বাঁকুড়া, 8 মে : মাটি খুঁড়ে জল বের করার কথা আমরা ইতিহাসে পড়েছি ৷ প্রাচীন যুগে মানুষ নদীর জল পানীয় হিসেবে ব্যবহার করত ৷ বাঁকুড়া (Bankura News) জেলার বড়জোড়া ব্লকের অন্তর্গত ছান্দার গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁকুড়াডাঙা গ্রামের অবস্থা এখনও প্রাচীন যুগের মতোই । এখানে বিশুদ্ধ পানীয় জল খাওয়া যেন বিলাসিতার সমান (Drinking Water Problem in a Village of Bankura) ৷
গরমের তীব্রতা যে কতখানি পড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ টিভি খুললেই গরমে শরীর ভাল রাখার উপায় হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন বারবার জল খাওয়ার কথা ৷ সারাদিনে জল আমাদের কী কাজে লাগে তা তো বলার অপেক্ষায় রাখে না ৷ কিন্তু বাঁকুড়ার এই গ্রামের জলছবিটা দেখলে ভাবতে হবে আমাদের সবাইকে (Water Crisis in West Bengal)৷ বাকি কাজ তো দূর অস্ত ৷ পানের জন্যও পর্যাপ্ত জল পাচ্ছেন না এখানকার বাসিন্দারা ৷
আরও পড়ুন : 'জল' বিশ্বের জন্য লুকিয়ে থাকা একটি বিপদ
তীব্র রোদে তপ্ত বালির উপর দিয়ে কলসি কাঁখে হেঁটে যান গ্রামের মহিলারা ৷ জলের জন্য অতিক্রম করতে হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার পথ ৷ বাচ্চারাও সঙ্গ দিয়েছে তাতে ৷ গ্রামের এক প্রান্তে বয়ে চলেছে শালী নদী ৷ সেই নদীর পাশে বালি খুঁড়ে সেখান থেকেই জল তুলে বালতি ও কলসিতে ভরছেন পুরুষ-মহিলা ও বাচ্চারা ৷ ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব ৷
গ্রামের এক বাসিন্দা লতিকা তুঙ্গ বলেন, "জন্ম থেকে দেখে আসছি এই জলের সমস্যা ৷ বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এলে খাবার দেওয়ার চেয়েও বেশি ভাবনা হয় দু'গ্লাস জল চাইলে তা কীভাবে দেব ৷ তীব্র গরমে বছরের পর বছর ধরে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন গোটা গ্রাম ৷ নেতা-মন্ত্রীদের বলেও কোনও সুরাহা হয়নি ৷ বাচ্চাদের ঠিক করে জলটাও খাওয়াতে পারি না ৷ গ্রামে জলের অভাবে পশু-পাখিরাও কষ্ট পায় ৷"
আরও পড়ুন : জল সংকট এড়ানোর একমাত্র উপায় পরিমিত ব্যবহার ও সংরক্ষণ
"আমার কাঁচা বাড়িতে যদি আগুন লাগে তবে জলের অভাবে আমাদের জ্যান্ত পুড়ে মরতে হবে ৷ গ্রামে কোনও জলের ব্য়বস্থা নেই ৷ একমাত্র নদীই ভরসা ৷ সকলেই দেখে গিয়েছেন ৷ কিন্তু ওই দেখায় সার ৷ কাজের কাজ কিছুই হয়নি ৷" বলছেন গ্রামের বাসিন্দা শঙ্কর ভঞ্জ ৷ শতবার প্রশাসনে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি ৷ মিলেছে শুধু আশ্বাস ৷ এবারেও তাই ৷ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়কে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন,"কাজ শুরু হয়েছে ৷ একটু সময় লাগবে ৷"
কিন্তু গ্রামবাসীদের একটাই প্রশ্ন ৷ কবে আসবে সেই সময় ? এক বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেল বাড়ি বাড়ি ট্যাপ বসানো হয়েছে সরকারি তরফে ৷ কিন্তু কবে তা দিয়ে জল পড়বে তা জানেন না গ্রামবাসীরা ৷ তাই শুকনো প্রতিশ্রুতি আর তাঁরা চাইছেন না ৷ যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা থেকে শাপমুক্তি ঘটুক এটাই তাঁদের কামনা ৷
আরও পড়ুন : Road Block : তীব্র জল সংকট, পানীয় জলের দাবিতে পথ অবরোধ রানিগঞ্জে