ভাদুল, 28 এপ্রিল : লকডাউনের মধ্যেই রাতের অন্ধকারে আবগারি দপ্তরের গুদাম থেকে মদ পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল ৷ গতকাল বাঁকুড়ার ভাদুল গ্রাম থেকে 15টি গাড়িতে বিদেশি মদ পাচার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ৷ কিন্তু তার আগেই অভিযুক্তদের পাকড়াও করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেন গ্রামের বাসিন্দারা । সাতটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ ৷ তবে এই মদ কোথায়, কার নির্দেশে পাচার করা হচ্ছিল তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে।
বাঁকুড়ার ভাদুল গ্রামে আবগারি দপ্তরের নিজস্ব গুদাম রয়েছে। সেখান থেকে গাড়িতে বোঝাই করে বিদেশি মদ জেলার অন্যত্র পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে । বিষয়টি বাসিন্দারা অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করছেন৷ কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারছিলেন না ৷ গতকালও 15টি প্রাইভেট গাড়িতে বিদেশি মদ পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে পৌঁছান সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তাঁদের দেখে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা । বৃষ্টির মধ্যেই ঘণ্টা দু’য়েক অপেক্ষা করার পর প্রায় ন'টা নাগাদ দু’টি মদ বোঝাই গাড়ি প্রথমে গ্রাম থেকে বেরিয়ে যায় । কিছুক্ষণ পর সাতটি প্রাইভেট গাড়ি বিদেশি মদ বোঝাই করে বেরিয়ে আসে আবগারি দপ্তরের গুদাম থেকে ৷ স্থানীয়রা গাড়িগুলিকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন ৷ প্রশ্ন করা হয়, অন্ধকারে সরকারি গুদাম থেকে বিদেশি মদ বোঝাই গাড়ি কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ? প্রথমে গাড়ি চালকরা অস্বীকার করেন এবং জানান, এই গাড়িতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য এবং সবজি রয়েছে । এরপর গাড়ির তল্লাশি করতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি গাড়িতে বিদেশি মদের বাক্স বোঝাই করা রয়েছে । আরও 6টি গাড়িতে মদ বোঝাই করা ছিল। তা-ও পাচারের জন্য বোঝাই করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
স্থানীয়রা বাঁকুড়া সদর থানায় খবর দেন । ঘটনাস্থানে পুলিশ আসে এবং পুলিশ প্রথমে বলে, সরকারি দ্রব্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ কেউ বাধা দেবেন না । পরে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখে পুলিশ রাজি হয় গাড়িগুলি থানায় নিয়ে যেতে । কিন্তু কেন এভাবে অন্ধকারে সরকারি গুদাম থেকে এতগুলি গাড়িতে বোঝাই করে বিদেশি মদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ? কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কে বা কারা এই মদ নিয়ে যাচ্ছেন তা জানতে প্রশ্ন করা হয় ৷ এক গাড়ি চালক জানান, সোনামুখীর বাসিন্দা তথা এক ব্যবসায়ী তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে বিদেশি মদ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ৷ এর জন্য তাঁরা জেলা প্রশাসনের তরফে মৌখিক অনুমতিও নিয়েছেন বলে দাবি করা হয় ৷ বিদেশি মদ নিয়ে গিয়ে নিজের এলাকায় হোম ডেলিভারির ব্যবসা করতে চান ওই ব্যবসায়ী । তিনি আরও জানান, এনিয়ে নাকি জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এবং তাঁরাই নাকি মৌখিকভাবে মদ ব্যবসায়ীদের অনুমতি দিয়েছেন । অপর গাড়িতে থাকা গুরুপদ মণ্ডলকে প্রশ্ন করা হয় তাঁর গাড়িতে সবজি লেখা আছে অথচ মদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন? তিনি জানান, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের পি মোড় এলাকার ব্যবসায়ী বাদল মণ্ডল-এর কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গাড়ি বোঝাই মদ ।
ভাদুল এলাকার BJP নেতা তুষার সিংহ বলেন, ‘‘লকডাউনের মধ্যে এভাবে অন্ধকারে বিদেশি মদ কে বা কারা নিয়ে যাচ্ছে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার ।’’
এ বিষয়ে বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘এই ঘটনা শুধু বাঁকুড়া নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঘটছে । সরকারি আধিকারিক এবং শাসক দলের যোগসাজশে এভাবেই বিভিন্ন জেলায় সরকারি গুদাম থেকে বিলিতি মদ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে ।’’ তিনি অভিযোগ করেন, বিদেশি মদের দাম 30 শতাংশ বাড়ানো হয়েছে ৷ তাই সুকৌশলে সরকারি গুদাম থেকে পুরানো মদ বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ যার অতিরিক্ত মুনাফার একটি মোটা টাকা চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় । তবে এই টাকা কে বা কারা নিচ্ছেন তার তদন্ত হওয়া দরকার । পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন পরিস্থিতিতে কীভাবে এতগুলি গাড়ি মদ বোঝাই করে খোদ সরকারি গুদাম থেকে বেরিয়ে গেল ?’’ এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে তিনি অভিযোগ করবেন বলেও জানান ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক শ্যামল সাঁতরা এ বিষয়ে জানান, তাঁর কাছে এই সম্পর্কে কোনও খবর নেই ৷ তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই প্রথম খবরটি পেলেন। তবে এই বিষয়ে প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি ।
তবে জেলা প্রশাসনিক আধিকারিক বা পুলিশকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷