ETV Bharat / state

সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন অরণিবাবুর

বিজ্ঞানকে নিখুঁতভাবে ব্যবহার করে স্বল্প ব্যয়ে ও দূষণমুক্ত ভাবে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে 25 বছর ধরে গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তী । 25 বছর ধরে তাঁর বাড়িতে আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতো নেই তাপবিদ্যুৎ। সৌরশক্তি দিয়েই সমস্ত যন্ত্রাংশ চালিত হয় ।

সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূষণহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন অরণিবাবুর
সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূষণহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন অরণিবাবুর
author img

By

Published : Jun 19, 2021, 10:42 PM IST

Updated : Jun 23, 2021, 12:48 PM IST

শান্তিনিকেতন, 19 জুন : গোল লাইট হাউজ়ের আদলে তৈরি বাড়ি ৷ আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতো নয় ৷ বাড়িটিতে তাপবিদ্যুৎ নেই ৷ চারপাশে অদ্ভুত রকমের যন্ত্র ৷ কোথাও থ্রিডি প্রিন্টার সাইকেল ৷ যার নামও মনে হয় কেউ শোনেননি ৷ রয়েছে ভৌমজল উত্তোলনের ব্যবস্থাও ৷ বাড়ির ঠিকানা শান্তিনিকেতনের উত্তরপল্লি ৷ মালিক অরণি চক্রবর্তী ৷ পেশা অধ্যাপনা ৷ নেশা বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করা ৷ উদ্দেশ্য দূষণমুক্ত পরিবেশ ও খরচ কমানো ৷ কাজে লাগাচ্ছেন সৌরশক্তিকে ৷ তাপবিদ্যুৎ ছাড়া সোলার প্যানেলের মাধ্যমে জ্বলছে লাইট ৷ চার্জ হচ্ছে মোবাইল ৷

বিজ্ঞানকে নিখুঁতভাবে ব্যবহার করে স্বল্প ব্যয়ে ও দূষণমুক্ত ভাবে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে 25 বছর ধরে গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তী । 25 বছর ধরে তাঁর বাড়িতে আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতো নেই তাপবিদ্যুৎ। সৌরশক্তি দিয়েই সমস্ত যন্ত্রাংশ চালিত হয় । বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ছাড়াই ভৌম জল উত্তোলন থেকে শুরু করে প্রাচীন রোমান কায়দা ব্যবহার করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রও তৈরি করেছেন এই বিজ্ঞানী । বর্তমানে সৌরশক্তি দ্বারা চালিত ইঞ্জিন ও নিজেই নিজের চিকিৎসা করা যাবে এমন সফটওয়্যার তৈরিতে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন বিশ্বভারতীর পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তী ।

অরণিবাবুর তৈরি করা অত্যাধুনিক সাইকেল
অরণিবাবুর তৈরি করা অত্যাধুনিক সাইকেল
বিশ্বভারতীর পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অরণি চক্রবর্তী । 1997 সাল থেকে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন । তাঁর নিজের তৈরি এক অন্য ধরনের সাইকেল নিয়ে তাঁকে অনেকেই চলাফেরা করতে দেখেন । ভিন্ন ধরনের সাইকেল হওয়ায় তিনি বোলপুর-শান্তিনিকেতনের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত মুখ । কলকাতা বয়েজ স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন । তারপর বিশ্বভারতীতে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন । শান্তিনিকেতনের উত্তরপল্লিতে সস্ত্রীক বসবাস করেন বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তী । তাঁর স্ত্রী সমিতা শীল সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপিকা ছিলেন । বর্তমানে তিনিও তাঁর স্বামীর সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত ।
গোল লাইট হাউজ়ের আদলে তৈরি অরণিবাবুর বাড়ি যেন গবেষণাগার
গোল লাইট হাউজ়ের আদলে তৈরি অরণিবাবুর বাড়ি যেন গবেষণাগার



চুম্বকত্ব, স্পিন গ্লাস, সৌরশক্তির দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন, সফটওয়্যার তৈরি-সহ মেটা ফিজিক্সের উপর অরণিবাবুর সমস্ত গবেষণা । তাঁর নিজের নকশা করা সোলার প্যানেলের দ্বারা লাইট, ফ্যান-সহ, মোবাইল চার্জ হওয়া, কম্পিউটার প্রভৃতি চালিত হয় । বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ছাড়াই ভৌম জল উত্তোলনের যন্ত্রাংশ তৈরি করেছেন তিনি । পায়ে করে সেই যন্ত্রে পাম্প করলেই মাটির তলা থেকে জল উঠে আসে । এছাড়া, তিনি তৈরি করেছেন 'গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জিং সিস্টেম ৷' এটি হল, বৃষ্টির জল ফিল্টার হয়ে পুনরায় মাটির নিচে জল প্রবেশ করানোর পদ্ধতি । এটিও বিদ্যুৎ ছাড়াই তৈরি করা । বাড়ির মধ্যে একটি পুকুর রয়েছে । সেই পুকুরের চারকোণে চারটি কুয়ো আছে । মাটির নিচের জলস্তর পর্যন্ত কুয়োর মধ্যে বড় চারটি পাইপ রয়েছে । সেই পাইপ দিয়ে বৃষ্টির জল পরিস্রুত হয়ে পুনরায় ভূগর্ভে প্রবেশ করে ।

আরও পড়ুন, ECL coal mines : রক্ষা মিলেছে বরাতজোরে, বেআইনি খনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কী, উত্তর অধরাই

বর্তমানে সকলেই বাজারজাত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন । কিন্তু, বিজ্ঞানী অরণিবাবুর বাড়িতে রয়েছে এক অদ্ভুত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র । বাড়ির বাইরে বেশ কয়েকটি পাইপ মাটির নিচে চলে গিয়েছে । তার কাছ থেকে জানা গিয়েছে, সেই পাইপের মুখ দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে । সেই বাতাস পুকুরের নিচে থাকা পাইপ দিয়ে এসে একটি বড় পাইপের সঙ্গে যুক্ত হয় । সেই বড় পাইপ দিয়ে বাড়ির ভিতরে শীতল বাতাস প্রবেশ করে । এভাবেই বাইরের তাপমাত্রা থেকে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে । এই পদ্ধতি প্রথম রোমানরা ব্যবহার করেছিল । রোমের সেই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ছাড়াই অরণিবাবুর বাড়ি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত । এছাড়াও বাড়ির ভিতরে একাধিক ছোটখাটো যন্ত্রাংশ তিনি নিজেই বানিয়ে নিয়েছেন । যেমন, তাঁর অ্যাসেম্বল করা কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবস্থা, থ্রিডি প্রিন্টার আরামদায়ক সাইকেল প্রভৃতি ।

ভৌম জল উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে
ভৌম জল উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে

বর্তমানে তিনি একটি সফটওয়্যার বানানোর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন । এই সফটওয়্যার বানাতে তাঁকে সহযোগিতা করছেন তাঁর স্ত্রী অধ্যাপিকা সমিতা শীল । সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে মানুষ নিজের চিকিৎসার নিজেই করতে পারবেন । হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছেন সস্ত্রীক বিজ্ঞানী অরণিবাবু । তাঁর কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজের অসুখের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানালে, সফটওয়্যার বিভিন্ন পরামর্শ দেবে । এমনকি, কী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে তারও পরামর্শ দেবে । অরণিবাবুর বিশ্বাস, পরবর্তীকালে এই সফটওয়্যার চিকিৎসকদেরও খুব কাজে লাগবে । দীর্ঘ চার বছর ধরে এই সফটওয়্যার তৈরির কাজ করছেন তিনি ।

সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূষণহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন অরণিবাবুর

আরও পড়ুন, ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগ, ধ্বংসের মুখে রায়পুর রাজবাড়ি

পাশাপাশি, সৌরশক্তির দ্বারা চালিত স্বল্প ব্যয়ে ইঞ্জিন তৈরি নিয়েও গবেষণা করে চলেছেন । এছাড়াও, তাঁর স্বপ্ন পশুপালন করে উৎপাদিত মাংসের বদলে কৃত্রিমভাবে মাংস তৈরি করা । যাকে বলে 'আর্টিফিশিয়াল মিট'। স্বাদ একই রেখে কৃত্রিম মাংস তৈরি করতে চান তিনি । তাঁর ধারণা, এই ধরনের জিনিস তৈরি ও ব্যবহারের ফলে দুটো দিকে আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে । তা হল- এক, খরচ বহু অংশে কমবে। দুই, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠবে । এই সবকিছুর ফাঁকে মাঝেমধ্যে বেহালাও বাজান তিনি ।

অরণিবাবু বলেন, "অধ্যাপনা করি ৷ পাশাপাশি বিজ্ঞান চর্চা ও তা নিয়ে নাড়া-ঘাটা করা আমার একটা স্বভাব। হঠাৎ হঠাৎ ভাবনা আসে, সেই ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে যেটা ইচ্ছে বানাতে শুরু করি। এই ধরনের জিনিসগুলো একদিকে যেমন কম খরচ, অন্যদিকে দূষণ হয় না । তাছাড়া, বারবার কারেন্ট যাওয়ারও কোনও ব্যাপার থাকে না ৷ এগুলো ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপনও করা যায়। ভবিষ্যতে আরও ভাবনা আছে । সফটওয়্যার তৈরি, সোলার ইঞ্জিন, আর্টিফিশিয়াল মিট তৈরি করার। তবে তা সম্ভব হবে কি না জানি না ৷ তবে ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে রয়েছে ৷ "

এককথায় বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তীর বাড়ি এক গবেষণাগার । অভূতপূর্ব বিজ্ঞান সাধনায় 25 বছর ধরে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছেন তিনি । ভাবনাগুলিও সম্পূর্ণ ভিন্ন ও জনহিতকারী । যা অন্যদের প্রেরণা জোগাবে ৷

শান্তিনিকেতন, 19 জুন : গোল লাইট হাউজ়ের আদলে তৈরি বাড়ি ৷ আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতো নয় ৷ বাড়িটিতে তাপবিদ্যুৎ নেই ৷ চারপাশে অদ্ভুত রকমের যন্ত্র ৷ কোথাও থ্রিডি প্রিন্টার সাইকেল ৷ যার নামও মনে হয় কেউ শোনেননি ৷ রয়েছে ভৌমজল উত্তোলনের ব্যবস্থাও ৷ বাড়ির ঠিকানা শান্তিনিকেতনের উত্তরপল্লি ৷ মালিক অরণি চক্রবর্তী ৷ পেশা অধ্যাপনা ৷ নেশা বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করা ৷ উদ্দেশ্য দূষণমুক্ত পরিবেশ ও খরচ কমানো ৷ কাজে লাগাচ্ছেন সৌরশক্তিকে ৷ তাপবিদ্যুৎ ছাড়া সোলার প্যানেলের মাধ্যমে জ্বলছে লাইট ৷ চার্জ হচ্ছে মোবাইল ৷

বিজ্ঞানকে নিখুঁতভাবে ব্যবহার করে স্বল্প ব্যয়ে ও দূষণমুক্ত ভাবে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে 25 বছর ধরে গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তী । 25 বছর ধরে তাঁর বাড়িতে আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতো নেই তাপবিদ্যুৎ। সৌরশক্তি দিয়েই সমস্ত যন্ত্রাংশ চালিত হয় । বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ছাড়াই ভৌম জল উত্তোলন থেকে শুরু করে প্রাচীন রোমান কায়দা ব্যবহার করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রও তৈরি করেছেন এই বিজ্ঞানী । বর্তমানে সৌরশক্তি দ্বারা চালিত ইঞ্জিন ও নিজেই নিজের চিকিৎসা করা যাবে এমন সফটওয়্যার তৈরিতে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন বিশ্বভারতীর পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তী ।

অরণিবাবুর তৈরি করা অত্যাধুনিক সাইকেল
অরণিবাবুর তৈরি করা অত্যাধুনিক সাইকেল
বিশ্বভারতীর পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অরণি চক্রবর্তী । 1997 সাল থেকে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন । তাঁর নিজের তৈরি এক অন্য ধরনের সাইকেল নিয়ে তাঁকে অনেকেই চলাফেরা করতে দেখেন । ভিন্ন ধরনের সাইকেল হওয়ায় তিনি বোলপুর-শান্তিনিকেতনের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত মুখ । কলকাতা বয়েজ স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন । তারপর বিশ্বভারতীতে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন । শান্তিনিকেতনের উত্তরপল্লিতে সস্ত্রীক বসবাস করেন বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তী । তাঁর স্ত্রী সমিতা শীল সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপিকা ছিলেন । বর্তমানে তিনিও তাঁর স্বামীর সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত ।
গোল লাইট হাউজ়ের আদলে তৈরি অরণিবাবুর বাড়ি যেন গবেষণাগার
গোল লাইট হাউজ়ের আদলে তৈরি অরণিবাবুর বাড়ি যেন গবেষণাগার



চুম্বকত্ব, স্পিন গ্লাস, সৌরশক্তির দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন, সফটওয়্যার তৈরি-সহ মেটা ফিজিক্সের উপর অরণিবাবুর সমস্ত গবেষণা । তাঁর নিজের নকশা করা সোলার প্যানেলের দ্বারা লাইট, ফ্যান-সহ, মোবাইল চার্জ হওয়া, কম্পিউটার প্রভৃতি চালিত হয় । বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ছাড়াই ভৌম জল উত্তোলনের যন্ত্রাংশ তৈরি করেছেন তিনি । পায়ে করে সেই যন্ত্রে পাম্প করলেই মাটির তলা থেকে জল উঠে আসে । এছাড়া, তিনি তৈরি করেছেন 'গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জিং সিস্টেম ৷' এটি হল, বৃষ্টির জল ফিল্টার হয়ে পুনরায় মাটির নিচে জল প্রবেশ করানোর পদ্ধতি । এটিও বিদ্যুৎ ছাড়াই তৈরি করা । বাড়ির মধ্যে একটি পুকুর রয়েছে । সেই পুকুরের চারকোণে চারটি কুয়ো আছে । মাটির নিচের জলস্তর পর্যন্ত কুয়োর মধ্যে বড় চারটি পাইপ রয়েছে । সেই পাইপ দিয়ে বৃষ্টির জল পরিস্রুত হয়ে পুনরায় ভূগর্ভে প্রবেশ করে ।

আরও পড়ুন, ECL coal mines : রক্ষা মিলেছে বরাতজোরে, বেআইনি খনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কী, উত্তর অধরাই

বর্তমানে সকলেই বাজারজাত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন । কিন্তু, বিজ্ঞানী অরণিবাবুর বাড়িতে রয়েছে এক অদ্ভুত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র । বাড়ির বাইরে বেশ কয়েকটি পাইপ মাটির নিচে চলে গিয়েছে । তার কাছ থেকে জানা গিয়েছে, সেই পাইপের মুখ দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে । সেই বাতাস পুকুরের নিচে থাকা পাইপ দিয়ে এসে একটি বড় পাইপের সঙ্গে যুক্ত হয় । সেই বড় পাইপ দিয়ে বাড়ির ভিতরে শীতল বাতাস প্রবেশ করে । এভাবেই বাইরের তাপমাত্রা থেকে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে । এই পদ্ধতি প্রথম রোমানরা ব্যবহার করেছিল । রোমের সেই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ছাড়াই অরণিবাবুর বাড়ি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত । এছাড়াও বাড়ির ভিতরে একাধিক ছোটখাটো যন্ত্রাংশ তিনি নিজেই বানিয়ে নিয়েছেন । যেমন, তাঁর অ্যাসেম্বল করা কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবস্থা, থ্রিডি প্রিন্টার আরামদায়ক সাইকেল প্রভৃতি ।

ভৌম জল উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে
ভৌম জল উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে

বর্তমানে তিনি একটি সফটওয়্যার বানানোর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন । এই সফটওয়্যার বানাতে তাঁকে সহযোগিতা করছেন তাঁর স্ত্রী অধ্যাপিকা সমিতা শীল । সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে মানুষ নিজের চিকিৎসার নিজেই করতে পারবেন । হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছেন সস্ত্রীক বিজ্ঞানী অরণিবাবু । তাঁর কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজের অসুখের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানালে, সফটওয়্যার বিভিন্ন পরামর্শ দেবে । এমনকি, কী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে তারও পরামর্শ দেবে । অরণিবাবুর বিশ্বাস, পরবর্তীকালে এই সফটওয়্যার চিকিৎসকদেরও খুব কাজে লাগবে । দীর্ঘ চার বছর ধরে এই সফটওয়্যার তৈরির কাজ করছেন তিনি ।

সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূষণহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন অরণিবাবুর

আরও পড়ুন, ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগ, ধ্বংসের মুখে রায়পুর রাজবাড়ি

পাশাপাশি, সৌরশক্তির দ্বারা চালিত স্বল্প ব্যয়ে ইঞ্জিন তৈরি নিয়েও গবেষণা করে চলেছেন । এছাড়াও, তাঁর স্বপ্ন পশুপালন করে উৎপাদিত মাংসের বদলে কৃত্রিমভাবে মাংস তৈরি করা । যাকে বলে 'আর্টিফিশিয়াল মিট'। স্বাদ একই রেখে কৃত্রিম মাংস তৈরি করতে চান তিনি । তাঁর ধারণা, এই ধরনের জিনিস তৈরি ও ব্যবহারের ফলে দুটো দিকে আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে । তা হল- এক, খরচ বহু অংশে কমবে। দুই, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠবে । এই সবকিছুর ফাঁকে মাঝেমধ্যে বেহালাও বাজান তিনি ।

অরণিবাবু বলেন, "অধ্যাপনা করি ৷ পাশাপাশি বিজ্ঞান চর্চা ও তা নিয়ে নাড়া-ঘাটা করা আমার একটা স্বভাব। হঠাৎ হঠাৎ ভাবনা আসে, সেই ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে যেটা ইচ্ছে বানাতে শুরু করি। এই ধরনের জিনিসগুলো একদিকে যেমন কম খরচ, অন্যদিকে দূষণ হয় না । তাছাড়া, বারবার কারেন্ট যাওয়ারও কোনও ব্যাপার থাকে না ৷ এগুলো ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপনও করা যায়। ভবিষ্যতে আরও ভাবনা আছে । সফটওয়্যার তৈরি, সোলার ইঞ্জিন, আর্টিফিশিয়াল মিট তৈরি করার। তবে তা সম্ভব হবে কি না জানি না ৷ তবে ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে রয়েছে ৷ "

এককথায় বিজ্ঞানী অরণি চক্রবর্তীর বাড়ি এক গবেষণাগার । অভূতপূর্ব বিজ্ঞান সাধনায় 25 বছর ধরে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছেন তিনি । ভাবনাগুলিও সম্পূর্ণ ভিন্ন ও জনহিতকারী । যা অন্যদের প্রেরণা জোগাবে ৷

Last Updated : Jun 23, 2021, 12:48 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.