্রবাসী বাঙালি দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের শান্তিনিকেতনের বাড়িটি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতীকে উপহার দেবেন । সেইমতো এদিন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব মানবেন্দ্রনাথ সাহার উপস্থিতিতে সমস্ত সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দেন ৷ অর্থাৎ, এদিন থেকে বিজ্ঞানী অরবিন্দবাবুর সম্পত্তি বিশ্বভারতীর । উল্লেখ্য, বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, 1951 সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকে এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বিশ্বভারতীকে কেউ দান করেননি ৷
আরও পড়ুন: আমেরিকায় বিলাসিতা ছেড়ে চাষ ও গবেষণাতেই দিন কাটছে দেবল-অপরাজিতার
বিশ্বভারতীর হাতে সম্পত্তি তুলে দেওয়ার পর আবেগঘন বিজ্ঞানী অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমার জীবনের অনেকখানি প্রাপ্তি বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করা। এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। খুব কষ্ট করে পড়েছি। বিশ্বভারতী থেকে শৃঙ্খলা শিখেছি। তাই খুব ইচ্ছে ছিল আমাদের সবকিছু বিশ্বভারতীকে দিয়ে যাব । একটা বড় কাজের সমাপন হল ৷ এবার লন্ডনে ফিরে যাব ।"
এই প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের নাম না-করে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, "একজন মানুষ সাড়ে ছ'কাঠা জমির জন্য বিশ্বজুড়ে কী করে বেড়াচ্ছেন দেখুন ৷ আর একজন মানুষ নির্দ্বিধায় এত সম্পত্তি নিঃশর্তে বিশ্বভারতীকে দান করে দিলেন ৷ এটা নজিরবিহীন । সবাই দেখুক এই নজির ৷ আমরা আপ্লুত যে এখনও অরবিন্দবাবু এবং নীতাদেবীর মতো মানুষ আছেন । এই বাড়িটিকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করব সেই সিদ্ধান্ত পরে নেব ।’’