বাঁকুড়া, 20 অগাস্ট : বাঁকুড়া জেলায় কোরোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই দেড় হাজার ছাড়িয়েছে । সদর শহর বাঁকুড়া-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ৷ সংক্রমণ ঠেকাতে পৌরসভার তরফে বিভিন্ন এলাকাকে কনটেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে ৷ তবে কনটেনমেন্ট এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহের জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি প্রশাসন অথবা পৌরসভার তরফে । পাশাপাশি নেই কোনও পুলিশি নজরদারি ৷ যদিও পৌর প্রশাসকের দাবি, স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কনটেনমেন্ট জ়োনের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ পুলিশি নজরদারির বিষয়টি পুলিশ ও মহকুমা শাসকের দেখার কথা ৷
বাঁকুড়া পৌরসভায় মোট ওয়ার্ড সংখ্যা 23 । সম্প্রতি 2 নম্বর, 3 নম্বর এবং 18 নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজনের শরীরে ধরা পড়েছে সংক্রমণ ৷ 18 নম্বর ওয়ার্ডে এক দিনেই 13 জনের শরীরে সংক্রমণের হদিস মিলেছে । এছাড়াও অন্য দু'টি ওয়ার্ডে আরও তিনজনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে । অর্থাৎ তিনটি ওয়ার্ডে আক্রান্ত মোট 16 জন ৷
সংক্রমণ ঠেকাতে শহরের ফিডার রোড, রবীন্দ্র সরণির কয়েক'টি এলাকাকে কনটেনমেন্ট জ়োন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৷ কিন্তু তড়িঘড়ি কনটেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা হওয়ায় সমস্যায় পড়েন এলাকার বাসিন্দারা ৷ কনটেনমেন্ট এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কথা স্থানীয় প্রশাসনের তরফে ৷ কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বাসিন্দারা ৷ রবীন্দ্র সরণি এলাকার এক বাসিন্দা শিবশঙ্কর চৌধুরি বলেন, "পৌরসভার তরফে কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি ৷ বিশেষ প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে ৷ "এলাকারই দোকানদার অমিত বরাট বলেন, " কোনও সংস্থা বা প্রশাসন থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি ৷" সম্প্রতি কোরোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, "পাড়ার ছেলেরা সামাজিক কর্তব্য মনে করে এগিয়ে এসেছে ৷ প্রশাসনিকভাবে যা করা হয়নি সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছে ৷ " যদিও পৌর প্রশাসক মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের দাবি, "কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী ঠিক করা হয়েছে ৷ কেউ যদি জিনিসপত্র আনার জন্য টাকা-পয়সা দিচ্ছেন, তাহলে তারা এনে দিচ্ছে ৷ যদি খুব গরিব মানুষ কেউ থাকেন তাঁদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব ৷" এ বিষয়ে বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক সুদীপ্ত দাসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহের দায়িত্বভার পৌরসভার ৷ তারা এই কাজ করবেন ।
তবে পৌরসভার তরফে কোনও ব্যবস্থা না করা হলেও এলাকার মানুষ খুব সহযোগিতা করেছেন ৷ জানালেন খোদ কোরোনা থেকে সুস্থ হয়ে এলাকারই এক বাসিন্দা ৷ বলেন, "পাড়ার ছেলেরা এসে বাজার করে দিয়ে গেছেন ৷ সবাই খুব সহযোগিতা করেছেন ৷ কেউ সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে পিছপা হননি ৷ সবাই আমাদের মনের জোর দিয়েছেন ৷ "
অন্যদিকে কনটেনমেন্ট জ়োন ঘোষিত হলেও কনটেনমেন্ট জ়োনের চেনা ছবিটা এখানে ঠিক ধরা পড়ল না ETV ভারতের ক্যামেরায় ৷ পৌরসভার তরফে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে ঠিকই তবে তা নামমাত্র বললেই চলে ৷ বাইরের মানুষ অবাধে এলাকায় প্রবেশ করছেন ৷ এলাকার মানুষ বাইরে যাচ্ছেন ৷ এমনকী আক্রান্তদের পরিজনরাও বাইরে বের হচ্ছেন ৷ শিবশঙ্করবাবু বলেন, " পাড়ায় যিনি কোরোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে চলে গেছে ৷ বাড়ির অন্যদের কোরোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল ৷ তাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে ৷ তাই তাঁরা বাইরে বের হচ্ছেন ৷ কাজ করছেন ৷ " কনটেনমেন্ট জ়োনে নজরদারির জন্য পুলিশ মোতায়েন থেকে মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার কথা ৷ কিন্তু নেই তেমন কোনও পুলিশি নজরদারি, অভিযোগ এলাকাবাসীর ৷ এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, "পুলিশ প্রশাসন ও মহকুমা শাসকের সঙ্গে কথা হয়েছিল ৷ আমাকে বলা হয়েছিল এলাকাগুলিতে বাঁশের ব্যারিকেড করে দিতে ৷ বাকি দায়িত্ব বলেছিলেন ওনাদের ৷ এই উত্তরটা পুলিশ এবং SDO সাহেব দিতে পারবেন ৷ " এ বিষয়ে মহকুমা শাসকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, থানা থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে এলাকাগুলিতে কড়া নজরদারি চলছে ৷ তবে প্রকৃত চিত্রটা কী সে বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন ৷