মুকুটমনিপুর, 12 মে : জঙ্গলমহল মানেই সারি সারি গাছ আর পাহাড়ের মেলবন্ধন ৷ আর অলস অজগরের মতো জঙ্গলে ঢাকা কালো পিচের রাস্তা এই এলাকাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে ৷ সেই কারণেই পর্যটকরা বারবার ছুটে আসেন জঙ্গমহলে ৷
এই জঙ্গমহলে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের জায়গা মুকুটমুনিপুর ৷ যা জঙ্গলমহলের রানি নামেও পরিচিত ৷ সেখানে নীল জল, সপ্ত-পাহাড়ের বেষ্টনীর ন্যায় গগনচুম্বী পাথুরে টিলা আর তার একপ্রান্তে ডাক দেওয়া মুসাফিরানা । বছরের প্রায় সারাটা সময় জুড়ে দেশের প্রতিটা কোনার ভ্রমণপিপাসু মানুষেদের যেন ডাক দেয় এই জলাধার । কিন্তু অতিমারীর জেরে বাঁকুড়ার রানী মুকুটমনিপুরের পর্যটন শিল্পে প্রভাব পড়েছে ৷ এখানকার পর্যটন নির্ভর মানুষেরা তাই পড়েছেন চরম সমস্যায়৷
তাঁরা আপাতত দিন গুনছেন এক ব্যাধিহীন পৃথিবীর । অথচ ভারতেবর্ষের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ মুকুট বা মুকুটের মতো রহস্যময় টিলা দ্বারা বেষ্টিত এই এলাকার পরিস্থিতি আগে এমন ছিল না । দুই নদী কুমারী এবং কংসাবতী মিলনের দৃষ্টিনন্দন নীলাভ দৃশ্য দেখতে হাজির হতেন পর্যটকরা ৷ সারা বছরই সেখানে কার্যত তিল ধারণের জায়গা থাকত না ৷ সেই মুকুটমনিপুর আজ পর্যটকের অপেক্ষায় দিন গুনছে ।
তাই এই ভ্রমণ ক্ষেত্রকে পাথেয় করে দিন গুজরান করা মানুষ যেন দিনরাত্রি ধরিত্রী মায়ের কাছে আর্তি জানাচ্ছে পৃথিবীকে সুস্থ করে তোলার । আবারও যেন তাঁরা ভ্রমণপিপাসু মানুষগুলোকে নিয়ে খেয়া পারাপার করতে পারে, আবারও তাঁদেরকে মুসাফিরানা ভ্রমণে নিয়ে গিয়ে মনোরঞ্জন করে দুটো পয়সা পকেটে করে নিয়ে এসে পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারেন, আবারও যেন তাঁরা দিনের প্রথম সুর্যোদয় দেখানোর প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন ।
আরও পড়ুন : করোনাকে কিস্তিমাত করতে এবার টেরাকোটার আদলে দাবা
কোভিডের কারণে আসা বন্ধ হয়েছে পর্যটকদের । নেই কোনও ভিড়, নেই কোনও সেই পরিচিত কোলাহল, নেই দোকানদারদের পসার সাজিয়ে বসার ব্যস্ততা । কার্যত পেটে টান পড়েছে এই পর্যটন নির্ভর মানুষগুলোর । গৌতম পাল নামে এক নৌকো চালাক বলেন, "প্রতিদিন যাওয়া আর আসা চলছে দেখা নেই কারও, মাছ ধরে বিক্রি করে যে টুকু টাকা জুটছে সেটাই ভরসা এখন ৷" এক ভ্যান চালক শুভাশিসবাবু বলেন, "যা রোজকারের অবস্থা সকালে টিফিন খাওয়ার টাকা পর্যন্ত জুটছে না ৷"