বীরভূম, ২৩ নভেম্বর : তিনি জননেতা । আপদে-বিপদে সাধারণ মানুষ না কি তাঁকে পাশে পান । বারবার এমনই দাবি করতে শোনা গেছে মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতিপ্রিয় কেষ্টা তথা অনুব্রত মণ্ডলকে । কিন্তু 'জননেতা' কেষ্ট এবং তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করেছে রাজ্য সরকার । সংখ্যাটা নয় নয় করে 60 ছুঁয়ে গেছে । বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা । তাদের দাবি, রাজ্যের আর কোনও জেলায় আর কোনও তৃণমূল নেতা বা মন্ত্রীদের জন্য এই সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী নেই ।
বীরভূম জেলায় সর্বাধিক নিরাপত্তা বলয়ে থাকেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল । সর্বক্ষণ কমপক্ষে 8 জন নিরাপত্তারক্ষীর ঘেরাটোপে দেখা যায় তাঁকে । যদি তিনি কোনও জনসভায় যান, সেখানে আরও 4 জন মহিলা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয় তাঁর জন্য । বীরভূমের BJP জেলা সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,"অনুব্রত মণ্ডল সেই দলের সভাপতি, যিনি আকথা-কুকথা বলে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসতে খুব পছন্দ করেন । বাংলার মানুষ এই বিষয়টাকে ভালো চোখে দেখে না । তাই তাকে নিরাপত্তা দিতেই হবে । তার দলের ভিতরেই নিরাপত্তার অভাব । কেষ্টবাবু আবার উন্নয়ন বাহিনী তৈরি করেছিলেন । যার সরকার, যার পুলিশ বাহিনী, উন্নয়ন বাহিনী, যিনি এত বোম, বারুদ, বন্দুকের কারখানা তৈরি করেছেন বীরভূমে, তার পুলিশ বাহিনীর দরকার নেই । নিরাপত্তার জন্য তার পার্টি যথেষ্ট ।"
এই জেলার কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও নিরাপত্তারক্ষী পান । জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরিকেও নিরাপত্তা দেওয়া হয় । রাজনৈতিক সংঘর্ষ লেগেই থাকে এই জেলায় । সেজন্য এই জেলার 19 ব্লকের মধ্যে 18 জন ব্লক সভাপতিকেই নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে । একইভাবে বিধায়ক ও সাংসদ অসিত মালের নিরাপত্তায় সর্বদা 6 জন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে । এমন কী, তৃণমূল জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, নানুরের জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ করিম খান, লাভপুরের তৃণমূল নেতা আবদুল মান্নানকেও নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে । সভা,মিছিল ইত্যাদি থাকলে নেতাদের জন্য আরও পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয় । প্রশাসনের একাংশের দাবি, কলকাতার বাইরে ও রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলির চেয়ে এই জেলায় তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের নিরাপত্তায় সবচেয়ে বেশি পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে । অনুব্রত মণ্ডল বা তাঁর অনুগামীদের নিরাপত্তায় এত রক্ষী কেন? এই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা । দিলীপবাবু বলেন, "বাংলার মানুষের নিরাপত্তা জলাঞ্জলি দিয়ে শাসক দলের নেতাদের নিরাপত্তার জন্য সংবিধানে হাত রেখে একজন মুখ্যমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন । বীরভূমের প্রত্যেক নেতার পিছনে নিরাপত্তার জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, দেশের আর কোথাও অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের পিছনে এত খরচ করা হয় না ।"
এই বিষয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "সিকিওরিটি কেন দেওয়া হয়েছে পুলিশ জানে । পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন, বলতে পারবে ।" যদিও, এই প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাননি জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিং ।