শান্তিনিকেতন, 5 সেপ্টেম্বর : গলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে/নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?" ৷ হাতে ফুলের তোড়া, পোস্টার ৷ বিক্ষোভ, অবস্থান চলছে ৷ তার মধ্যে আজ "শিক্ষক দিবস" ৷ তাই যাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন, সেই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে এই দিনে শ্রদ্ধা জানাতে আজ সকালে অবস্থান মঞ্চ থেকে এই গান গেয়ে তাঁর বাড়িতে পৌঁছালেন পড়ুয়ারা ৷ তাঁদের কারও হাতে ফুলের তোড়া, কারও হাতে পোস্টার ৷ পোস্টারে লেখা "উপাচার্য মহাশয়ের কাছে আবেদন, তিনটি ছাত্রজীবনকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না ৷"
উপাচার্যের বাড়ি পৌঁছালেও তাঁর হাতে তুলে দেওয়া গেল না আর্জি জানানো পোস্টার আর ফুলের তোড়া ৷ তাঁর বাড়ির সামনে এখন কড়া প্রহরা ৷ তাও আজকের বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর বাড়ির নিরাপত্তাক্ষীদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন পড়ুয়ারা । কিন্তু সে আবেদনে সাড়া মেলেনি ৷ তাই বাসভবন পূর্বিতার লোহার গেটের সামনে ফুলের তোড়া ও পোস্টার নামিয়ে রেখে আসেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা ৷ তাঁরা জানান, উপাচার্য তাঁদের শিক্ষক ৷ তাই আজ শিক্ষক দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন তাঁরা । কিন্তু দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন যেমন চলছে, তেমনই চলবে ।
গত এক বছরে প্রায় 12 জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকাকে সাসপেন্ড করেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী । এ ছাড়া বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের দুই ছাত্র ও সঙ্গীত ভবনের এক ছাত্রীকে ছ'মাসের জন্য সাসপেন্ড করলেও পরে সেই সাসপেনশন আরও 3 মাস বাড়ানো হয় ৷ এই সময়কালে ওই 3 পড়ুয়াকে 3 বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় ।
এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের একটি বড় অংশ । কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভের পর 27 অগস্ট রাত থেকে শান্তিনিকেতনে উপাচার্যের বাসভবন পূর্বিতা ঘেরাও করা হয় ।তবে আদালতের নির্দেশে উপাচার্যের বাড়ি থেকে 50 মিটার দূরে অবস্থানমঞ্চ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে আন্দোলনকারীরা ৷ কিন্তু সেই দিন থেকে এখনও পর্যন্ত নিজের বাসভবনে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ।
পড়ুয়াদের মধ্যে সোমনাথ সৌ বলেন, "আজ শিক্ষক দিবস, তাই আমাদের শিক্ষক উপাচার্য মহাশয়কে আমরা ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মান জানালাম । উনি নিতে এলেন না, সেটা আলাদা বিষয় । তবে আমাদের আন্দোলন যেমন চলছে চলবে ।" তিনি জানান শিক্ষা প্রদান করা শিক্ষকদের কাজ আর ছাত্রছাত্রীদের কাজ শিক্ষা গ্রহণ করা ৷ এমনকি এটা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার ৷ কিন্তু এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা ৷ তাই আজ উপাচার্য মহাশয়ের কাছে "আমাদের আবেদন, তিনি আমাদের যে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন, তা ফিরিয়ে দিন", বললেন সোমনাথ ৷